হাসি ফুটল কিশোরের মুখে। কাণ্ডটা কি হবে ভাবো তো? বুদ্ধিমান হয়ে যাব আমরা। আর আমাদেরকে বোকা বলার সাহস পাবে না কেউ। কি সাংঘাতিক ব্যাপারই,না হবে।
হ্যাঁ, সাংঘাতিক, রবিন একমত হলো তার সঙ্গে।
একসঙ্গে গ্লাস তুলল ওরা। গ্লাসে গ্লাসে টোকা লাগিয়ে টোস্ট করল বড়দের মত করে।
উজ্জ্বল আলোয় ঝিক করে উঠল রঙিন তরল।
খেতে কেমন লাগবে আল্লাহই জানে, দ্বিধা করছে কিশোর।
যেমনই লাগে খেয়ে ফেলা যাক, রবিন বলল। যত দেরি করব, ততই ভয় বাড়বে।
একসঙ্গে ঠোঁট লাগিয়ে গ্লাসে চুমুক দিল তিনজনে। ইঞ্চিখানেক ওষুধ থাকতেই গ্লাসটা নামিয়ে রাখল মুসা। বিচ্ছিরি স্বাদ! আর এত ঘন!
খেয়ে ফেলো, মুসা, খেয়ে ফেলো, কিশোর বলল। কাজে লেগেও যেতে পারে।
বোকা থাকা চলবে না আমাদের, যোগ করল রবিন।
আবার গ্লাস ঠোঁটে ঠেকাল ওরা। কোনমতে মুখে ঢেলে গিলে ফেলল। গ্লাসগুলো নামিয়ে রাখল।
ঠোঁটে লেগে থাকা ওষুধ চেটে মুসা বলল, জঘন্য। এত ভয়াবহ স্বাদের জিনিস জীবনে মুখে দিইনি।
হু। মিকশ্চারও অত খারাপ না, কিশোর বলল দুনিয়ার সবচেয়ে বাজে স্বাদের ওষুধ। কয়েকবার ঢোক গিলে স্বাদটা জিভ থেকে নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল সে। ওয়াক ওয়াক করল। মনে হচ্ছে বেরিয়ে চলে আসবে। মুসার দিকে তাকাল। চিউয়িং গাম আছে নাকি?
পকেটে হাত দিল মুসা।
কি, চালাক চালাক লাগছে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
উম।…মনে তো হচ্ছে, জবাব দিল কিশোর।
রাইনসরাস বানান করো তো।
উ?
রাইনসরাস। করো। বানান করো।
দ্বিধা করতে লাগল কিশোর। ভাবছে। তারপর বলল, আর-আই-এন-ও…
থামো থামো, হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে লাগল রবিন। কাজ করছে না ওষুধ।
এত দ্রুত নিশ্চয় কাজ করে না এই ওষুধ, মুসা বলল। সময় দিতে হবে। ওই যে আঙ্কেল বললেন, চিন্তার রাস্তার প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে..নিশ্চয় অতিরিক্ত ময়লা পড়ে গেছে। সাফ হতে সময় লাগবে।
জোরে নিঃশ্বাস ফেলল রবিন। তা লাগুক। বুধবারের মধ্যে হয়ে গেলেই বাঁচি।
কেন? বুধবার কেন?
ভুলে গেছ, বুধবারে অংক পরীক্ষা?
হাই তুলতে শুরু করল কিশোর। হঠাৎ করেই ঘুম পাচ্ছে আমার।
আমারও, রবিন বলল।
আমি তো চোখই টেনে খুলে রাখতে পারছি না, টেবিলের ওপরই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তে চাইল মুসা। বাড়ি যাওয়া এখন আমার পক্ষে দুঃসাধ্য!
থাক, যাওয়ার দরকার নেই, কিশোর বলল। রাতে আমাদের এখানেই থেকে যাও। বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দাও রাতে ফিরবে না।
ঘুমজড়িত স্বরে মুসা জবাব দিল, আমার ফোন করার ক্ষমতাও নেই।
.
০৮.
পা টিপে টিপে ওপরতলায় উঠল মাজুল আর গাজুল।
না দেখে কিসে যেন পা বেধে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল মাজুল।
চাপা গলায় ধমকে উঠল গাজুল, আহ, আস্তে। দেখে হাঁটো। সারা বাড়ির লোক সব জাগিয়ে দেবে দেখছি।
মাজুল বলল, এখানে কেন এলে, এখনও বলোনি কিন্তু।
মগজশক্তি রসায়ন তোমারও খাওয়া উচিত, বিরক্তকঠে বলল গাজুল। আর গাধা, এখানে এসেছি শিওর হতে, ওষুধটা খেল কিনা ছেলেগুলো, ওষুধে কাজ হলো কিনা দেখতে।
ভারী পায়ে অন্ধকার হল ধরে হেঁটে চলল দুজনে। কিশোরের শোবার ঘরের সামনে এসে থামল। উঁকি দিল ভেতরে।
ওই যে একটা ছেলে, ফিসফিস করে বলল গাজুল।
বাকি দুটো কোথায়? এ বাড়িতেই তো ঢুকতে দেখলাম। আর বেরোয়নি।
আছে অন্য কোন ঘরে। গেস্টরূমে।
নিঃশব্দে ঘরে ঢুকল দুজনে। টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল। তিনটে গ্লাস পড়ে আছে। সব কটাতেই লালচে ওষুধের তলানি।
একটা গ্লাস তুলে নিয়ে তাঁকে দেখল গাজুল। হাসি ফুটল মুখে। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হ্যাঁ, খেয়েছে। তিনটে খালি গ্লাস। তিনজনেই খেয়েছে।
ফিরে তাকিয়ে দেখল বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাজুল।
কিশোরের মুখের কাছে ঝুঁকে দেখতে লাগল। টাইম ট্রাভেল
দেখতে দেখতে কুঁচকে গেল তার ভুরু।
হাত নেড়ে ডাকল, গাজুল, এদিকে এসো তো?
কি হলো?
দেখো তো মরেটরে গেল নাকি!
শঙ্কিত হয়ে উঠল গাজুল। তাড়াতাড়ি বিছানার কাছে এসে দাঁড়াল। কিশোরের নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখল। ফিরে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল, উহ, পিলে চমকে দিয়েছিলো তোমাকে গাধা কি আর সাধে বলি। দিব্যি তো নিঃশ্বাস পড়ছে।
লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা চুলকাল মাজুল। নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখার কথা মনেই হয়নি।
তা তো হবেই না। হয় তোমাকেও ওষুধ খাওয়ানো দরকার, নয়তো বাড়ি ফিরে ওঅর্কশপে গিয়ে মগজটা খুলে দেখা দরকার কোথায় কি গোলমাল হলো। তোমার এ সব বোকামির কথা মনিব শুনলে হয়তো তোমাকে বিকল বানিয়েই ফেলে রাখবে। কিংবা হাওয়া করে দেবে।
ভয় দেখা দিল মাজুলের চোখে। না–না, দোহাই তোমার, বসকে বোলো না, প্লীজ। তুমি না আমার বন্ধু।
হু। এখন থেকে মাথাটা খেলানোর চেষ্টা করবে।
করব। করব।
চলো, বেরিয়ে যাই, গাজুল বলল। দেখা তো হলো।
বাকি ছেলে দুটোকে দেখবে না?
না, দরকার নেই। তিনটে গ্লাসে ওষুধ, তারমানে তিনজনেই খেয়েছে। আর এই ছেলেটা যখন ভাল আছে, বাকি তিনটেও থাকবে, সন্দেহ নেই তাতে।
.
কিশোর! এই কিশোর কিশোর।
ডাক শুনে চোখ মেলল কিশোর। দেখল জানালার পর্দা সরিয়ে দিচ্ছেন মেরিচাচী। রোদ এসে পড়েছে ঘরে।
ওঠ, ওঠ। আর কত ঘুমাবি? স্কুলে যাবি না? হাসলেন চাচী। হাসিটা সকালের সোনালি রোদের মতই উজ্জ্বল।
উঠে বসল কিশোর। মুখের কাছে হাত নিয়ে এসে দীর্ঘ হাই তুলল। ঘুমটা যেতে চাইছে না চোখ থেকে। হিংসে হলো চাচীর ওপর। রোজ সকালে এত হাসিখুশি থাকেন কি করে চাচী। তার মনে হতে লাগল ওরকম মেজাজে থাকতে হলে মগজ ভরা বুদ্ধি থাকা দরকার। যার যে জিনিসটার ঘাটতি থাকে সব সময় সেটা নিয়েই মাথা ঘামায় মানুষ।