দেখতে দেখতে সাবাড় করে ফেলল অত বড় কেকটা।
রেফ্রিজারেটর থেকে কোকের বোতল বের করল কিশোর। তিনটে গ্রাসে ঢালল। রবিন আর মুসার হাতে একটা করে গ্লাস তুলে দিয়ে নিজে নিল তৃতীয়টা। ডনকে বলল, তুমি খেতে চাইলে ঢেলে নাও।
রবিন বলল কিশোরকে, চলো, লিভিং রূমে গিয়ে বসি। সিনেমা-টিনেমা দেখে সময় কাটাই।
কিন্তু লিভিং রূমে ঢুকেই থমকে দাঁড়াতে হলো ওদের। হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে গাজুল আর মাজুল।
মাজুলের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করল গাজুল।
মুহূর্তে ডনের পাশে চলে এল মাজুল। তার কলার চেপে ধরল। লাফ দিয়ে ডান হাতে বেরিয়ে এসেছে একটা পিস্তলের মত জিনিস। সেটা তুলে তাক করল একটা পাথরের ফ্লাওয়ার ভাসের দিকে। টিপে দিল ট্রিগার।
আগুনে পানি পড়লে ছ্যাৎ করে যেমন শব্দ হয়, তেমনি একটা শব্দ করে মুহূর্তে নেই হয়ে গেল জিনিসটা। একেবারে গায়েব।
হাঁ হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা।
তাহলে বুঝলে তো, হাসিমুখে বলল গাজুল, তোমাদেরও কি অবস্থা করতে পারি আমরা। কিন্তু করব না। কারণ গোলাম বানানোর জন্যে বহু কষ্টে তোমাদের খুঁজে বের করেছি আমরা। গোলাম হওয়ার উপযুক্ত বানিয়েছি। বোকা থেকে বুদ্ধিমান বানিয়েছি। এখন তোমরা আমাদের কাছে মূল্যবান। তবে তাই কলে ওই বাচ্চা ছেলেটাকেও কিছু করব না, তা ভেবো না। আমাদের কাছে ওর এক কানাকড়ি দাম নেই।
পিস্তলটা ডনের মাথায় ঠেকিয়ে চাপ দিল মাজুল।
ব্যথা লাগল। চিৎকার করে উঠল ডন। লাথি মারল মাজুলের হাঁটুতে।
পাটা সরিয়ে নিল মাজুল। ব্যথা পেল কিনা বোঝা গেল না। কারণ টু শব্দও করল না সে। তবে পিস্তলের নলের মুখটা আরও ঠেসে ধরল ডনের মাথায়।
ব্যথায় ককাতে লাগল ডন।
পা বাড়াল মুসা।
উঁহু, আঙুল নেড়ে সাবধান করল গাজুল, কোন কিছু করার চেষ্টা করলে ও মারা যাবে, ডনকে দেখাল সে। ও মরে যাবার পরও তোমাদেরকে ছাড়া হবে না। হয় আমাদের কথা মানবে, নয়তো মরবে।
কি করতে বলেন আমাদের জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কোন রকম ঝামেলা না করে আমাদের সঙ্গে চলো, গাজুল বলল।
কোথায়?
যেখানে আমি নিয়ে যাব।
আরেকবার ডনের দিকে তাকাল কিশোর। মাজুলের হাতের পিস্তলটার দিকে তাকাল। শুধু আমি গেলে হয় না?
না, তোমাদের তিনজনকেই যেতে হবে।
রবিন বলল, ঝামেলা বাধিয়ে লাভ নেই, কিশোর। তুমি গেলে আমিও যাব। ডন বাঁচুক।
আমিও যাব, দ্বিধা না করে বলল মুসা।
হাসি ফুটল গাজুলের মুখে। মানুষদের এ ধরনের আন্তরিকতাগুলো আমাকে অবাক করে। কেমন বোকার মত অন্যের জন্যে প্রাণ দিতে রাজি হয়ে যায়। যাকগে, আমার কি। মাজুলের দিকে তাকাল সে। মাজুল, আমি ওকে না বলা পর্যন্ত এখানে থাকো। ওকে আটকে রাখো। আমি ওদের নিয়ে যাচ্ছি। ও-কে বললে তুমিও চলে আসবে।
এটাকে কি করব? ডনের কথা জিজ্ঞেস করল মাজুল।
তোমার যা খুশি, গাজুল বলল।
তাহলে আমরা যাব না, সঙ্গে সঙ্গে বেঁকে বসল কিশোর। ওকে বাঁচানোর জন্যে আমরা যেতে রাজি হয়েছি। আমাদেরকে কথা দিতে হবে ডনের কোন ক্ষতি হবে না।
এক মুহূর্ত ভাবল গাজুল। ঘাড় কাত করল। ঠিক আছে, কথা দিচ্ছি। ছেলেটার কোন ক্ষতি হবে না। এখন চলো।
আপনার কথার বিশ্বাস কি?
আমরা কথা দিলে কথা রাখি, এটাই আমাদের নিয়ম। সেজন্যে ভেবেচিন্তে কথা দিই। নাও, চলো তো এখন, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
.
১৯.
বাইরের আঙিনায় একটা কালো কাঁচে ঢাকা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
কিশোর, মুসা আর রবিনকে এনে সেটাতে তুলল গাজুল। ইঞ্জিন স্টার্ট দিল।
ইয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গাড়ির গতি যতটা সম্ভব বাড়িয়ে দিল গাজুল। শহর থেকে বেরোতে সময় লাগল না। সোজা চলল বুনো অঞ্চলের দিকে।
বনের মধ্যে ঢুকল গাড়ি। আঁকাবাকা কাঁচা রাস্তা পার হয়ে এসে ঢুকল বনের মাঝখানের এক টুকরো খোলা জায়গায়।
গাড়ি থেকে তিন গোয়েন্দাকে নামতে বলল গাজুল।
অবাক হয়ে কিশোর দেখল, খোলা জায়গাটায় বিশাল একটা গোলকের মত জিনিস দাঁড়িয়ে আছে। আটটা পা। গায়ে নাম লেখা: টাইম ট্রাভেল-৭।
নামটা স্মৃতির পাতায় কোথায় যেন অনুরণন তুলল। চেনা চেনা মনে হচ্ছে তার, কিন্তু চিনতে পারছে না গোলকটাকে। কোথায় দেখেছে এ জিনিস? মনে করতে পারল না।
গোলকের কাছে তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে এল গাজুল। মোবাইল ফোনের মত একটা যন্ত্র বের করে কথা বলল। গুঞ্জন উঠল গোলকের ভেতরে। আট পায়ের মাঝখানে একটা গোল চাকতির মত ঢাকনা খুলে গিয়ে ঝুলে পড়ল ধীরে ধীরে। মই নেমে এল গোলকের পেটের ভেতর থেকে। সেটা বেয়ে উঠে যেতে আদেশ করল গাজুল।
উঠে গেল তিন গোয়েন্দা। জিনিসটাকে স্পেসশিপের মত লাগল ওদের কাছে। ভেতরে আলো এত উজ্জ্বল, চোখ মিটমিট করতে লাগল ওরা।
চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগল কিশোর। ছোট ছোট ডজনখানেক খুপরিমত চোখে পড়ল। এমন করে সাজানো, মৌচাকের মত দেখতে। মৌচাকের ভেতরে যেমন খুপরি করা থাকে।
গাজুলকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল তারই মত আরেকজন। ধাক্কা দিয়ে দিয়ে নিয়ে গিয়ে তিন গোয়েন্দাকে ঢোকাল একটা কিউবের মত দেখতে চারকোনা ঘরে। জেলখানার দরজার মত দরজাটা ঠেলে দিল। রূপালী রঙের শিকগুলো ঝলমল করছে। মৃদু আলোকিত টিউব লাইটের মত। তালা লাগানোর শব্দ কানে এল ওদের।
এ তো দেখি খাঁচার মধ্যে এনে ভরেছে আমাদের, মুসা বলল। জানোয়ারের খাঁচা।
রূপালী রঙের একটা সরু গলি ধরে চলে গেল লোকগুলো। খাঁচার দেয়ালে হেলান দিয়ে বসল গোয়েন্দারা। তীব্র আলো চোখে সইয়ে নেয়ার অপেক্ষা করছে। বুকের মধ্যে দুরুদুরু করছে হৃৎপিণ্ডটা।