কয়েক সেকেন্ড পর দরজা খুলে দিল রয়। তিন গোয়েন্দাকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তোমরা?
হ্যাঁ, রয়, হাঁপানো বন্ধ হচ্ছে না মুসার। না জিরালে আর হবে কি করে। ভেতরে আসতে পারি? তাড়া খেয়ে পালিয়ে এসেছি আমরা।
আঁ! হ্যাঁ, এসো না, এসো। সরে ঢোকার জায়গা করে দিল রয়। রান্নাঘরে নিয়ে এলো কিশোরদেরকে। সেখানে শারিয়া আর ইমাকে বসে থাকতে দেখা গেল। টেবিলে বইখাতা ছড়ানো। তিন গোয়েন্দাকে দেখে ওরাও অবাক।
দরজাটা লাগিয়ে দাও, রয়কে অনুরোধ করল কিশোর।
ঘটনাটা কি? রয় জিজ্ঞেস করল।
শ্রাগ করল কিশোর। শার্টের বোতাম খুলে দিল। ঘেমে নেয়ে গেছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।
আমরা পালিয়ে এসেছি, কিশোর বলল। আর কোন উপায় না দেখে শেষে তোমাদের বাড়িটায় ঢুকে পড়েছি।
টেবিলের কাছে এগিয়ে গেল সে। বইখাতাগুলোর দিকে তাকাল। কি করছ? স্কুলের পড়া?
একটা মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইল শারিয়া। তারপর জবাব দিল, ইতিহাস পড়ছি। ভীষণ কঠিন। মনে হচ্ছে সারা সেমিস্টার, ধরে পড়েও শেষ করতে পারব না।
মুখ থেকে বের করে গোলাপী রঙের একটা বাবলগামের বেলুন বানাল ইমা। এক মুহূর্ত ঠোঁটে আটকে রেখে আবার ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলল। তোমরা কি স্কুলে ফেরত যাচ্ছ?
যেতে পারি, কিশোর বলল। জানি না এখনও।
আবার এক মুহূর্তের নীরবতা। কিশোরদেরকে তার বাড়িতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা
এগোতে যাবে, হঠাৎ পাশের একটা ঝোপ থেকে বেরিয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল মাজুল আর গাজুল।
.
১৮.
হাঁ করে তাকিয়ে আছে তিন গোয়েন্দা। বুঝতে পারছে না এই দুজন আবার কারা। অন্য কোন ব্রেন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের লোক না তো? এরা আবার মগজের কোন অংশটা চায়?
পায়ে পায়ে এগিয়ে আসতে শুরু করল লোকগুলো। ভঙ্গিটা কেমন যান্ত্রিক। ধীরে ধীরে পা ফেলছে। একতালে। একসঙ্গে।
কিশোরের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ করে দিল ওকে। বলে দিতে লাগল, লোকগুলো বিপজ্জনক।
সামনে এসে দাঁড়াল গাজুল আর মাজুল।
কে আপনারা? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
তোমাদের নতুন প্রভুর চর, দুজনের মধ্যে লম্বা লোকটা, গাজুল বলল।
আমাদের মনিবের সেবা করার জন্যে নিয়ে যাব তোমাদেরকে, মাজুল বলল। গোলাম বানাব তোমাদের।
গোলাম! লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। কারা ওরা? এ প্রশ্নের জবাব তার অতি বুদ্ধিমান মগজও দিতে পারছে না। রসিকতা করছেন, তাই না?
আমরা রসিকতা করি না, শীতল কণ্ঠে জবাব দিল গাজুল।
অন্য কোন গ্রহ থেকে এসেছেন নাকি আপনারা? মুসা জিজ্ঞেস করল ভয়ে ভয়ে। কণ্ঠস্বর অমন কেন? কেমন যান্ত্রিক। সিনেমায় দেখা রোবটগুলোর মত।
না, আমরা ভিনগ্রহবাসী নই, এই পৃথিবীরই মানুষ। তোমাদের কথাবার্তাই তো বরং আমাদের কাছে বিশ্রী লাগছে। কেমন আদিম আদিম। তোমাদের শোধরাতে সময় লাগবে। তবে শোধরাতে পারব। একবার আমাদের ঘাঁটিতে নিয়ে নিই। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
লোকগুলো রসিকতা করছে না, বুঝতে পারল কিশোর। পালানোর তাগিদ অনুভব করল।
আচমকা নড়ে উঠল সে। রবিনের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে চিৎকার করে বলল, মুসা, পালাও।
তিনজন তিন দিকে দৌড় মারল ওরা। প্রাণপণে ছুটতে লাগল।
কিছুদূর এসে পেছনে পায়ের শব্দ না শুনে ফিরে তাকাল মুসা।
কিশোর, ওরা আসছে না।
ফিরে তাকাল কিশোর আর রবিন।
আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে লোকগুলো। চেহারাতেও তেমন কোন ভাবান্তর নেই। রাগ, হতাশা, ক্ষোভ, কোন কিছু নেই। নির্বিকার। ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে ওরা যেন জানে কোনমতেই পালাতে পারবে না তিন গোয়েন্দা। ধরা পড়বেই।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত স্থির তাকিয়ে থেকে ঘুরে দাঁড়াল আবার কিশোর। হাঁটতে শুরু করল।
কোথায় যাবে? রবিনের প্রশ্ন।
বাড়িতে।
কিন্তু লোকগুলো? রসিকতা করছিল?
না। আমাদেরকে ধরার নতুন কোন ফন্দি আঁটছে ওরা। বুঝতে পারছি না কি করবে।
.
স্যালভিজ ইয়ার্ডের পেছনের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল ওরা।
সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল মেরিচাচীকে।
গাড়ির চাবি হাতে গ্যারেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রাশেদ পাশা।
নেমে এলেন মেরিচাচী। কিশোরের সামনে দাঁড়ালেন। এত দেরি করলি কেন?
আবার দুটো লোক আমাদের ধরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল, জবাব দিল কিশোর।
কারা ওরা?
কি জানি। অদ্ভুত নাম, গাজুল আর মাজুল। বলল ওদের মনিবের জন্যে আমাদের নিয়ে যেতে চায় ওরা। গোলাম বানাবে।
চট করে রাশেদ পাশার দিকে তাকালেন মেরিচাচী। কি কাণ্ডই না শুরু হলো। যন্ত্রণা! এর একটা বিহিত করা দরকার। পুলিশে ডায়ারি করাব নাকি? কি বলো?
দেখা যাক, চিন্তিত ভঙ্গিতে গাল চুলকালেন রাশেদ পাশা। আগে স্কুলের সমস্যাটার একটা ফয়সালা করে আসি। কিশোর, তোরা ভেতরে যা। আমরা না আসা পর্যন্ত ঘর থেকে বেরোবি না। কাউকে ঢুকতে দিবি না। কারও সঙ্গে কথা বলবি না। যে-ই আসে আসুক।
পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকল তিনজনে।
চকলেটের গন্ধ আসছে।
খিদেটা চাগিয়ে উঠল মুসার। নিশ্চয় কেক বানাচ্ছিলেন আন্টি। দেখো তো, কোথায় আছে?
এই যে, এখানে, কাউন্টারের ওপাশ থেকে জবাব এল। মাথা তুলল ডন। একটা ট্রে বের করে কাউন্টারের ওপরে রাখল। তাতে ইয়া বড় এক কেক। এক টুকরো কেটে নিয়ে আয়েশ করে চিবাচ্ছে সে।
এত দৌড়াদৌড়ি ও এত পরিশ্রম গেছে যে, কিশোর আর রবিনেরও খিদে লেগেছে। কেকটা দেখে আর সহ্য হলো না। দৌড়ে গেল তিনজনেই। ঝাঁপিয়ে পড়ল কেকের ওপর।