তা হলে আমার গাড়িতে হুক খুঁজছিল যে-লোকটা সে তো কারিনা মুরের ভাই হারল্ড মুরও হতে পারে, বলল মুসা। যদি কাজে না গিয়ে থাকে, তা হলে নিশ্চয়ই দেখেছে তার বোনের বাড়ির সামনে গাড়ি রেখেছি আমরা। এবার ও বন্ধুদের জানাল গ্যারেজে খুঁজতে গিয়ে কোনও ফায়দা হয়নি। জানালায় রং এতো পুরু যে, ভেতরের কিছু দেখা যায় না। তবে আমি শিওর, ওই গ্যারেজের ভেতর কোনও কুকুর নেই।
ওয়েইট্রেস ওদের জন্য খাবার নিয়ে এলো। কিশোর তাকে জিজ্ঞেস করল, এখানে অনেকদিন ধরে কাজ করেন, মিস রাফেলা?
অনেক বেশিদিন ধরে, মিষ্টি হেসে জবাব দিল ওয়েইট্রেস। আমার ইচ্ছে ছিল দুবছর আগেই আমি দুনিয়া কাঁপানো এক সুপারমডেল হয়ে যাব। কিন্তু এখনও হতে পারিনি। কাজেকর্মে একটু পিছিয়ে পড়েছি বলতে পারো।
বুঝতে পারছি আপনার কেমন লাগে, বলল কিশোর। মুসাকে দেখাল। এই যে, নিল আর্মস্ট্রঙের স্যাঙাত লাল লেগউইক। পরের রকেটেই মহাকাশে যাওয়ার জন্যে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ও। কিন্তু যেতে আর পারছে না কিছুতেই।
আবার হাসল রাফেলা জুলিয়ান। আমাদের এখানে মহাকাশচারীরা প্রায় আসে না বললেই চলে।
রাফেলা জুলিয়ানের সঙ্গে সহজ, সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বুঝে কিশোর চট করে প্রশ্ন করল, নভোচারী তো সহজে আসে না, কিন্তু হলুদ দরজাওয়ালা ধূসর কোনও পুরোনো গাড়ি চালিয়ে কেউ আসে?
গাড়িটা দেখেছি, বলল রাফেলা। প্রায়ই এদিক দিয়ে যাওয়া আসা করে। প্রাচীন একটা জঞ্জাল।
আর ওটার ড্রাইভার? গাড়িটা কে চালায় দেখেছেন?
দেখেছি। এক যুবক। তবে চেহারা খেয়াল করে রাখিনি। এখনও যদি এখানে এসে ঢোকে তো চিনতে পারব না।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, শেষ কবে গাড়িটা দেখেছেন মনে করতে পারেন? না। সামান্য সময় চিন্তা করল ওয়েইট্রেস, তারপর বলল, গতকাল। গতকাল দেখেছি এদিক দিয়ে যেতে।
প্রসঙ্গ পাল্টাল কিশোর। রাস্তার মাঝখানে একটা পরিত্যক্ত ওয়্যারহাউস আছে, ওখানে কখনও কাউকে ঢুকতে বের হতে দেখেছেন? বা কোনও গাড়ির যাওয়া আসা চোখে পড়েছে?
না। আমি মাঝেমধ্যে ওটার কাছে গাড়ি রাখি, কিন্তু কাউকে কখনও দেখিনি। ভ্রূ নাচাল রাফেলা জুলিয়ান কিশোরের দিকে তাকিয়ে। কী। ব্যাপার বলো তো? তোমরা কি গোয়েন্দা না কি?
নিজেদের পরিচয় দিল কিশোর, তারপর আবার জিজ্ঞেস করল, ওয়্যারহাউসের দরজা সবসময় খোলা থাকে?
মাথা ঝাঁকাল রাফেলা। তা-ই তো দেখেছি। একটু থেমে জিজ্ঞেস করল, ওই গাড়ির ড্রাইভারের ব্যাপারে জানতে চাইছ কেন, টাকা পাও তোমরা তার কাছে?
না, খুঁজছি সে একটা কুকুর চুরি করেছে বলে, জানাল মুসা।
কাউন্টারের কাছে রিংটিং করে একটা বেল বেজে উঠল। ডাকছে,, হাতের ইশারা করে কিচেনের দিকে চলে গেল রাফেলা জুলিয়ান।
খেতে শুরু করল মুসা। মাঝে মাঝে কোকে চুমুক দিচ্ছে। রবিন। আর কিশোরও ব্যস্ত হয়ে পড়ল। খাওয়া শেষে মিষ্টি হিসাবে আপেলের পাই নিল ওরা। মুসা সেই সঙ্গে পিচও খেল। বিল আসার পর তিনজন ভাগ করে মিটিয়ে দিল টাকাটা।
কাউন্টারের পাশের পে-ফোন থেকে রকি বিচের সরকারী কর। বিভাগে নির্দিষ্ট নাম্বারে ফোন করল কিশোর। কর অফিসে মিস্টার ভিক্টর সাইমনের পরিচিত এক ভদ্রলোক কাজ করেন। তিনি ওদেরও পরিচিত। রিচার্ড বার্লিসন নাম তাঁর। পাওয়া গেল তাঁকে। কিশোরের কথা শুনে বললেন, ঠিক আছে ওয়্যারহাউসটার মালিক কে সেটা খুঁজে বের করে রাখব। আমার মোবাইল ফোন নষ্ট। কাজটা অফিসের কোনও ব্যাপার নয়, কাজেই অফিসের ফোনটা ব্যবহার করতে চাই না। দুঘণ্টা পর তোমরা অফিসে এলে আশা করি জানাতে পারব যা জানতে চাও।
ওদের হেডকোয়ার্টারের ফোন আর মোবাইল ফোন-দুটোর নাম্বারই তাকে দিল কিশোর, ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দিল। বন্ধুদের কাছে ফিরে এসে বলল, ড্রাই-ডক খুবই কাছে, চলো হেঁটেই যাওয়া যাক।
হাত নেড়ে জুলিয়ানের কাছ থেকে বিদায় নিল ওরা, তারপর বেরিয়ে এলো রাস্তায়।
ড্রাই-ডকে যে ক্রুজ শিপটা মেরামত হচ্ছে ওটার নাম স্টার অভ বারমেট। তিন তলা সমান উঁচু হবে অন্তত। বিশাল ডক থেকে র্যাম্প আর গ্যাঙওয়ে দুপাশ দিয়ে উঠে গেছে ওটার উপর। সূর্য বাঁচিয়ে ক্রেনের মাথা আর বুমগুলোর শীর্ষ দেখার জন্য তিন গোয়েন্দাকে চোখের উপর হাত রাখতে হলো। জাহাজের উপর ঝুঁকে আছে ওগুলো, দেখলে মনে হয় সরু রাস্তার দুধারে দাঁড়ানো বড় বড় গাছ রাস্তাটাকে উপর থেকে ঢেকে রেখেছে।
ওই যে ফোরম্যানের ঘর, জাহাজের বোর সামনে ভ্রাম্যমাণ একটা ধাতৰ কুটির দেখাল কিশোর। শিপইয়ার্ডের চওড়া দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকল ওরা। চারপাশে কর্মীদের ব্যস্ততা, মেশিনের গুঞ্জন।
দরজা দিয়ে ঢুকতেই শক্ত হ্যাট পরা একজন লোককে দেখতে পেল ওরা। তাঁর হ্যাঁটে ফোরম্যান শব্দটা লেখা রয়েছে। ভদ্রলোকের সামনে থেমে নিজেদের পরিচয় দিল কিশোর, তারপর কার খোঁজে এসেছে জানাল।
হ্যারল্ড মুর? নামটা আউড়ালেন ফোরম্যান। দাঁড়াও, দেখে বলতে হবে। পকেট থেকে একটা কালো রঙের নোটবুক বের হলো তাঁর। কাগজ উল্টাতে উল্টাতে ফোরম্যান আপনমনে বললেন, আজকে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। আজকের উপস্থিতির তালিকা পেয়ে চোখ বুলাতে শুরু করলেন, তারপর দেখা শেষে মুখ তুললেন। নোপ। আজকে ওর আসার দিন নয়।