প্রথম বস্তাটাই ওর মাথার উপর পড়ল। পরের দুটো ওর কাঁধে। ওজনের কারণে বসে পড়তে হলো মুসাকে। আরও কয়েকটা বস্তার আঘাতে কাত হয়ে পড়ে গেল ও মেঝেতে। জলপ্রপাতের পানি যেমন অবিরাম পড়ে, তেমনি করে বস্তার পর বস্তা পড়তে শুরু করল ওর উপর। এক পাশের পুরো দেয়াল ধসে পড়ছে! টন টন ডগ-ফুডের বস্তার নীচে জীবন্ত কবর হয়ে গেল ওর।
৬
অন্তত এক টন ওজনের অনেকগুলো বস্তা পড়ে ঢেকে ফেলেছে মুসাকে। মিহি ধুলো উড়ছে চারপাশে, সামনেটা ঠিক মতো দেখা যায় না। পাঁচ সেকেন্ড হলো, থেমে গেছে বস্তা পড়া। ধুলোর মধ্যে দিয়ে এস্ত পায়ে এগোল রবিন আর কিশোর। রবিন ডাকল, মুসা! মুসা!
জবাব নেই!
মুসা! গলা আরও চড়ে গেল রবিনের। তারপর কিশোরকে পাগলের মতো বস্তা সরাতে দেখে হাত লাগাল ও-ও।
শ্বাসের ফাঁকে কিশোর বলল, তাড়াতাড়ি, রবিন, মুসা দম আটকে মারা যেতে পারে!
একটা একটা করে বস্তা সরাচ্ছে ওরা, ছুঁড়ে ফেলছে পিছনে। দোকানের কেউ এখনও জানে না এখানে কী ঘটেছে। কাউকে আসতে দেখা গেল না। ফর্কলিফটের এঞ্জিনের আওয়াজ দূরে চলে যাচ্ছে।
পনেরো-বিশটা বস্তা সরানোর পর একটা গোঙানি শুনতে পেল ওরা। আরও কয়েকটা বস্তা সরিয়ে ফেলার পর মুসার মাথা আর কাধ। দেখতে পেল।
মুসা, আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞেস করল কিশোর। রবিন আর ও ব্যস্ত হাতে মুসার শরীরের উপর থেকে বস্তা সরাচ্ছে।
মুসা নড়ে উঠল। গা থেকে শেষ দুটো বস্তা সরিয়ে উঠে বসল ও, হাত দিয়ে কোমর ডলতে ডলতে বিড়বিড় করে বলল, খাইছে! খাবার ভালোবাসি আমি, কিন্তু তাই বলে এতো খাবার!
কাঁধ ধরে মুসাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করল রবিন আর কিশোর।
কোমর ডলছে মুসা, মুখ বিকৃত করে বলল, খাইছে! আমার কপালে আজকে হেভি খাবার ছিল!
কিছু ভাঙেটাঙেনি তো? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না, বেঁচেই থাকব মনে হচ্ছে, জবাব দিল মুসা।
ধুলো সরে গেছে। ভাঙা দেয়ালের ওপাশে বেশ খানিকটা দূরে। ফর্কলিফটা দেখতে পেল ওরা। যন্ত্রটার ড্রাইভিং সিটে কেউ নেই!
মুসা ঠিক আছে বুঝে হাতের ইশারা করল কিশোর, ফিরে চলল ওরা জেসিকা স্প্রিংগারের অফিসে। নক না করেই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল কিশোর। ওর ঠিক পিছনেই থাকল মুসা আর রবিন।
মা কাগজে কী যেন লিখছিলেন জেসিকা, দরজা খোলার আওয়াজে মুখ তুলে তাকালেন। ওদের দেখে দ্রু কুঁচকে উঠল তাঁর। এখানে এখনও কী করছ তোমরা?
এই মাত্র আমাদের খুন করতে চেয়েছিল কেউ, বলে উঠল রবিন।
তা-ই না কি? বিদ্রুপের হাসি হাসলেন জেসিকা। গল্প বলতে হলে অন্য কোথাও গিয়ে বলো।
রবিন ঠিকই বলেছে, জোর দিয়ে বলল মুসা। আরেকটু হলেই আমার কোমর ভেঙে দিয়েছিল।
র চকিতে চিন্তার ছাপ খেলে গেল জেসিকার চেহারায়, এবার তিনি বললেন, সত্যিই যদি কোনও কিছু ঘটে থাকে তো সে-ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। দেখতেই পাচ্ছ আমি এখানে ব্যস্ত ছিলাম। উঠে দাঁড়ালেন তিনি। চলো, দেখা যাক কী ঘটেছে।
অফিস ছেড়ে দুর্ঘটনার জায়গায় তিন গোয়েন্দার সঙ্গে এলেন তিনি। ধসে পড়া বস্তার তূপ দেখে বললেন, বাড়িয়ে বলেছ তোমরা। কে তোমাদের খুন করতে চাইবে! বস্তাগুলো বড় বেশি উঁচু করে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল, পড়ে গেছে।
কয়জন ক্লার্ক আছে আপনাদের সেল্স্ ফ্লোরে? জিজ্ঞেস করল কিশোর, নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে।
ছয়জন। ইচ্ছে করলে তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারো। আমি অফিসে যাচ্ছি। পা বাড়িয়েও থেমে দাঁড়ালেন জেসিকা:ম্প্রিংগার। ঘাড় ফিরিয়ে কিশোরের দিকে তাকালেন। তোমরা নিক মিলহিজারকে খুঁজছিলে। ওই যে মিলহিজার। পুরু কাঁচের জানালার ওপাশে একজনকে হাত তুলে দেখালেন তিনি।
তাঁর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল ওরা। পেট প্রভিশন কোম্পানির একটা ভ্যান থেকে নামছে সোনালী চলের এক চিকন-চাকন যুবক।
আমরা তা হলে আসি, বিদায় নিল কিশোর জেসিকা স্প্রিংগারের কাছ থেকে, বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, চলো, ভদ্রলোকের সঙ্গে বাইরেই কথা বলি।
অটোমেটিক দরজার ইলেকট্রনিক ফিল্ডের ভিতর যেতেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলে গেল দোকানের দরজাটা। বেরিয়ে এলো ওরা। মিস্টার মিলহিজার! ডাকল কিশোর।
ভ্যান মাত্র লক করেছে নিক মিলহিজার, ওদের দিকে ফিরে তাকাল। তিন কিশোরকে দেখে তার চেহারায় কৌতূহলের ছাপ ফুটে উঠল।
কী ব্যাপার?
তার সামনে গিয়ে থামল তিন গোয়েন্দা, সময় নষ্ট না করে কিশোর বলল, আমরা শুনেছি আপনি ডগ-হাউসে চাকরি করতেন। নিজেদের পরিচয় দিল ও।
ঠিকই শুনেছ, গম্ভীর হয়ে গেল নিক মিলহিজারের চেহারা।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, চাকরিটা ছাড়লেন কেন?
লেবউফ যেসব কাজ আমাকে দিয়ে করাতে চেয়েছিল তা আমার পছন্দ হয়নি। আমি রেজিস্টার্ড অ্যানিমেল টেকনিশিয়ান। তার মানে বোঝো? ভেটেরিনারিয়ানের সঙ্গে কাজ করার যোগ্যতা আছে আমার। বলতে পারো পশুর নার্স। আর লেবউফ আমাকে বলেছিল কুকুরের গু পরিষ্কার করতে!
তারপর থেকে এখানে কাজ করছেন? জানতে চাইল মুসা।
হয়তো মনে হতে পারে কাজটা তেমন কিছু নয়, খানিকটা কৈফিয়তের সুরেই বলল মিলহিজার। কিন্তু এখানে আমাকে অন্তত অপমান করা হয় না। তা ছাড়া, এখানে দায়িত্ব দেয়া হয় আমাকে।
ঠিক বুঝলাম না, বলল কিশোর। দায়িত্ব বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
পশুরা কী খাবে আর কখন খাবে সেটা আমিই ঠিক করি।