ডগ-হাউসে তা করতেন না?
না। ক্ষণিকের জন্য অপ্রস্তুত দেখাল মিলহিজারকে, তারপর জিজ্ঞেস করল, আমাকে এতো সব প্রশ্ন করছ কেন?
মিস্টার রকফেলারের কোলি কুকুরটা ডগ-হাউস থেকে চুরি গেছে, বলল কিশোর। আমরা সেই কুকুর-চোরকে খুঁজছি। সে-কারণেই আপনাকে প্রশ্ন করা।
কুকুরচুরির খবরটা পেপারে পড়েছি। কুকুরের জন্য তো মুক্তিপণ পর্যন্ত চেয়েছে। কালে কতোকিছু যে দেখব! কিশোরের চোখে তাকাল মিলহিজার। তা আমাকে চোর ভাবছ না কি!
অবশ্যই না, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর। তদন্তের খাতিরে অনেককেই অনেক কথা জিজ্ঞেসা করছি আমরা। প্রসঙ্গ পাল্টাল ও।
আপনি যখন ডগ-হাউসে ছিলেন তখন তো আপনার কাছে ওখানকার চাবি ছিল। সেই চাবি কি আপনি জমা দিয়েছিলেন চাকরি ছাড়ার সময়?
নিশ্চয়ই! লেবউফের সামনে চাবিটা মেঝেতে ছুঁড়ে দিয়ে বেরিয়ে আসি আমি।
মিস জেসিকা বললেন আপনি ডেলিভারি দিতে গিয়েছিলেন, বলল মুসা। অ্যানিমেল টেকনিশিয়ানরা কি সাধারণত এধরনের কাজ করে থাকে?
মৃদু হাসল মিলহিজার। না, তা করে না। তবে জেসিকা ম্যানেজার হওয়ার চেষ্টা করছে। সে-কারণেই আমার সাহায্য করা। ওর সাফল্য মানে আমারও সাফল্য।
আর একটা প্রশ্ন, বলল কিশোর। আপনি কি এইমাত্র দোকানে ফিরেছেন?
নিশ্চয়ই! কেন?
না, এমনি। তদন্তে সহায়তা করার জন্য নিক মিলহিজারকে ধন্যবাদ দিল কিশোর, তারপর বলল, দরকার পড়লে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে তো?
নিশ্চয়ই! হাত নেড়ে দোকানের দিকে পা বাড়াল নিক মিলহিজার।
গাড়িতে উঠে মুসা আর রবিনের দিকে তাকাল কিশোর, জিজ্ঞেস করল, জেসিকা প্রিংগারের অফিসে অস্বাভাবিক কিছু তোমাদের চোখে পড়েছে?
না তো, এঞ্জিন স্টার্ট দিল মুসা।
অস্বাভাবিক কিছু দেখেছি বলে মনে পড়ছে না, বলল রবিন।
জানোয়ার রাখার বড় বড় কয়েকটা প্ল্যাস্টিকের খাঁচা দেখোনি?
ওই দোকান তো জন্তু-জানোয়ার বিক্রিও করে, বলল মুসা।
নিশ্চয়ই সেই সঙ্গে খাঁচাও বিক্রি করে। এক জায়গায় অনেকগুলো দেখেছি ওই জিনিস। কোনও কোনওটা তো এতো বড় যে সেইন্ট বার্নার্ড কুকুরও রাখা যাবে।
মিস জেসিকার অফিসে যেগুলো ছিল সেগুলো ব্যবহৃত। ওগুলোর একটা কোলি কুকুরটা রাখার মতো বড়।
কিন্তু মিস জেসিকা তো বলেছেন তারা শুধু বাচ্চা কুকুর বিক্রি করেন! চট করে তথ্যটা নোটবুকে টুকল রবিন।
মুসা জিজ্ঞেস করল, তা হলে বড় কুকুরের খাঁচা কীসের জন্য? আরও একটা ব্যাপার, ফাইল নিয়ে ওরকম গোপনীয়তাই বা কীসের? ফাইলে কী আছে যে তিনি ওগুলো আমাদের দেখাতে চাননি?
জানতে হবে সেটা, নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। আজ রাতেই জানব। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর আসব, আবার। ততোক্ষণে দোকানটা বন্ধ হয়ে যাবে। দোকানে ঢোকার চেষ্টা করব। পেছন দিকের কয়েকটা জানালা খোলা দেখেছি, গ্রিল নেই। একটা জানালাও যদি খোলা থাকে, তা হলে কাজটা সহজই হবে। হয়তো মিস জেসিকার অফিসের ওই ফাইলগুলোর একটায় কোলি সম্বন্ধে কিছু পাওয়া যেতেও পারে।
আমি বাদ, বলল মুসা। কোমরটা একেবারে গেছে। ব্যথায় নড়তে কষ্ট হচ্ছে। রাতের খাবারের পর ব্যথার ট্যাবলেট খেয়ে সোজা। ঘুম দেব আমি।
রবিন? নথির দিকে তাকাল কিশোর।
চলে আসব, বলল রবিন। তোমার বাসায় রাত কাটাব বললে মা আপত্তি করবে না।
তা হলে এই কথাই রইল, সিটে হেলান দিয়ে বসল কিশোর।
রবিনকে আগে বাড়িতে নামিয়ে দিল মুসা, তারপর কিশোরকে স্যালভিজ ইয়ার্ডে নামিয়ে দিয়ে বাড়ির পথ ধরল।
.
সে-রাতে আটটার সময় পেট সুপারস্টোরের উল্টোদিকে পার্কিং লটে থামল একটা ফোক্সওয়াগেন গাড়ি। এটা মুসারটার মতো অতোটা তোবড়ানো নয়, রঙও আলাদা। নামল কিশোর আর রবিন। রবিন গাড়ি লক করার পর কিশোর বলল, চলো, আগে পেছন দিকের জানালাগুলো খোলা আছে কি না দেখি।
কপাল ভাল ওদের, একটা জানালা অল্প একটু ফাঁক হয়ে আছে। জানালা বন্ধ করা যার দায়িত্ব সে একটু বেখেয়াল।
উঠব কীভাবে? উঁচু জানালাটার দিকে তাকাল রবিন।
আমি বসছি, বলল কিশোর। তুমি আমার পিঠের ওপর উঠে জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ো। পরে আমাকে টেনে তুলবে।
ধরা পড়লে কিন্তু কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
জানি। ঝুঁকি তো কিছু নিতেই হবে। পিঠ টনটন করছে, শীঘ্রি জানালা খোলো।
জানালা সামান্য ফাঁক হয়ে থাকলেও ছিটকিনি ঠিকই আটকানো আছে। পাঁচ মিনিট কসরত করে ওটা খুলতে পারল রবিন। ততোক্ষণে কিশোরের মনে হলো রবিনের ওজন শনৈঃ শনৈঃ বাড়ছে।
রবিন একবার ঢুকে পড়ার পর কিশোরের ঢুকতে তেমন কোনও অসুবিধে হলো না। হাত ধরে খানিকটা তুলল ওকে রবিন, বাকিটা দেয়ালে পা বাধিয়ে কিশোরই পারল।
পেটশপে কোনও সিকিউরিটি সিস্টেম নেই। হয়তো ভাবা হয়েছে। জন্তু-জানোয়ারের দোকানে চোর ঢুকবে না।
টর্চ জ্বেলে দেখল একটা স্টোররুমের ভিতর আছে ওরা। গুদামের দরজাটা ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে, ওটা ঠেলে মূল দোকানের ভিতর ঢুকল দুজন, চলে এলো মালপত্র বিক্রি করার কাউন্টারগুলোর কাছে। পড়ে যাওয়া বস্তাগুলোকে আবার তুলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কাজটা নিক মিলহিজারকেই করতে হয়েছে কি না ভাবল কিশোর। বস্তা ফেলার পিছনে সে-ও থাকতে পারে, কথাটা মন থেকে মুছে ফেলল না। গোয়েন্দাদের কোনও সম্ভাবনাই বাদ দিতে নেই।
দোকানের পিছনে অফিসগুলোর কাছে চলে এলো ওরা।