কী যেন ভাবল আয়োলা, তারপর আস্তে করে মাথা নাড়ল। না, মনে হয় না। হারল্ডকে আমি চিনি। কয়েকদিন আমাকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে চেয়েছে সে, যেতে পারিনি। রাতের ডিউটি করতে হলে সামাজিকতার আর উপায় থাকে না। জানো, লোকটা কী বলেছিল? বলেছিল ডগ-হাউস বন্ধ হয়ে যাবেই, তারপর তার সঙ্গে ঘুরতে যেতে অনেক সময় হাতে পাবো আমি।
ডগ-হাউস যখন প্রথম চালু হলো তখন যে-মহিলা ওখানে কাজ করতেন, বলল কিশোর, জেসিকা স্প্রিংগার। তিনি তো চাকরি ছেড়েছেন আরও ভাল একটা কাজ পেয়ে, ঠিক?
চাকরিটা সে ভাল চাকরি পেয়েছে বলেই শুধু ছাড়েনি, বলল আয়োলা। আসলে মিস্টার লেবউফ যখন তার বদলে নিজের স্ত্রীকে ম্যানেজার করলেন, তখন সে আর চাকরি করতে চায়নি। জেসিকা স্প্রিংগার এতো বিস্মিত হয়েছিল কেন সেটা আমার মাথায় ঢোকে না।
এমন ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটে। এ তথ্যগুলো দ্রুতহাতে নোটবুকে টুকে নিচ্ছে রবিন। মুসা জিজ্ঞেস করল, মিস্টার লেবউফ বা তাঁর স্ত্রীকে কোনওরকম হুমকি দিয়েছিলেন জেসিকা স্প্রিংগার?
ভীষণ খেপে গিয়েছিল। যা-তা বলছিল। পাগলের প্রলাপ সব। নানারকম হুমকি দিয়েছিল। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছিল তার যেসব ডিগ্রি আছে তাতে সে-ই আসলে ম্যানেজার পদের জন্যে উপযুক্ত। তারপরও নিজের স্ত্রীকে ম্যানেজার করে পার্শিয়ালটি করেছেন মিস্টার লেবউফ। হুমকি দিয়ে বলেছিল, বোমা মেরে পুরো বিল্ডিং সে ধসিয়ে দেবে। খুব খেপেছিল মহিলা।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, ডগ-হাউসের চাকরি ছাড়ার পর, জেসিকা প্রিংগারের সঙ্গে কথা হয়েছে আপনার?
দুএকবার হয়েছে, বলল আয়োলা। তার নতুন অফিসে ফোন করেছিলাম কেমন আছে জানতে।
এখন তো তিনি পোষা প্রাণীদের খাবারের দোকানে কাজ করেন? জিজ্ঞেস করল মুসা।
হ্যাঁ। ওখানে ম্যানেজারের কাজ পেয়েছে। রকি বিচ মলের উল্টোদিকেই দোকানটা। অনেক বড় দোকান। ভাল ব্যবসা করে।
আরেকজনের কী হলো? কোকে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর। যাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল? সেই অ্যানিমেল টেকনিশিয়ান?
বা চট করে ঘড়ির দিকে একবার তাকাল আয়োলা। নিক মিলহিজার? কাঁধ ঝাঁকাল তরুণী, উঠে দাঁড়াল। তার ব্যাপারে কিছু জানি না। এবার আমাকে যেতে হবে। ও, একটা কথা, যদি তোমরা জেসিকা প্রিংগারের সঙ্গে দেখা করো, তা হলে আমার তরফ থেকে তাকে হ্যালো বোলো।
মুসা জিজ্ঞেস করল আয়োলা মর্টনকে গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দেবে। কি না। জবাবে ধন্যবাদ দিল আয়োলা, তারপর জানাল তার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে।
বিদায় নেওয়ার আগে কিশোর বলল, আমাদের মনে যদি আরও কোনও প্রশ্ন আসে তা হলে আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারব তো?
নিশ্চয়ই! মৃদু হাসল আয়োলা মর্টন, হাত নেড়ে বিদায় নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াল। আধ মিনিটের মাথায় একটা বাস এলো। ওটায় উঠে পড়ল। রওনা হয়ে গেল বাস।
এবার কী করা যায়? নোটবুক পকেটে রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করল রবিন।
আগে কোক শেষ করি, তারপর ভাবা যাবে, মুসা জবাব দিল।
কিশোর বলল, তাড়াতাড়ি শেষ করো। আমরা ওই পেট-শপে যাব।
বিশ মিনিট পর রকি বিচ মলের কাছে পৌঁছোল তিন গোয়েন্দা। একটা পার্কিং লটের পিছনের দিকে বিরাট পেট-শপটা। সামনে বিশাল ব্যানারে লেখা: এখানে জন্তু-জানোয়ারের সবধরনের খাবার পাওয়া যায়।
দোকানের সামনে গাড়ি রেখে নামল ওরা, ভিতরে ঢুকে একজন ক্লার্ককে জিজ্ঞেস করতেই জেসিকা স্প্রিংগারকে দেখিয়ে দিল সে।
মহিলার বয়স তিরিশের কাছাকাছি হবে। সোনালী চুল, বেণি করেছেন। একটা ক্যাশ রেজিস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ক্লার্ককে বলছেন কী যেন। অপেক্ষা করল ওরা, জেসিকা স্প্রিংগারের কথা শেষ হতেই কিশোর সামনে বেড়ে নিজেদের পরিচয় দিল। এবার বলল, ডগ হাউসের ব্যাপারে আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিল।
জেসিকা স্প্রিংগারের হাসি মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেল। কঠোর আর শীতল হয়ে গেল নীল চোখ জোড়ার দৃষ্টি। ক্লার্কের দিকে ফিরে বললেন অফিসে পাওয়া যাবে তাঁকে, তারপর তিন গোয়েন্দাকে হাতের ইশারায় সঙ্গে আসতে বলে দোকানের পিছনের দিকে পা বাড়ালেন।
উঁচু করে রাখা দুসারি খাবারের বাক্সের ভিতর দিয়ে সরু করিডর ধরে হাঁটছে ওরা। কিশোর লক্ষ করল, জন্তু বুঝে সাজানো হয়েছে পুরো দোকানটা। একদিকে কুকুরের খাবার, আরেকদিকে বিড়ালের। আরও আছে খরগোশ আর নানা জাতের পাখি এবং চারপেয়েদের খাবারের সেকশন। মাছের জন্যও বিরাট একটা সেকশন রাখা হয়েছে। তার পাশেই অজগরের জন্য খাবার। দোকানের ভিতর কুকুরের ঘেউঘেউ আর টিয়া পাখির টিটি আওয়াজে কানে তালা লেগে যাওয়ার দশা।
পত্রিকায় পড়েছি কুকুর চুরি আর মুক্তিপণ চাওয়ার ব্যাপারটা, হাঁটতে হাঁটতে বললেন জেসিকা স্প্রিংগার। একটা শপিং কার্টকে পাশ কাটালেন। দুপাশ থেকে ফর্কলিফটে করে খাবারের বাক্স আর বস্তা ওঠানো-নামানো চলছে। কেনাবেচা যেখানে হয় তার পিছনের অংশে অন্য কয়েকটা অফিসের পাশে জেসিকা প্রিংগারের অফিস। ভিতরে ঢুকবার পর হাতের ইশারা করলেন মহিলা। বসো।
বসল তিন গোয়েন্দা। সরাসরি কাজের কথায় এলো কিশোর। শুনলাম মিস্টার লেবউফ আর আপনার সম্পর্ক ভাল নয়। চাকরি ছাড়ার সময় নাকি ঝগড়াঝাটি হয়েছিল।
বলার মতো তেমন কিছু নয়, সহজ গলায় বললেন মিস জেসিকা। যখন সে চেইন ডগ মোটেল খুলল তখন তার আচরণ দেখে আমার মনে হয়েছিল ডিসট্রিক্ট ম্যানেজারের পদটা সে আমাকেই দেবে। পরে সে মত বদলায়, নিজের বউকে ম্যানেজার করে।