তাই তো, বল নিয়ে ফিরে এসেছে রবিন। যতবার তিনি ভুল করছিলেন, হাত তুলছিল সে।
কিন্তু এত ভুল করতে থাকলে না তুলে কি করব? মুসা বলল। বোর্ডে লিখতে গিয়ে ম্যাসাচুসেটস বানানও তিনি ভুল লিখলেন। বলব না? কাউকে না কাউকে তো ভুলটা ধরিয়ে দিতেই হবে। টিচার বলে কি মাপ?
কিন্তু, মুসা… বলতে গেল কিশোর।
শুনল না মুসা। তার কথা বলে গেল, সিভিল ওঅর কবে শুরু হয়েছে, সালটা পর্যন্ত তিনি ভুল বললেন। শুধরে দেব না?
কিন্তু তোমার বার বার হাত তোলা দেখে কি রকম ভঙ্গি করছিল সবাই খেয়াল করেছ? রবিন বলল। ভাবখানা যেন টিচারের ভুল ধরিয়ে দিয়ে তুমি মস্ত অপরাধ করে ফেলছ। আসলেই তোমার চুপ করে থাকা উচিত ছিল। তোমার ভয়ে শেষে। পড়ানোই বাদ দিয়েছেন তিনি। এ রকম পর্যদস্ত করাটা অবশ্য ঠিক হয়নি তোমার।
কিশোর আর মুসার মুখে ঠিক হয়নি শুনতে শুনতে রাগ হয়ে গেল মুসার। এত জোরে ছুঁড়ে মারল বলটা, আবারও ধরতে পারল না রবিন। দৌড় দিল ঝোঁপের দিকে। বল খুঁজতে ঢুকে পড়ল ঝোঁপের মধ্যে। খানিক পরেই শোনা গেল তার চিৎকার, কিশোর, জলদি এসো।
কি হলো? বলে দৌড় দিল কিশোর। পেছনে ছুটল মুসা।
ওরা দুজনও ঝোপে ঢুকল।
মাটির দিকে দেখাল রবিন, দেখেছ? জুতোর ছাপ।
ঝুঁকে বসে ভালমত দেখে গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কিশোর, হু। তাজা ছাপ। অনেক বড় পা। ঘটনাটা কি? আমাদের ওপর নজর রাখছিল নাকি?
ওই দেখো, মুসা বলল, ওদিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে ছাপগুলো।
ছাপ অনুসরণ করে ঝোপ থেকে বেরিয়ে এল ওরা।
পেছনের উঠান পার হয়ে রবিনদের লিভিং রূমের জানালার কাছে এসে শেষ হয়েছে। মাটিতে গম্ভীর হয়ে বসা ছাপগুলো প্রমাণ করে ওখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছে ছাপের মালিকেরা। উঁকিঝুঁকি মেরেছে ঘরের ভেতর।
আর কোন রকম সূত্র পাওয়া গেল না।
এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর, কিন্তু আমাদের ওপর নজর রাখতে এল কে? এবং কেন?
.
১৪.
সাতদিন পর।
স্কুলে তার লকারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর। ব্যাকপ্যাকে জিনিসপত্র ভরছে। স্কুল ছুটি হয়েছে। বাড়ি যাবে।
উল্টোদিকের লকারের সামনে দাঁড়ানো রয়। হাসিমুখে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, হাই রয়, দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
মাথা ঝাঁকিয়ে দায়সারা জবাব দিল রয়, ভাল।
আমাদের বাড়ি যাবে? কম্পিউটার গেম খেলব।
মুখ বাঁকাল রয়। নাহ।
কেন? এসো না, কি হয়েছে, অনুরোধ করল কিশোর।
কাঁধ ঝাঁকাল রয়। উঁহু। তোমার সঙ্গে পারব না। একটা গেমও জিততে পারব। মগজ অতিরিক্ত খুলে গেছে তোমার, বুদ্ধি বেড়ে গেছে।
কিন্তু…
দড়াম করে লকারের দরজা বন্ধ করে দিয়ে তাড়াহুড়া করে ওখান থেকে সরে গেল রয়।
তাকে ধরতে যাবে কিনা ভাবছে কিশোর, কথা কানে এল। ঘুরে তাকিয়ে দেখে টেরি আর তার দুই দোস্ত টাকি ও কডি। ওপথ দিয়েই যাচ্ছে।
ওদের পথরোধ করল কিশোর। অনুরোধের সুরে বলল, টেরি, কেমন আছো? চলো না আমাদের বাড়িতে। খেলবে।
আঁতকে উঠল টেরি। ওরিব্বাপরে! তোমার সঙ্গে? না বাবা, দৈত্যের সঙ্গে খেলতে আমরা রাজি না। এই টাকি, চল চল!
প্রায় দৌড়ে চলে গেল টেরি আর তার দোস্তরা।
মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইল কিশোর। এতটাই বুদ্ধিমান হয়ে গেছে ওরা, অস্বাভাবিক মানুষে পরিণত হয়েছে, সবাই এখন ওদের ভয় পায়।
মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর। এ সময় সেখানে এসে হাজির মুসা আর রবিন। ওদেরও মন খারাপ। মুসার মুখ দেখে মনে হলো কেঁদে ফেলবে।
কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কেউ আমাদের সঙ্গে খেলতে রাজি হয় না, করুণ সুরে মুসা বলল।
যাকে বলি, সেই পালায়, রবিন বলল। সবাই আমাদেরকে বলে ফ্রীক।
কেউ কেউ বলে জিন-ভূতের আসর হয়েছে, কেউ বলে কবরস্থানে গিয়ে প্রেতাত্মা ঢুকিয়েছি মগজে…শুনতে শুনতে আর ভাল লাগে না, মুসা বলল।
অতিরিক্ত বুদ্ধিমান হয়ে যাওয়াটাও যে এতটা বিপজ্জনক, সেটা তো জানতাম না, রবিন বলল।
বিপজ্জনক তো বটেই, প্রচণ্ড দুঃখেরও, মুসা বলল। এরচেয়ে তো বোকা থাকাটাই ভাল ছিল।
না, তা ছিল না, মাথা নাড়ল কিশোর। অস্বাভাবিক থাকাটাই বিপজ্জনক, সেটা বোকাই হোক আর বুদ্ধিমানই হোক। তিনজনেরই বুদ্ধি এখন এক রকম হয়ে গেছে আমাদের। কারও চেয়ে কেউ কম নই, তাই নিজেরাও আর আগের মত খেলতে পারছি না। কি যে করব বুঝতে পারছি না।
বুদ্ধি দিল রবিন, চলো, আবার আঙ্কেল জ্যাকের কাছে যাই। তাকে গিয়ে বলি, আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধিটা ফিরিয়ে দেয়ার কোন ব্যবস্থা করতে পারেন কিনা।
পারলে তো ভালই হতো… চিন্তিত ভঙ্গিতে ব্যাকপ্যাক পিঠে ফেলল কিশোর।
হলরূম ধরে এক সারিতে এগিয়ে চলল ওরা।
আগে আগে চলছে রবিন।
সামনে দুটো ছায়া পড়েছে হলরুমের মেঝেতে।
ধাক্কা লাগবে ভেবে আচমকা দাঁড়িয়ে গেল রবিন।
তার পিঠের ওপর এসে পড়ল মুসা। কি হলো?
নীরবে হাত তুলে দেখাল রবিন।
একপাশ থেকে বেরিয়ে এল ছায়া দুটো।
বাবা! মা! তোমরা? অবাক হলো রবিন।
ওদের দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন মিস্টার ও মিসেস মিলফোর্ড। গম্ভীর থমথমে চেহারা।
পেটের মধ্যে খামচি দিয়ে ধরার মত অনুভূতি হলো রবিনের। কিছু ঘটেনি তো? জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে, মা?
জবাবটা তোমরাই ভাল দিতে পারবে, এক এক করে রবিন, মুসা, ও কিশোরের ওপর দৃষ্টি ঘুরে. এল মিস্টার মিলফোর্ডের। রবিনের ওপর এসে স্থির হলো আবার। মিস্টার ক্রেগ আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন। মুসার মা-বাবা আর কিশোরের চাচা-চাচীকেও ডেকেছেন।