জানা যায় তারপর আপনি নানা ধরনের হুমকি দেন তাঁকে, নরম গলায় বলল কিশোর।
তা দিই, স্বীকার করে নিলেন জেসিকা স্প্রিংগার। মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল আমার। তোমরা কী শুনেছ আমি জানি না, তবে কোনও কুকুর চুরি করার কথা কখনোই বলিনি আমি। সামনে ঝুঁকে কিশোরের চোখে তাকালেন মিস জেসিকা। লেবউফ আমাকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সিদ্ধান্ত পাল্টে আমার বদলে নিজের বউকে ম্যানেজার করে সে।
আপনি তো এখানে ম্যানেজার, বলল মুসা। এই কাজটা ডগ হাউসে কাজ করার চেয়ে ভাল নয়?
ভুল শুনেছ তোমরা, চেয়ারে হেলান দিলেন মিস জেসিকা। আমি এখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার।
ভদ্রমহিলার বলার ভঙ্গিতে গর্বের সামান্যতম চিহ্নও খুঁজে পেল না কিশোর। মহিলা নিশ্চয়ই মনে করেন না এই চাকরিটা ডগ-হাউসের চাকরির চেয়ে ভাল।
আবার বলতে শুরু করলেন জেসিকা স্প্রিংগার। এখানে আমাকে শুধু ম্যানেজারিয়াল কাজই নয়, অন্য অনেক কাজই করতে হয়। অফিস ছুটির পর আমি ট্রাক থেকে মালও নামাই। অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদটা আসলে গালভরা একটা নাম। কেরানির কাজও করতে হয়। আমাকে। মোট কথা, যখন যে-কাজে দরকার পড়ে, সে-কাজই করতে হয়।
আপনারা তো দেখছি জন্তু-জানোয়ারের খাবার বিক্রির পাশাপাশি ওগুলো বিক্রিও করেন, বলল মুসা। পরক্ষণেই যোগ করল, ডগ-হাউস থেকে যে কোলি কুকুরটা চুরি গেছে ওটা খুব দামি কুকুর।
আমরা শুধু বাচ্চা কুকুর বিক্রি করি, প্রতিবাদের সুরে বললেন জেসিকা। আর ওগুলো কেনা হয় নামকরা ব্রিডারদের কাছ থেকে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ফাইল সংরক্ষণ করি আমরা।
মিস জেসিকা স্প্রিংগারের পিছনের ফাইল কেবিনেটে অনেকগুলো লেবেল আঁটা রয়েছে। পিওরব্রিডস লেখা একটা লেবেল কিশোরের নজর কাড়ল। মিস জেসিকার টেবিলেও কয়েকটা ফাইল রয়েছে। তার একটাতে লেখা: ক্যানাইন অ্যাডপশন্স, অর্থাৎ ওটাতে পাওয়া যাবে কোন্ কুকুর কে কিনেছেন।
চোখ তুলে কিশোর লক্ষ করল ওর দিকেই তাকিয়ে আছেন জেসিকা ম্প্রিংগার। বললেন, তোমরা যদি মনে করো এখানে কোনও চোরাই কুকুর আছে, তা হলে খুঁজে দেখতে পারো। টেবিলের ফাইলগুলোর উপর একটা বিড়ালের ম্যাগাজিন রাখলেন তিনি। এবার তার গলা কড়া শোনাল। আমাদের ফাইল বাইরের কারও দেখার অনুমতি নেই।
চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল কিশোর।
যাদের কাছে আমরা জন্তুজানোয়ার বিক্রি করি তাদের ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়, বললেন জেসিকা। তবে তোমরা ঘুরে দেখতে চাইলে নিক মিলহিজার ফিরলে ঘুরে দেখাতে পারবে।
নিক মিলহিজার এখানে চাকরি করেন? দ্রু কুঁচকে উঠল মুসার।
ডগ-হাউসে যিনি চাকরি করতেন তিনিই? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
করলে তোমাদের কোনও অসুবিধে আছে? জেসিকা প্রিংগারের চেহারায় বিরক্তির ছাপ পড়ল।
না, তা নেই, নিজের সেরা বিনয়ী হাসিটা উপহার দিল কিশোর। কিন্তু দুজন মানুষ যদি এক জায়গায় কাজ করে, যারা ডগ-হাউস থেকে রাগারাগি করে বেরিয়ে এসে অন্যখানে কাজ নিয়েছে, তা হলে প্রশ্ন। উঠতেই পারে।
তোমার কথাটা আমি ধরলাম না, বললেন জেসিকা। তবে এবার, তোমরা আসতে পারো। অনেক কাজ পড়ে আছে আমার।
আমরা নিক মিলহিজারের সঙ্গে কথা বলতে চাই, উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল কিশোর। সেটা সম্ভব?
এখন নয়। ও একটা ডেলিভারি দিতে গেছে। ফাইলে চোখ নামালেন জেসিকা।
কখন ফিরবেন উনি? রবিনের প্রশ্ন।
জানি না। অফিসের দরজা দেখালেন জেসিকা। এবার তোমরা এসো। আমাকে কাজ করতে হবে।
এতো সাহায্য আর আতিথেয়তার জন্যে ধন্যবাদ, শুকনো গলায় বলল মুসা।
জেসিকা স্প্রিংগারের অফিস থেকে বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা।
আমরা কুকুরের খাবার কিনলে হয়তো উনি খুশি হতেন, মন্তব্য করল মুসা। হাত তুলে স্টোররুমের হাজার হাজার পাউন্ড পেট-ফুড দেখাল ও। খাবারগুলো আছে বিশ পাউন্ডের ব্যাগে। একটার উপর আরেকটা রেখে দেয়ালের মতো উঁচু করা হয়েছে ব্যাগগুলো। পুরো দশফুট উঁচু। বস্তার সারি সারি দেয়ালের মাঝখানে সরু করিডর।
ওয়্যারহাউসে কাজকর্মের আওয়াজ হচ্ছে, গুদামের কাছেও ভেসে আসছে সেই শব্দ। ধপ করে একটা আওয়াজ শুনতে পেল ওরা, যেন খাবারের কোনও ব্যাগ উপর থেকে পড়েছে। ওরা যেখানে আছে তার সামনে বাঁক ঘুরে চওড়া একটা করিডরে হাজির হলো একটা হলদে ফর্কলিফট। ইলেক্ট্রিক মটরের গুঞ্জন ক্রমেই জোরাল হচ্ছে। ওদের পাশের আরেকটা করিডরে চলে গেল ওটা।
ওরা যে করিডরে আছে সেটা এতো সরু যে দুজন একসঙ্গে হাঁটা যায় না। দুপাশে খাবারের বস্তার দেয়াল। সামনে হাঁটছে মুসা। কী যেন বলতে যাচ্ছিল ও, এমন সময় থপ করে একটা জোর শব্দ হলো। হঠাৎ ওর একদিকের ডগ-ফুডের বস্তার দেয়াল নড়ে উঠল। মুসার সামনে ধপাস করে পড়ল একটা বস্তা।
সাবধান! চিৎকার করে বলল মুসা। এদিকে আমরা আছি!
এখনও কাত হচ্ছে বস্তার দেয়াল। ওদিক থেকে ঠেলা দিচ্ছে সেই ফর্কলিফট।
উপর দিকে তাকাল মুসা। দেখল যে-কোনও মুহূর্তে দেয়ালের বড় একটা অংশ ধসে পড়বে।
মুসা! পিছিয়ে এসো! চেঁচাল কিশোর।
গলা কেঁপে গেল রবিনের। মুসা! জলদি!
কিশোর আর রবিন দ্রুত পিছাতে শুরু করেছে।
একবার উপরে তাকিয়েই মুসা বুঝে ফেলল ওর পক্ষে আর সরে। যাওয়া সম্ভব নয়। অজান্তেই মাথা ঢাকল ও দুহাত দিয়ে। ধপাধপ পড়তে শুরু করেছে বিশ পাউন্ড ওজনের বস্তা!