ইউ এফ ও থেকে নামল একজন ভিনগ্রহবাসী। অবিকল মানুষের মতই দেখতে। তবে খুব লম্বা। চোখ দুটো কেবল অস্বাভাবিক। লাল অঙারের মত জ্বলছে ধকধক করে। রূপালী রঙের পোশাক পরনে। হাতে ছোট একটা জিনিস। কোন ধরনের
অস্ত্র। এ কথা বলে উঠল লোকটা। ভারী কণ্ঠস্বর। একেবারে যান্ত্রিক। সিনে রি রোবটেরা ওরকম করে কথা বলে। মুসা, রবিন আর জিনা ক মহাকাশযানে তোলার হুকুম দিল।
ওদেরকে কি প্রয়োজন এই ভিনগ্রবাসীগুলোর? কি করবে নিয়ে গিয়ে?
প্রায় কোন রকম বাধাই দিতে পারল না তিন গোয়েন্দা। মহাকাশযানে তোলা হলো ওদের।
অন্ধকার ছায়ার দিকে তাকিয়ে বলল নেতা গোছের লোকটা, রিটা গোল্ডবার্গ, বেরিয়ে এসো। নইলে তোমার বন্ধুদের খুন করা হবে।
মোটা থামের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে রিটা। ওখান থেকেই জবাব দিল, কি করে বুঝব, আমি বেরোলে আমাকে সহ খুন করবেন না?
ঝটকা দিয়ে তার দিকে ঘুরে গেল নেতার মুখ।
চট করে সরে গেল রিটা। ময়লা ফেলার একটা ধাতব ড্রামের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।
কাল আমাদের ওপর বসের নির্দেশ আছে, তোমাদের জ্যান্ত ধরে নিয়ে যেতে হবে, জবাব দিল নেতা, যদি সম্ভব হয়। বেশি জ্বালাতন করলে শেষ করে দিতে বলা হয়েছে। এখন ভেবে দেখো, কোনটা তোমার পছন্দ। লাশগুলো নিয়ে গেলেও চলবে। তিনটে তাজা লাশ পেলে কম খুশি হবেন না বস।
ঢোক গিলল রিটা। চিন্তা করল এক মুহূর্ত। তারপর দুই হাত মাথার ওপর তুলে বেরিয়ে এল। এই যে, আমি এসেছি।
বুদ্ধিমতী মেয়ে! একঘেয়ে কণ্ঠস্বর লোকটার। পুরোই রোবটের মত আচরণ। খুব চালাক। বন্ধুদের জীবন বাঁচালে।
লোকটার চোখে চোখে তাকাল রিটা। ওর চেয়ে অনেক লম্বা। পারবে ওর সঙ্গে?
পারতেই হবে!
চোখ বুজল রিটা। ভয় নেই মনে।
শক্তি কেন্দ্রীভূত করছে।
বেজে উঠল সাইরেন। পুলিশের গাড়ির। ময়লা ফেলার পিপাটার কাছ থেকে বেরিয়ে এসে ফুড কোর্টটাকে ঘিরে ফেলল ডজনখানেক গাড়ি তীব্র গতিতে ছোটাছুটি শুরু করল মেঝেতে। প্রচুর বিদ্যুৎ হজম করেছে রিটা। সেই শক্তি প্রয়োগ করে চালাচ্ছে। খেলনাগুলোকে।
পায়ের কাছে রকেট-গতিতে ছোটাছুটি করতে থাকা। খেলনাগুলো রিটার প্রতি মনোযোগ নষ্ট করে দিল নেতার। এই সুযোগে পিপার আড়ালে চলে এল আবার রিটা। রাইফেলটা হাতে নিয়ে বেরোল।
খবরদার! গর্জে উঠল সে। নেতার দিকে তাক করে ধরেছে খেলনা অস্ত্র। নড়লেই গুলি করব!
দ্বিধায় পড়ে গেল নেতা। অস্ত্রটার দিকে তাকিয়ে আছে। খেলনা। ওটা তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।
ট্রিগার টেনে দিল রিটা।
পিচকারির মত তীব্র গতিতে ছুটে গেল রূপালী পানির সরু একটা ধারা। ভিজিয়ে দিল নেতাকে। মুখের ভেতর থেকে থুথু করে পানি ফেলল নেতা। বোকা মেয়ে! তুমি ভেবেছ সিনেমার রোবটগুলোর মত পানি দিয়ে আমাকে গুলিয়ে ফেলবে!
গা বেয়ে পানি পড়ে লোকটার পায়ের কাছে জমা হলো। পায়ের কাছ থেকে পানির একটা রেখা মেঝে বেয়ে রিটার কাছে এসে থেমেছে।
গলাব কেন? জবাব দিল রিটা। কাবাব বানাব।
হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল সে। পানির রেখার মাথাটার ওপর দৃষ্টি স্থির করল। ছিটকে বেরোতে শুরু করল গোলাপী ফুলিঙ্গ। পানি বেয়ে ভয়ঙ্কর ভোল্টের বিদ্যুৎ তীব্র গতিতে ধেয়ে গেল লোকটার দিকে। চোখের পলকে গিলে ফেলল তাকে গোলাপী বিদ্যুতের জাল। মাটিতে পড়ে জবাই করা ছাগলের মত ছটফট শুরু করল সে। তারপর নিথর হয়ে গেল।
চেঁচামেচি শুনে বেরিয়ে এল চার গার্ড। মই বেয়ে দ্রুত নেমে এল নিচে। নেতার দেহটা দেখল।
কে এগোবে এরপর? হুমকি দিয়ে বলল রিটা।
এক মুহূর্ত থমকাল ওরা। তারপর এগিয়ে এসে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করল ওকে।
ওদেরকে কাছে আসার সুযোগ দিল রিটা। হাসি হাসি কণ্ঠে বলল, জো-জো খেলবে? লাফ দিয়ে তার হাতে বেরিয়ে এল একটা লম্বা ধাতব স্প্রিঙের মত খেলনা। মাথার ওপর ঘোরাতে শুরু করল। গোলাপী আলোর চক্র তৈরি করল স্পিংটা।
ভয়াবহ বিদ্যুতের ছোঁয়ায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ল চার ভিনগ্রহবাসী গার্ড।
একটা সেকেন্ডও আর দেরি করল না রিটা। পাঁচ-পাঁচটা দানবকে ধরাশায়ী করে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে তার। ওরা জ্ঞান ফিরে পাওয়ার আগেই মই বেয়ে উঠে এসে ঢুকে পড়ল ইট এফ ও-র ভিতরে।
*
মহাকাশযানের ভেতরটা আহামরি কিছু নয়। আধুনিক যাত্রীবাহী জেট প্লেনের পাইলটের কেবিনে যে ধরনের কন্ট্রোল প্যানেল থাকে প্রায় সেই রকম। কেবল ছাতটা অন্য রকম। ঝলমলে সাদা আলোকিত গম্বুজের মত।
হ্যাচটা লাগিয়ে দিল সে। দেয়ালে সুইচ রয়েছে। নিচে লেখা: হ্যাচ। সুইচটা অফ করে দিতেই লেগে গেল হ্যাচ।
ঘুরে তাকাতেই একধারে মুসা, রবিন আর জিনাকে দেখতে পেল সে। দাঁড়িয়ে আছে ওরা। কিংবা বলা যায় দাঁড়ানো অবস্থায় আটকে রাখা হয়েছে ওদের। মেঝে থেকে ছাত পর্যন্ত লম্বা, পরিষ্কার হালকা হলুদ রঙের প্লাস্টিকের মোটা টিউব খাড়া করে রাখা। তাতে ভরে রাখা হয়েছে তিনজনকে। কেমন আচ্ছন্নের মত হয়ে আছে ওরা। ল্যাবরেটরিতে মৃত প্রাণীকে যেমন করে তরল ওষুধের মধ্যে ভরে রাখা হয়, অনেকটা তেমনিভাবে। তফাৎ কেবল, ওরা জ্যান্ত।
কন্ট্রোল প্যানেলের দিকে তাকাল রিটা। আশ্চর্য আরেকটা ক্ষমতা অনুভব করছে নিজের মধ্যে। প্যানেলটা যেন তার বহু পরিচিত। কোন সুইচটা টিপলে কি হবে, প্রায় সবই বুঝতে পারছে।