কয়েকজন পথচারী থেমে দাঁড়িয়েছে। উদ্বিগ্ন চেহারায় ঘিরে ফেলল ওদের। সবাই জানতে চাইছে কিশোর আহত হয়েছে কি না, তাকে হাসপাতালে নিতে হবে কি না। তেমন কিছু হয়নি বলে তাদের ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় করল কিশোর। ওর পাশে চলে এসেছে রবিন আর মুসা।
রবিন বলল, ইচ্ছে করে কাজটা করেছে লোকটা।
একেবারে শেষ মুহূর্তে টের পেয়েছি কী করতে যাচ্ছে, ব্যথায় বিকৃত মুখে জানাল কিশোর, দুহাতে গোড়ালি মালিশ করছে। লাইসেন্স নাম্বারটা খেয়াল করেছ কেউ? বুদ্ধির খেলা।
না, হতাশ দেখাল মুসাকে। তবে যাবার সময় আমার গাড়িতে ঘষা খেয়েছে তার ট্রাকের পাশ। লাল রং লেগে গেছে।
ঠিক এই রঙের একটা ট্রাক দেখেছি আমি বন্দরের কাছে, বলল রবিন। মনে নেই? ওয়্যারহাউসে যাবার সময় পাশ কাটাল যেটা।
মনে পড়েছে, বলল মুসা। তখন লোকটা আস্তে আস্তে যাচ্ছিল।
হয়তো আমাদের নজরে রাখছিল, সেটাই আস্তে যাবার কারণ, বলল কিশোর। বোধহয় আমাদের গাড়ি অনুসরণ করে এখানে এসে হাজির হয়েছিল। টাউন স্কয়ারে চোখ বুলাল কিশোর। উদ্বিগ্ন পথচারীরা খারাপ কিছু ঘটেনি বুঝে যার যার মতো সরে পড়েছে। কিশোর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল, মুসার কাঁধে ভর দিয়ে বলল, লোকটা অনেক আগেই ভেগেছে। চলো, কর অফিসে যাওয়া যাক।
রাস্তা পার হয়ে কর অফিসে ঢুকল ওরা। কিশোর চেনে তেতলার কোথায় বসেন ভদ্রলোক, সেখানে চলে এলো। তার প্রাইভেট সেক্রেটারি ওদের দেখে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, মিস্টার বার্লিসন মিটিঙে ব্যস্ত। ধারণা করেছিলেন তোমরা আসতে পারো। এটা আমার কাছে রেখে গেছেন তোমরা এলে দেবার জন্যে।
কাগজে লেখা: দুঃখিত, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আগামী কয়েক ঘণ্টা কারও সঙ্গে দেখা করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না। অফিসে নতুন কম্পিউটার বসানো হচ্ছে, আমি সেটার দায়িত্বে আছি। জিনিসটা এখনও ঠিক মতো কাজ করছে না। তবে আজ বিকেলের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে। তখন ওয়্যারহাউসের মালিক কে সেটা জানাতে পারব। আমি ভুলিনি। পরে যোগাযোগ কোরো।
অফিস থেকে বেরিয়ে এসে কিশোর বলল, আয়োলাকে আমরা বলেছিলাম আজকে ডগ-হাউসে, তদন্ত করতে যেতে পারি। চলো, গিয়ে দেখা যাক সে ওখানে আছে কি না।
তার আগে লাঞ্চ, গাড়িতে উঠে বলল মুসা।
বার্গার হাউসের সামনে থামল ওরা, কিশোর-রবিন একটা করে বার্গার আর কোক নিল। মুসা তিনটে বার্গার সাবড়ে দিল, সেই সঙ্গে দুই ক্যান কোক
খাওয়া শেষে পে-ফোন থেকে ডগ-হাউসের নাম্বারে ফোন করল কিশোর। ফোন তুললেন মিস্টার লেবউফের স্ত্রী। কিশোরের জিজ্ঞাসার জবাবে জানালেন, আজকে দুপুরটা ছুটি নিয়েছে আয়োলা মর্টন, তারপর বললেন, ওকে আমাদের রাতের শিফটের জন্যে দরকার হবে।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, আপনাদের ওখানে আর কোনও সমস্যা হয়েছে?
না, সব ঠিক আছে, জানালেন মহিলা। আমার মনে হয় চুরিটা করে দূরে কোথাও চলে গেছে চোর। মুক্তিপণ চেয়ে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছে পরে। একটু থামলেন তিনি, তারপর বললেন, তুমি চাইলে আয়োলার অ্যাপার্টমেন্টের ফোন নাম্বার দিতে পারি। বেশিরভাগ সময়েই ও বাড়ি থাকে না, তবে আনসারিং মেশিন আছে ওর।
অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ঠিকানা আর ফোন নাম্বারটা মুখস্থ করে নিল। কিশোর। মহিলাকে ধন্যবাদ দিয়ে লাইন কেটে আবার ফোন করল আয়োলার নাম্বারে।
ওপ্রান্তে রিসিভার তোলার আওয়াজ পেল, তারপর পরিচিত কণ্ঠ শুনে বলল, মিস আয়োলা? আমি কিশোর পাশা।
হাই! বলে উঠল আয়োলা। তদন্তের কাজ এগোল? আমার ফোন নাম্বার পেলে কোথায়?
মিসেস লেবউফের কাছ থেকে, বলল কিশোর। তদন্তের ব্যাপারেই আপনার সঙ্গে কিছু আলাপ ছিল। আমরা কি আপনার বাসায় আসতে পারি? ফ্রী আছেন আপনি?
আমার অ্যাপার্টমেন্ট একেবারেই অগোছাল, ক্ষমাপ্রার্থনার সুরে। বলল আয়োলা, এসো, অন্য কোথাও দেখা করি।
আমরা বার্গার হাউসে আছি, ঠিকানা দিয়ে বলল কিশোর। এখানে দেখা করবেন?
কোনও অসুবিধে নেই। পনেরো মিনিটের মধ্যে চলে আসব আমি। ফোন রেখে দিল আয়োলা মর্টন।
ঠিক পনেরো মিনিটের মাথাতেই হাজির হলো তরুণী। বাস থেকে নেমে এগিয়ে এলো বার্গার হাউসের দিকে। সামনের আঙিনায় ওর জন্য অপেক্ষা করছিল কিশোর-মুসা-রবিন, ওদের দেখে হাসল আয়োলা, হাত মিলিয়ে বলল, কী খবর? হঠাৎ এতো জরুরি তলব? তদন্তের কাজ এগিয়েছে নিশ্চয়ই? ছেড়ে যাওয়া বাসটা দেখাল তরুণী, তারপর ব্যাখ্যা করল, আমার গাড়ি মেরামত করতে দিয়েছি।…এবার বলো কী জন্য ডেকেছ।
বলছি, মুসাকে ইশারা করল কিশোর।
বার্গার হাউস থেকে চারটে কোকের ক্যান কিনে নিয়ে এলো মুসা, তারপর রাস্তা পেরিয়ে পার্কের বেঞ্চে বসল ওরা চারজন। মাথার উপর ছায়া দিচ্ছে ওক গাছের ঘন সবুজ পাতা। ঝিরঝিরে বাতাস বিলি কাটছে ওদের চুলে।
যেজন্যে আপনাকে ডাকা, শুরু করল কিশোর, মিস্টার লেবউফ মনে করেন মিস কারিনা মুর কুকুরচুরির সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে জড়িত। আমরা যেটা জানতে চাইছি সেটা হলো, আপনার উপস্থিতিতে কারিনা মুর কি হুমকিমূলক কিছু করেছেন?
ফোন করা হয়েছে কয়েকবার, আগেই বলেছি, বলল আয়োলা, দুঢোক কোক খেল। কিন্তু আমি প্রমাণ করতে পারব না যে ওসব ফোন কারিনা মুরই করেছে।
আর তাঁর ছোট ভাই? হারল্ড মুর? সে কি ফোন করে থাকতে পারে? বা কুকুর চুরির সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকা সম্ভব?