ক্যাটওয়াকে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং ডক্টর মুন! মহাক্ষমতাধর অসাধারণ ক্ষমতাশালী সেই বিজ্ঞানী, যার সঙ্গে বহুবার মোলাকাত হয়েছে ওদের।
ডক্টর মুনকে দেখে নিশ্চিত হলো রবিন, ভিনগ্রহে নয়, পৃথিবীতেই রয়েছে ওরা, ডক্টর মুনের কোনও গোপন আস্তানায়।
তিন গোয়েন্দাকেও দেখতে পেলেন ডক্টর মুন। বিমল হাসি ফুটল তাঁর মুখে। আদেশ দিলেন, অ্যাই ছাড়ো। ছেড়ে দাও ওদের।
বিনীত ভঙ্গিতে গাজুল বলল, রক্ত বদলানো এখনও শেষ হয়নি, মালিক।
না হোক, আদেশ দিলেন: ডক্টর মুন। নিয়ে এসো ওদেরকে আমার চেম্বারে।
রবিনের দিকে ফিরে তাকিয়ে ফিসফিস করে মুসা বলল, মনে হচ্ছে বেঁচে গেলাম এ যাত্রা।
কি জানি! জবাব দিল রবিন। কিংবা হয়তো আরও বড় কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছি। ডক্টর মুনকৈ আমরা যে পরিমাণ ভুগিয়েছি এতকাল, এবার নিশ্চয় প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়বেন না।
সাদা আলো জ্বলছে ডক্টর মুনের চেম্বারে। তবে ক্লিনিং রূমের মত এত উজ্জ্বল চোখ ধাঁধানো নয়, চোখে পীড়াদায়কও নয়।
ঘুরে গিয়ে মস্ত ডেস্কের ওপাশে বসলেন ডক্টর মুন। তার দুই পাশে গিয়ে দাঁড়াল দুজন বডিগার্ড। ওরা স্বাভাবিক লাল রক্তের মানুষ নাকি রোবটমানব, দেখে বোঝার উপায় নেই। গম্ভীর, ভাবলেশহীন চেহারা।
তিন গোয়েন্দাকে ধরে নিয়ে ঘরে ঢুকেছে তিনজন প্রহরী। তাদের সঙ্গে গাজুল-মাজুল।
ডেস্কের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো গোয়েন্দাদেরকে। হাসিমুখে তাদের দুই পাশে এসে দাঁড়াল গাজুল-মাজুল।
আপনার জন্যে নতুন গোলাম নিয়ে এলাম, মালিক, মাথা নুইয়ে কুর্নিশ করে বলল গাজুল।
ভীষণ বুদ্ধিমান ওরা, যোগ করল মাজুল।
ভুরু কুঁচকে তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে রইলেন ডক্টর মুন। কিন্তু ওরা বুদ্ধিমান হয় কি করে? ওদেরকে তো বোকা বানিয়ে দিয়েছিলাম আমি।
বুঝতে পারল না গাজুল। বোকা বানিয়ে দিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, ডক্টর মুন বললেন। আমাদের একটা টাইম ট্র্যাভেল মেশিন নিয়ে পালিয়েছিল ওরা। নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল লেকের পানিতে। ওটাতে চড়েই কিছুদিন আগে ফিরে এসেছিল আবার।
তারপর? কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল গাজুল।
মগজের মান নামানোর ওষুধ দিয়ে দিলাম বোকা বানিয়ে। ফেরত পাঠিয়ে দিলাম বাড়িতে। ওরা আমার পুরানো শত্রু। আমার কাজে বার বার বাগড়া দিয়েছে। বহু ক্ষতি করেছে। মেরে ফেলা যেত, কিন্তু তার কোন প্রয়োজন মনে করলাম না। এমন একটা কিছু করে দিতে চাইলাম, যাতে আমার কোন ক্ষতি করতে না পারে আর কোনদিন। ভাবলাম, কি করলে সেটা সম্ভব? বোকা বানিয়ে দিলে। বুদ্ধি না থাকলে আমার বিরুদ্ধে লাগতে পারবে না আর কখনও।
হাসিমুখে গাজুল জানাল, শাস্তি ওদের ভালমতই হয়েছে, মালিক। স্কুলে টিচার, বন্ধু-বান্ধবরা সারাক্ষণ ওদের নিয়ে দূর-দূর ছ্যা-ছ্যা করেছে, ইয়ার্কি মেরেছে, হাসাহাসি করেছে। তবে ইদানীং সেই অবস্থাটা আর ছিল না। তবে ওদের ভয় পাওয়া শুরু করেছিল পরিচিতজনেরা। ফ্রীক ভাবতে আরম্ভ করেছিল।
তার মানে?
মগজশক্তি রসায়ন দিয়ে বুদ্ধিমান বানিয়ে ফেলেছি। এত বেশি বুদ্ধিমান হয়ে গেছে ওরা এখন, ওদের বুদ্ধিমত্তার যন্ত্রণায় টিকতে না পেরে স্কুল থেকেই বের করে দিয়েছে ওদেরকে টিচাররা। বন্ধু-বান্ধবরা ভয়ে মিশতে চায় না। খুব ভাল গোলাম হবে আপনার, মালিক।
হুঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলালেন ডক্টর মুন। ভুল করেছ। মস্ত ভুল। স্বাভাবিক বুদ্ধি যখন ছিল এদের, তখনই এরা আমার ক্ষতি করেছে একের পর এক। আগের চেয়েও বুদ্ধি যদি বেড়ে গিয়ে থাকে তাহলে তো দানবে পরিণত হয়েছে এখন। এদের এত বুদ্ধিমান রাখা যাবে না কোনমতেই। আমার ল্যাবরেটরিই ধ্বংস করে দিয়ে বেরিয়ে যাবে কোনদিন। তবে ওষুধ খাইয়ে যখন ফেলেছই, দেখা যাক কি রকম বুদ্ধিমান ওরা হয়েছে, তারপর আবার বোকা বানিয়ে দিলেই হবে। আর স্মৃতিশক্তিটাও ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে।…কিশোর পাশা, বলো তো আমি কে?
আপনি আমাদের মালিক, নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দিল কিশোর।
মুসা, রবিন, তোমরা বলো তো আমি কে?
আপনি গাজুল-মাজুল-হাজুল-বাজুল সবার মালিক, জবাব দিল মুসা।
রবিন বলল, আপনি রোবটমানব টাকরাভুম ওরফে গাকরা মিয়া।
রাগ ঝিলিক দিয়ে উঠল ডক্টর মুনের চোখে। কোনমতে দমন করলেন। ঝট করে তাকালেন একবার গাজুল-মাজুলের দিকে। কুঁকড়ে গেল ওরা।
গাজুল বলল, ওরা বোকা সাজার ভান করছে। কিন্তু গলায় জোর নেই তার।
মাজুল বলল, মালিক, ওদের অংক দিয়ে দেখুন। মুহূর্তে করে ফেলবে। যত কঠিনই দেন না কেন।
আবার কিশোরের দিকে তাকালেন ডক্টর মুন। দুই আঙুল তুলল। বল তো এখানে কটা আঙুল?
নির্দ্বিধায় জবাব দিল কিশোর, সাড়ে দশটা।
মুসাকে জিজ্ঞেস করলেন ডক্টর মুন, তুমি বলো, দুই আর তিন যোগ করলে কত হয়।
বিশ।
হাঁদারাম! ধমকে উঠল রবিন। দুই আর তিন যোগ করলে বিশ হয় নাকি? একুশ হয়, একুশ একুশ।
আরে কি শুরু করলে কি তোমরা? কিশোর বলল। আমরা যে বুদ্ধিমান হয়ে গেছি, এটা বুঝিয়ে দিতে চাও নাকি? তাহলে তো ধরে গোলাম বানাবে।
তাড়াতাড়ি জিভ কাটল রবিন, না না, তা কেন বোঝাব। এই মুসা, দুইয়ে আর তিনে এগারো হয়, বুঝলে? বারো বললেও অবশ্য ভুল হবে না।
হা-হা করে হাসল কিশোর। গাধাটা কি বলেরে!
গাধা! গাধা! করে সমানে চেঁচাতে লাগল মুসা আর রবিন। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাবার মত হি-হি করে হাসতে লাগল।