লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি না কে জানে।
।গ্যারেজের পাশে একটা দরজা দেখতে পেল ও। নব মুচড়ে ওটা খোলার চেষ্টা করে দেখল। কাজ হলো না। তালা মারা। সামান্য আওয়াজ হয়েছে। কোলি, জার্মান স্পিঞ্জ আর রাফিয়ান যদি ভিতরে থাকত, তা হলে নিশ্চয়ই এতোক্ষণে চিৎকার জুড়ে দিত। নব ধরে আবারও শব্দ করল ও। ডাকল না কোনও কুকুর। নিশ্চিত হওয়ার জন্য দরজায় কান ঠেকাল মুসা।
এবার শুনতে পেল। তবে গ্যারেজের ভিতর থেকে নয়, আওয়াজটা আসছে রাস্তার দিক থেকে। আওয়াজটা চিনতে পারল ও। কোনও গাড়ির দরজা খোলার শব্দ। কিন্তু গাড়িটা আর কোনও গাড়ি নয়, ওর। ফোক্সওয়াগেন! কেউ ওর গাড়ির দরজা খুলেছে!
কিশোর আর রবিন কথা সেরে গাড়ির কাছে চলে গেছে তা হলে, ভাবল মুসা। দেরি না করে গাড়ির দিকে পা বাড়াল ও।
ফোক্সওয়াগেনের ড্রাইভারের পাশে প্যাসেঞ্জারের দরজাটা খোলা। ভিতরে কে যেন নড়ছে। চেহারা দেখতে পাচ্ছে না মুসা, কিন্তু স্পষ্ট
বুঝতে পারল, যে-ই হোক না কেন মানুষটা, রবিন বা কিশোর নয়।
এই মাত্র বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এসেছে রবিন-কিশোর!
তা হলে গাড়ির ভিতর কে?
৪
কিশোর-রবিন! গাড়ির ভেতর কে যেন ঢুকেছে, দৌড়াতে শুরু করল মুসা। থমকে দাঁড়াল কিশোর আর রবিন, তারপর পিছু নিল ওর।
মুখোশ পরা লোকটা ঝুঁকে গ্লাভ কম্পার্টমেন্ট হাতড়ে কী যেন খুঁজছে।
গাড়ির কাছে আগে পৌঁছুল মুসা, কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল, কী করছেন আপনি আমার গাড়ির ভেতর?
দরজার সামনে দাঁড়িয়েছে ও, এদিক দিয়ে লোকটা বের হতে পারবে না।
ঝাঁকি খেয়ে সিধে হলো উলের টুপি আর রাবারের মুখোশ পরা লোকটা। ভূতের মতো লাগছে তাকে দেখতে। রাত হলে মুসা এর ধারেকাছেও যেত না, কিন্তু এখন সকালের উজ্জ্বল রোদে ভয় কীসের!
সাহায্য করতে রবিন আর কিশোরও ছুটে আসছে। এবার বাগে পাবে ওরা লোকটাকে। তিনজন ঝাঁপিয়ে পড়লে হালকা গড়নের লোকটা গায়ের জোরে কিছুতেই পারবে না ওদের সঙ্গে। কুকুরচুরি রহস্যের সমাধান বোধহয় হয়েই গেল। এবার বোধহয় রাফিয়ানের খোঁজও পাওয়া যাবে।
এক পলকে চিন্তাগুলো খেলে গেল মুসার মাথায়। পরক্ষণেই হতভম্ব হয়ে যেতে হলো ওকে। গ্লাভ কম্পার্টমেন্টে রাখা রবিনের কয়েকটা পত্রিকা ওর মুখে সজোরে ছুঁড়ে মেরেছে লোকটা। চোখ বাঁচাতে হাত দুটো মুখের সামনে তুলল মুসা, এক পা পিছিয়ে গেল। ওর দ্বিধার সুযোগে মুহূর্তের মধ্যে ড্রাইভিং সিটে পিছলে সরে গেল লোকটা, তারপর ওদিকের দরজা খুলে নেমেই ঝেড়ে দৌড় দিল ফাঁকা জমির ঝোপঝাড় লক্ষ করে।
সামলে নিয়ে মুসা দেখল, ঝোপের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে মুখোশ পরা চোর। চোখের পলকে ঝোপের আড়ালে চলে গেল লোকটা। দৌড়ে কয়েক পা গিয়েই থেমে দাঁড়াল মুসা। একটা গাড়ির এঞ্জিন গর্জে উঠেছে। দ্রুত ছুটল গাড়িটা। এঞ্জিনের আওয়াজ দূরে সরে যাচ্ছে। এখন আর লোকটাকে ধরা যাবে না। ফোক্সওয়াগেনের কাছে ফিরল মুসা। রবিন আর কিশোর চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল ওর দিকে।
চেহারা দেখতে পেয়েছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না। মাথা নাড়ল মুসা। গ্লাভ কম্পার্টমেন্টে কী যেন খুঁজছিল। গাড়িটা রেখেছিল ঝোপের ওদিকের রাস্তায়। আমাকে চমকে দিয়ে পালিয়ে গেছে।
পরেরবার ধরা যাবে, সান্ত্বনা দিল রবিন।
কিশোর বলল, কী খুঁজছিল জানা দরকার। গাড়িচোর নয় তো?
গাড়িতে উঠল ওরা। হ্যান্ডব্রেক খুলে এঞ্জিন স্টার্ট দিল মুসা। পিছনের সিট থেকে রবিন বলল, মুসার গাড়ি চুরি করবে না কোনও চোর। চোরদের একটা প্রেস্টিজ আছে না! এ-জিনিস বেচবে কোথায়? যারা চোরাই মাল কেনে তারা কিনবে তো না-ই, বরং টিটকারি দেবে চোরকে।
গম্ভীর চেহারা করে গাড়ি চালাচ্ছে মুসা, কিছু বলল না। ওর পাশেই বসে আছে কিশোর, গ্লাভ কম্পার্টমেন্ট ঘেঁটে বলল, কাগজপত্র সব ঠিকই আছে। ভাগ্যিস মোবাইল ফোনটা বাসায় রেখে এসেছ বলে ওটা নিতে পারেনি। ওয়্যারহাউসে যে কুকুরের হুকটা পেয়েছিলাম, ওটা নিয়ে গেছে। বোধহয় আঙুলের ছাপ ছিল। আগেই ওটা পুলিশের কাছে দেয়া দরকার ছিল আমাদের, পরে দেব ভেবে ভুল করেছি।
আর কিছু নেয়নি? ড্রাইভিঙের ফাঁকে জিজ্ঞেস করল মুসা।
না।
খিদে লেগে গেছে, প্রসঙ্গ পাল্টাল মুসা। সেই কখন নাস্তা করেছি, সব হজম হয়ে গেছে।
তা হলে বন্দরের দিকে চলো, বলল কিশোর। ওখানে সাগরের তীরের কোনও একটা রেস্তোরাঁয় বার্গার খাওয়া যাবে। তারপর ওখান থেকে যাব কারিনা মুরের সৎ ভাইয়ের খোঁজ করতে। রেস্তোরাঁগুলোর কাছেই ড্রাই-ডক। এ লাইমস্টোন স্ট্রিট ধরে এগিয়ে চলল ওরা, বন্দরে সাগর-তীরে ছোট একটা রেস্তোরাঁর সামনে থামল। ভিতরে কাস্টোমার অনেক। গমগম করছে গোটা রেস্তোরাঁ। ওরা বসল কিচেনের দরজার কাছেই একটা টেবিলে।
কী দেব? এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল এক তরুণী ওয়েইট্রেস। তার পোশাকে নাম লেখা আছে। রাফেলা জুলিয়ান।
মুসা অর্ডার দিল। বার্গার, আলুর চপ, পিজা আর কোক। ওয়েইট্রেস চলে যাবার পর ও জিজ্ঞেস করল, কী জানা গেল কারিনা মুরের সঙ্গে কথা বলে?
রবিন আর কিশোর খুলে বলল মহিলার সঙ্গে কী কথা হয়েছে। কিশোর শেষে যোগ করল, মিস্টার লেবউফ আর তার ডগ-হাউস দুচোখে দেখতে পারেন না কারিনা মুর। তাঁর সৎ ভাই হারল্ড মুরেরও ডগ-হাউস সম্বন্ধে একইরকম মনোভাব। উনি বোনের বাড়িতেই থাকেন।