নাহ, শুকনো কণ্ঠে জবাব দিল মুসা। কালকে অংক পরীক্ষা। পড়তে হবে।
পরীক্ষা দিয়ে আর কি করবে। ফেল করবে জানা কথা। তারচেয়ে এসো, ডার্ট খেলা যাক..
ধৈর্য হারাল কিশোর। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল, তুমি যাবে এখান থেকে।
চমকাল না ডন। স্নায়ুর জোর সাংঘাতিক। ভুরু কুঁচকে কিশোরের দিকে তাকাল, কি হয়েছে তোমার, কিশোরভাই? অমন করছ কেন?
জবাব দিল না কিশোর।
কিন্তু তার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বোধহয় বুঝতে পারল ডন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। আর কিছু না বলে চলে গেল সে।
১১.
পরদিন স্কুলে অংক পরীক্ষার পর কিশোর আর রবিনের কাছে এসে দাঁড়াল মুসা। পরীক্ষাটা কিন্তু খারাপ হয়নি, যাই বলো।
কাঁধ ঝাঁকাল কিশোর। সবগুলো প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছি আমি। এটাকে শুভলক্ষণই বলতে পারো।
আমার অবশ্য কিছু কিছু জায়গায় ভাবতে হয়েছে, রবিন বলল। তিন নম্বর সমীকরণটা তো রীতিমত ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল। তবে সমাধান করে ফেলেছি। ঠিক হলো কিনা বোঝা যাবে মিস্টার ক্রেগের দেখার পর।
তবে কেন যেন মনে হচ্ছে, কিশোর বলল, এবার পাস করে ফেলব। যদিও শিওর হতে পারছি না।
ওদের পেছনে রয়ের সঙ্গে কথা বলতে শুনল শারিয়াকে। একেবারেই সহজ।
পানির মত, রয় জবাব দিল।
অকারণেই জোরে জোরে হাসতে লাগল দুজনে।
তিন গোয়েন্দাকে ব্যঙ্গ করল কিনা ওরা বোঝা গেল না। কিন্তু রাগ হতে থাকল মুসার। শুঁটকির চেয়ে কোন অংশেই ভাল না এই ছেলেমেয়ে দুটোও। এখন ওদের সময় খারাপ, তাই কিছু বলল না।
আরও কঠিন অংক দিতে পারেন না, স্যার? ডেকে বলল রয়।
দেখা যাক, পরের বার, জবাব দিলেন মিস্টার ক্রেগ।
কিশোর, হেসে জিজ্ঞেস করল রয়, তোমাদের কেমন হলো?
আশা করি তোমাদের চেয়ে ভাল হবে, গম্ভীর স্বরে জবাব দিল কিশোর।
বিশ্বাস করল না রয় কিংবা শারিয়া। হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল দুজনে।
.
পরীক্ষার ফল জানাব এখন, পরদিন বিকেলে ঘোষণা করলেন মিস্টার ক্রেগ।
ডেস্কের সারির মাঝখান দিয়ে হেঁটে হেঁটে খাতাগুলো বিতরণ করতে লাগলেন তিনি।
সব মিলিয়ে খুশিই হয়েছি আমি, মিস্টার ক্রেগ বললেন। কঠিন প্রশ্ন করেছিলাম। মোটামুটি সবাই ভাল করেছ তোমরা।
রয়ের টেবিলের সামনে দাঁড়ালেন তিনি। ভাল করেছ, রয়।
কিশোর ভাবছে, আমি কেমন করলাম? ডেস্কের ওপর দুই হাত রাখা। খুলছে আর মুঠোবদ্ধ হচ্ছে আঙুলগুলো। পাস করেছি তো? শুধু পাস করলেই আমি খুশি।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মুসা আর রবিনের দিকে। পেছনের সারিতে পাশাপাশি বসেছে ওরা। মুসার কোন ভাবান্তর নেই। লেখাপড়ায় খুব ভাল সে কোনকালেই ছিল না। এখন আরও খারাপ হয়েছে। কিন্তু কিশোর আর রবিনের জন্যে ব্যাপারটা ভীষণ দুঃখজনক। বুদ্ধিমান বলে যারা চিরকাল সবার ঈর্ষার কারণ হতো, আজ তারাই অন্যের করুণার পাত্র। কেন এমন হয়ে গেল, সেটা একটা বিরাট রহস্য কিশোরের কাছে। কিন্তু এতই বোকা হয়ে পড়েছে সে, রহস্যটা উদঘাটনের কথাও ভাবছে না। আর ভেবেও লাভ হবে না। ক্ষমতাই নেই।
অস্বস্তি ভরা চোখে কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। কথা বলল না।
খোদা, মনে মনে প্রার্থনা করল কিশোর, কোনমতে যেন পাস করে যাই। ফেল করার লজ্জা আর সহ্য করতে পারছি না। খোদা! খোদা! প্লীজ।
খাতা দেয়া শেষ করলেন মিস্টার ক্রেগ। ডেস্কে ফিরে গেলেন।
স্যার, আমার খাতাটা? কম্পিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ফিরে তাকালেন মিস্টার ক্রেগ। হাসলেন। হ্যাঁ, তোমাদেরটা বাকি আছে। মুসা আর রবিনেরটাও দেব না। ছুটির পরে আমার সঙ্গে দেখা করবে তোমরা তিনজনে।
সর্বনাশ! একেবারে দমে গেল কিশোর।
নিশ্চয় খারাপ সংবাদ! খুব খারাপ।
ছুটির পর ছেলেমেয়েদের বেরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলেন মিস্টার ক্রেগ।
সবাই বেরিয়ে গেল। কিশোর, মুসা আর রবিন বাদে।
ওদের খাতা তিনটে বের করলেন মিস্টার ক্রেগ। শক্ত করে ধরে রেখে তাকালেন ওদের দিকে। তীক্ষ্ণ কুটি করলেন। ভাজ পড়ল কপালে।
তোমাদের জন্যে দুঃখ হচ্ছে আমার, সত্যি, মোলায়েম কণ্ঠে বললেন তিনি। বড় বেশি হতাশ করলে তোমরা আমাকে।
.
১২.
দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর।
চোখ নামাল রবিন। মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল।
তারমানে…তারমানে আবার ফেল করলাম। বিড়বিড় করল মুসা।
জবাব দিলেন না মিস্টার ক্রেগ। লম্বা লম্বা পায়ে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ালেন তিনি। তাকিয়ে রইলেন মেঘে ঢাকা ধূসর আকাশের দিকে।
দোষটা বোধহয় আমারই ছিল, ওদের দিকে পেছন দিয়ে রেখেছেন তিনি। ভাল করার জন্যে অনবরত চাপ দিয়ে যাচ্ছিলাম তোমাদের ওপর। মরিয়া হয়ে তাই এ কাজটা করে বসলে।
আচমকা ঝটকা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন ওদের দিকে। কিন্তু কল্পনাই করতে পারিনি এ ভাবে আমাকে ঠকাবে তোমরা। নকল করে লিখবে।
নকল। বুঝতে পারল না কিশোর।
হাঁ হয়ে গেছে রবিন।
মুসা তাকিয়ে আছে চোখ বড় বড় করে।
তিনজনেই ভাল করেছ তোমরা, মিস্টার ক্রেগ বললেন। খুব ভাল। প্রতিটি অংকের সমাধান করেছ। একটা অংকও ভুল হয়নি। কি প্রমাণ হয় এতে? দেখে দেখে লিখেছ। তিনটে খাতা তুলে নিয়ে ওদের দিকে ছুঁড়ে দিলেন তিনি। কেন করলে এ কাজ? আমাকে খুশি করার জন্যে নকল ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না?
কিন্তু…আমরা তো নকল করিনি। কিশোর বলল।
খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করেছি আমরা, রবিন বলল। আর কিছুই করিনি।