যথেষ্ট হয়েছে। চিৎকার করে উঠলেন ডক্টর মুন। থামো!
রাগত চোখে গাজুলের দিকে অকালেন আবার তিনি। ঘামতে আরম্ভ করেছে গাজুল।
কর্কশ কণ্ঠে ডক্টর মুন বললেন, কি, কোথায় বুদ্ধিমান? আগের চেয়ে তো হাদা হয়েছে আরও। এত বোকা তো আমিও বানাইনি। বললাম না মগজশক্তি রসায়ন লাল রক্তে কাজ করে না।
হাত কচলে গাজুল বলল, কিন্তু মালিক, আমি সত্যি বলছি, বুদ্ধিমত্তার জন্যে ওদেরকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
তাহলে বোকা হলো কি করে? ভুরু নাচালেন ডক্টর মুন।
ধীরে ধীরে পেছনে সরে যেতে লাগল মাজুল।
ধমকে উঠলেন ডক্টর মুন, যাচ্ছ কোথায়?
পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে গেল মাজুল।
কঠিন কণ্ঠে গাজুল-মাজুলের উদ্দেশে বললেন ডক্টর মুন, নিশ্চয় রিঅ্যাকশন হয়েছে ওষুধে। আমি নিশ্চিত, লাল, রক্তে কাজ করে না এই ওষুধ। আর করলেও বেশিদিন কার্যকর থাকে না। গর্জে উঠলেন হঠাৎ তোমাদের পাঠানো হয়েছে স্বাভাবিক মগজের বুদ্ধিমান মানুষকে ধরে আনতে। এ কাকে নিয়ে এলে তোমরা? কে বলেছিল আমি নিজে হাঁদা বানিয়ে রাখা কতগুলো ছেলেকে ওষুধ খাইয়ে বুদ্ধিমান বানিয়ে ধরে আনতে? তোমরা আমাকে ঠকিয়েছ!
ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল গাজুল আর মাজুল।
করজোড়ে বলল গাজুল, ভুল হয়ে গেছে, মালিক। এবারের মত মাফ করে দিন।
ডক্টর মুন বললেন, ভাল করেই জানো তোমরা এখানকার নিয়ম। এখানে ভুলের কোন ক্ষমা নেই। বিজ্ঞান গবেষণায় সামান্যতম ভূলও বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। তোমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখলে ভবিষ্যতে আরও বড় কোন ভুল করে বসবে। আমার ল্যাবরেটরিতে এ ধরনের রিস্ক আমি নিতে পারি না। কষ্ট করার ভয়ে হাতের কাছে পাওয়া বোকাদেরকে ওষুধ খাইয়ে যারা বুদ্ধিমান বানানোর চেষ্টা করে, তাদের মত অলসদের দিয়ে আমার কোন উপকার হবে না।
ডেস্কের ড্রয়ারের দিকে ডান হাতটা নেমে গেল ডক্টর মুনের।
কি ঘটতে যাচ্ছে বুঝে গিয়ে চিৎকার করে উঠল গাজুল, না না, মালিক, আর কোনদিন ভুল হবে না…
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই হাতটা বেরিয়ে এল আবার ডক্টর মুনের। হাতে একটা বড় পিস্তলের মত অস্ত্র। গাজুলের দিকে তাক করে টিপে দিলেন ট্রিগার। নলের মুখ থেকে বেরিয়ে এল একটা সাদা আলোকরশ্মি।
মুহূর্তে নেই হয়ে গেল গাজুল। সে যেখানে ছিল সেখানে টেনিস বলের সমান একটা রূপালী ধোঁয়ার কুণ্ডলী তৈরি হলো। ধীরে ধীরে উঠে যেতে লাগল ছাতের দিকে।
ঘুরে দরজার দিকে দৌড় মারল মাজুল।
কিন্তু দুই পা-ও যেতে পারল না। সাদা আলোকরশ্মি এসে লাগল তার পিঠে। চোখের পলকে গাজুলের অবস্থা হলো তারও।
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল তিন গোয়েন্দা। ডক্টর মুন বাদে সবার চোখে আতঙ্ক দেখতে পেল।
অস্ত্রটা আবার ড্রয়ারে রেখে দিলেন ডক্টর মুন। প্রহরীদের বললেন, নিয়ে যাও এদের। টেকনিশিয়ানদের বলো, রক্ত বদলাক, কিংবা যত খুশি পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাক এদের ওপর। যদি কাজের উপযুক্ত করতে পারে, ভালো, নয়তো গায়েব করে দিক। হাবা দিয়ে আমাদের কোন কাজ হবে না। ওদের বাড়িতে ফেরত পাঠানোরও আর কোন যুক্তি নেই। যাও, নিয়ে যাও।
.
২৩.
আবার ক্লিনিং রুমে নিয়ে আসা হলো তিন গোয়েন্দাকে।
ঘরে ঢুকেই ঝাড়া দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিল মুসা। কিশোরকে যে রোবটটা ধরেছে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিশোরকে ছাড়ানোর পর দুজনে মিলে রবিনকে ছাড়াল। তারপর দিল দৌড়।
আচমকা মুসাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রবিনকে লক্ষ্য করে ডাইভ দিল কিশোর। তাকে সঙ্গে নিয়ে পড়ল মেঝেতে। ঠিক ওই মুহূর্তে দুটো সাদা আলোকরশ্মি ছুটে গেল ওদের মাথার ওপর দিয়ে। অল্পের জন্যে বাঁচল।
ঘাড় ফিরিয়ে মুসার কি অবস্থা দেখল কিশোর।
মুসাও উপুড় হয়ে শুয়ে আছে মাটিতে।
হাঁচড়েপাঁচড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আবার ছুটতে শুরু করল ওরা। পালানোর পথ খুঁজছে।
কোন পথ দেখতে পেল না।
পালানোর কোন উপায় নেই।
একধারে জটলা করছে কয়েকজন রোবটমানব। সেদিকে গেলে ধরা পড়তে হবে নিশ্চিত।
এখানে থাকলে
কিন্তু ভাবার সময় পেল না কিশোর। চিৎকার করে উঠল, সরে যাও!
আবার তিনটে আলোকরশ্মি ছুটে এল ওদের দিকে। অল্পের জন্যে বাঁচল এবারও। কাঁধে আগুনের আঁচের প্রচণ্ড তাপ লাগল কিশোরের। রশ্মিটা সামান্য নিচে নামলেই গায়ে লাগত তার, হাওয়া হয়ে যেত সে।
এদিকে দিয়ে এসো! চিৎকার করে উঠল মুসা।
হতভম্ব একজন রোবট-টেকনিশিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাঁক নিয়ে কতগুলো বাক্সের পেছনে ঢুকে গেল সে। রবিন ছুটল তার পেছনে।
ক্ষণিকের জন্যে ফিরে তাকাল কিশোর! এগিয়ে আসছে তিন প্রহরী। ওদের হাতে লেজার-পিস্তল উদ্যত। কিন্তু ট্রিগার টিপতে সাহস পাচ্ছে না। কেন সেটা বোঝা যাচ্ছে। টিপলেই রশ্মি গিয়ে লাগবে কাঁচের বাক্সের গায়ে। হাওয়া হয়ে যাবে বাক্সে ভরে রাখা রোবটশিশুরা।
মুসা আর রবিনের মত কিশোরও কাজে লাগাল সুযোগটা। ছুটে বাক্সের পেছনে চলে এল।
দরজাটা চোখে পড়ল। সেদিকেই ছুটছে মুসা আর রবিন। বেরোনো• যাবে ওটা দিয়ে? পেছন থেকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
চেষ্টা করে দেখা যাক। আর তো কোন উপায়ও নেই। ছোটা বন্ধ করল না মুসা।
পেছনে কানে আসছে চিৎকার আর পদশব্দ। দরজার কাছে সময়মত পৌঁছতে পারবে কিনা বুঝতে পারল না কিশোর। ভারী দম নিল সে। তারপর প্রাণপণে ছুটতে শুরু করল দরজাটার দিকে। ছোটাও কঠিন। আয়না বসানো মেঝেতে পিছলে যেতে চায় পা।