যাই হোক, রিনিতার প্রশ্ন শুনে আগে হলে হয়তো রেগে উঠতাম। জবাব দিতাম, সেটা জেনে তোমার কি লাভ? নিজের চরকায় তেল দাও। কিন্তু ইদানীং বোকা হয়ে যাওয়ার পর কেমন মানসিক ভাবেই দুর্বল হয়ে পড়েছি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিনমিন করে জবাব দিলাম, স্কুলের পরেও থাকতে হয়েছে।
কেন? ফেলটেল করেছ নাকি? ঠাসানি দিয়েছে টিচার?
প্রশ্নটা এড়ানোর জন্যে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি করছ?
হাঁদা নাকি? মুখ ঝামটা দিল রিনিতা। দেখছ না খেলছি প্লাস্টিকের টুকরোগুলো দিয়ে প্রথমে একটা ঘর বানাব। বাস স্টেশন। তারপর একটা বাস। স্টেশনের সামনে রাখব। কিন্তু দেখো না, ঠিকমত জোড়াই লাগাতে পারছি না। মায়ার জন্যে অপেক্ষা করছি। ও এলে একটা ব্যবস্থা হবেই।
দেখি, আমাকে দাও তো।
দূর, আমার হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিল রিনিতা, তুমি কি লাগাবে? তুমি তো একটা হাঁদা। কালকে মনে নেই, সাধারণ একটা বাক্স বানাতে দিলাম, তাই পারলে না। স্কুলে এত দেরি করলে কেন? পড়া পারেনি বলে টিচার আটকে নাকি?
ঘাবড়ে গেলাম। কোন প্রসঙ্গই সহজে ভোলে না রিনিতা। ওর এ সব কথা, মার কানে গেলে জিজ্ঞেস করতে আসবে। তখন পড়ব আরও বিপদে।
থাক থাক, সাহায্য করতে চেয়েছিলাম, ভাল লাগল না, রিনিতাকে বলে তাড়াতাড়ি পালিয়ে এলাম সেখান থেকে।
.
০৪.
রবিন থামলে মুসার দিকে তাকালেন আঙ্কেল জ্যাক। এবার তোমার কোনও ঘটনার কথা বলো।
হাত ওল্টাল মুসা। কি আর বলব? আমারগুলোও.ওদের চেয়ে ভাল কিছু না।
তারমানে তুমি কিছু বলতে চাও না?
মাথা নাড়ল মুসা। শুধু একটা কথাই বলি, এ ভাবে মাঝে মাঝেই বিপদে পড়তে হয়, অপদস্থ হতে হয় আমাদের তিনজনকে।
হু, গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা দোলালেন আঙ্কেল জ্যাক। চেয়ারে বসে সামনের দিকে ঝুঁকলেন। এক এক করে তাকালেন রবিন, কিশোর ও মুসার দিকে। তাহলে তোমাদের ধারণা তোমরা বোকা হয়ে গেছ?
কোন সন্দেহ নেই আর তাতে, এক আঙুল দিয়ে গাল চুলকাল কিশোর।
বিস্কুট আর দুধ এনে সামনে রেখে গেছেন চেরি আন্টি। কিন্তু ছুঁয়েও দেখল না কিশোর কিংবা রবিন। এমনকি মুসাও খাবারের দিকে একবার তাকিয়ে সেই যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, আর তাকাচ্ছে না। বোকা হয়ে যাওয়াতে খাবারের লোভও যেন চলে গেছে তার। চেয়ারে পিঠ খাড়া করে শক্ত হয়ে বসে আছে তিনজনে। কোলের ওপর হাত রেখে।
আসলে হয়তো বোকা নই আমরা, কিশোর বলল। কিন্তু চালাকও নই। মাথায় ঘিলু বলতে কিছু নেই আমাদের।
বোকা নই মানেটা কি? রবিন বলল। বোকাই আমরা।
একেকটা রামছাগল, মুসা বলল। গাধা। চেহারাটা গাধার মত হলে সারাক্ষণ ব্যা-ব্যাই করতাম।
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করলেন আঙ্কেল জ্যাক। চোখের পাতা সরু করে টাইম ট্রাভেল চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকালেন ওদের দিকে। আমাকে কি করতে বলো?
ইয়ে… বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেল কিশোর। দ্বিধা করতে লাগল।
শেষে রবিন বলল, তুমি একজন বুদ্ধিমান লোক, তাই না আঙ্কেল? তুমি একজন বিজ্ঞানী।
মাথা ঝাঁকালেন আঙ্কেল জ্যাক।
আর বিজ্ঞানীদের সারাক্ষণই মাথা খাটানোর কাজ করতে হয়, ঠিক?
আবার মাথা ঝাঁকালেন আঙ্কেল জ্যাক।
এবং তুমি একজন ব্রেন স্পেশালিস্ট, তাই তো? আবার প্রশ্ন করল রবিন।
তৃতীয়বার মাথা ঝাঁকালেন আঙ্কেল জ্যাক।
সেজন্যেই এসেছি আপনার কাছে, এতক্ষণে যেন কথা খুঁজে পেল কিশোর। কারণ আপনিই আমাদের বুদ্ধিমান বানানোর একটা উপায় বের করতে পারবেন।
আঙ্কেল, অনুরোধের সুরে বলল রবিন, সত্যিই কি আমাদের জন্যে তুমি কিছু করতে পারো না? বুদ্ধি খানিকটা বাড়িয়ে দিতে পারো না আমাদের?
চিবুক ডললেন আঙ্কেল জ্যাক। সোজা হলেন চেয়ারে।
হ্যাঁ, অবশেষে জবাব দিলেন তিনি, পারি। এমন একটা ওষুধ আমি দিতে পারি, যেটাতে মনে হচ্ছে কাজ হবে।
কি ওষুধ? একসঙ্গে চিৎকার করে উঠল তিন গোয়েন্দা।
.
০৫.
আবার সামনে ঝুঁকলেন আঙ্কেল জ্যাক। জবাব দিতে গিয়ে হঠাৎ ঘুরে তাকালেন রান্নাঘরের দরজার দিকে।
কি হলো, আঙ্কেল? জানতে চাইল রবিন।
আবার ওদের দিকে ঘুরলেন তিনি। শুনলে না? মনে হয় চেরি। অনিশ্চিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন তিনি। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আমাদের ওপর নজর রেখেছে কেউ।
দরজার দিকে তাকাল কিশোর। রবিন আর মুসার চোখও ঘুরে গেল সেদিকে। অস্বাভাবিক কোন কিছু চোখে পড়ল না।
কই? কিশোর বলল। দেখছি না তো কিছু।
কাঁধ ঝাঁকালেন আঙ্কেল জ্যাক। টপ সিক্রেট কোন কাজ করার সময় সব বিজ্ঞানীরই বোধহয় এ রকম অনুভূতি হয়। সাদা সোয়েটশার্টের আস্তিন টেনে নামালেন তিনি। গভীর ভাবে ভাবছেন মনে হচ্ছে কোন বিষয় নিয়ে।
আঙ্কেল, অস্থির হয়ে উঠল রবিন, তোমার কি মনে হয় আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে?
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত চুপ করে রইলেন আঙ্কেল জ্যাক। তারপর জবাব দিলেন, আঁঃ..হ্যাঁ, পারব।
উত্তেজিত ভঙ্গিতে চেয়ারের হাতলে চাপড় মারল মুসা। সত্যি বলছেন? সত্যি পারবেন?
মাথা ঝাঁকালেন আঙ্কেল জ্যাক। হ্যাঁ। এ মুহূর্তে আমি অবশ্য এ ধরনেরই একটা জরুরী গবেষণায় ব্যস্ত। জিনিসটা তোমাদের ওপর প্রয়োগ করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু…
কিন্তু কি? আগ্রহে সামনে ঝুঁকে এল মুসা।
আবার রান্নাঘরের দরজার দিকে তাকালেন আঙ্কেল জ্যাক। জিনিসটা ভীষণ বিপজ্জনক।
ঘন ঘন চোখের পাতা পিটপিট করল কিশোর।