জরুরী কণ্ঠে কিশোর বলল, তাড়াতাড়ি এটা ডুবিয়ে দিয়ে চলো পালাই এখান থেকে। বলা যায় না, যে কোন মুহূর্তে টাইম ট্রাভেলার নিয়ে আমাদেরকে ধরতে হাজির হয়ে যেতে পারে ডক্টর মুনের রোবটবাহিনী। চলো চলো, জলদি করো!
যানটাকে তীরের কাছাকাছি নিয়ে আসা হলো। সুইচ টিপে লম্বা মইয়ের মত সিঁড়ি বের করে তীরে ঠেকাল মুসা। নেমে পড়ল তিনজনে। বাকি কাজ। এখন রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সারতে হবে। পকেট থেকে ছোট্ট যন্ত্রটা বের করল কিশোর। গোলক্যানের কন্ট্রোলবোর্ডের ওপরেই রাখা ছিল। নামার আগে পকেটে ভরেছে। সুইচ টিপে প্রথমে মই সূরাল। তারপর দরজা বন্ধ করল। সবশেষে আরেকটা সুইচ টিপতেই নিঃশব্দে পানিতে তলিয়ে গেল যানটা।
.
দুই দিন পর।
স্কুলে হাজির হয়েছে তিন গোয়েন্দা।
মামলায় স্কুল কর্তৃপক্ষ হেরেছে। আবার ভর্তি করে নিতে বাধ্য হয়েছে। তিনজনকে।
অংকের ক্লাসে একটা কঠিন সমীকরণ দিয়ে গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার ক্রেগ, কে করতে পারবে? মুসা, তুমি পারবে?
মাথা নাড়ল মুসা, এত কঠিন অংক আমাকে দিয়ে হবে না, স্যার।
অবাক হলেন মিস্টার ক্রেগ। রবিনের দিকে তাকালেন। তুমি পারবে?
চেষ্টা করে দেখতে পারি, স্যার।
ব্ল্যাকবোর্ডে এসে চক দিয়ে অংকটা করল রবিন। ফিরে তাকাল মিস্টার ক্রেগের দিকে।
মাথা ঝাঁকালেন তিনি, ঠিক পথেই এগিয়েছিলে, কিন্তু দুটো জায়গায় ভুল রয়ে গেছে। ক্লাসের দিকে তাকালেন তিনি। ভুল দুটো আর কেউ ধরতে পেরেছ? শুধরে দিতে পারবে?
রয় বা শারিয়া কেউ জবাব দিল না। একমাত্র হাত তুলল কিশোর। সে এসে ঠিক করে দিয়ে গেল অংকটা।
হাসি ফুটল মিস্টার ক্রেগের মুখে। কি ব্যাপার? আজ মুসা পারলই না, রবিন ভুল করল, করতে পারলে কেবল তুমি। সেই আগের মত। ঘটনাটা কি?
হেসে জবাব দিল কিশোর, আবার আমাদের মগজ স্বাভাবিক হয়ে গেছে, স্যার। প্রথমে মগজ ভোতা করার ওষুধ দিয়ে বোকা বানিয়ে দেয়া হয়েছিল আমাদের, তারপর মগজ উন্নত করার ওষুধ খেয়ে হয়ে গেলাম ক্ষতিকর রকম বুদ্ধিমান। দুটো ওষুধের পরস্পরবিরোধী রিঅ্যাকশনেই সম্ভবত আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে আমাদের মগজ। একেবারে আগের মত। অরিজিন্যাল আমরা।
পরস্পরবিরোধী রিঅ্যাকশনের ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না।
ভাল ব্যাখ্যা আমিও দিতে পারব না, স্যার। তবে বিষে বিষক্ষয়ের মত হয়েছে ব্যাপারটা। এর সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্ভবত আঙ্কেল জ্যাক দিতে পারবেন।
হু, মাথা ঝাঁকালেন মিস্টার ক্রেগ। দেখি, একদিন মিস্টার জ্যাককেই গিয়ে ধরব। কি ওষুধ দিয়ে তিনি এই কাণ্ড করিয়েছেন, জানতে হবে। যাই হোক, আবার যে তোমাদেরকে আগের অবস্থায় ফিরে পেয়েছি, এতে আমি খুব খুশি। ক্লাসের দিকে তাকালেন তিনি। তোমরা কি বলো?
হাততালি দিয়ে মিস্টার ক্রেগের কথা সমর্থন করল সবাই।