ঠিক, মুসাও একমত। অন্ধকারে সানগ্লাস পরে আছে কেন নাহলে?
তারমানে ওদের চোখে পড়া চলবে না, উদ্বিগ্ন, শোনাল রবিনের কণ্ঠ। পালাতে হবে। সরে যেতে হবে কোনদিকে।
কিন্তু ভেতরে তো অন্ধকার, রিটা বলল। দেখতে পাব না কিছু। তা ছাড়া আরও গার্ড থাকতে পারে। ব্লাউজ চুরি করেছি ভেবে আমাকে সেদিন যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের কেউ থাকলে মহা মুশকিলে ফেলে দেবে।
তাহলে! চিন্তায় পড়ে গেল রবিন। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে সামনের লোকগুলো। ছোট হয়ে। আসছে সারি।
হঠাৎ একজন গার্ড আলো ফেলল ওদের দিকে। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত স্থির হয়ে রইল আলোটা। সঙ্গীদের কিছু বলল বোধহয় লোকটা। একসঙ্গে চারটে আলো এসে পড়ল ওদের মুখে।
আর কোন উপায় নেই। চিৎকার করে উঠল ররিন, পালাও!
.
১৭.
গেট ছেড়ে দৌড় দিল চার গার্ড। তাড়া করল ওদের।
ছুটতে ছুটতে রিটা বলল, ছোটাছুটি করে লাভ হবে না। পালাতে পারব না। ওদের ক্ষমতা অসীম। আমরা আছি, জেনে গেছে। না ধরে আর ছাড়বে না।
মলের মেইন গেট লাগানোর শব্দ শোনা গেল।
ওই যে, মুসা বলল, গেট লাগিয়ে দিচ্ছে। খাঁচার মধ্যে আটকে ফেলে ধরবে আমাদের।
ছুটতে থাকো, রবিন বলল। থেমো না।
কিন্তু এ ভাবে দৌড়ে কিছু হবে না তো, জিনা বলল। একটা বুদ্ধি বের করা দরকার আমাদের।
সামনে আরেকটা বড় দরজা। ওটার অন্যপাশে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াল রিটা। খেলনা ঘোড়াটার ব্যাটারি থেকে যেটুকু শক্তি সঞ্চয় করেছিল, সেটা ব্যবহার করে লাগিয়ে দিল। ইলেকট্রনিক দরজাটা। গার্ড আর ওদের মাঝে ভারী একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলো।
বন্ধুদের দিকে ফিরে তাকাল রিটা। এটা দিয়েও ঠেকানো যাবে না ওদের। দুমিনিট। বড় জোর তিন।
মাঝেসাঝেই মলে কেনাকাটা করতে আসে জিনা। তার দিকে–তাকাল রবিন। জিনা, পেছন দিকে বেরোনোর দরজা-টরজা আছে, বলতে পারবে?
এ তলায়? উঁহু, জবাব দিল জিনা। এসকেলেটরটা রয়েছে। মেইন গেটের দিকে।
না, ওদিকে যাওয়া যাবে না। রিকি হয়ে যাবে।
রিটাও বহুবার এসেছে এই মলে। জিনার চেয়ে কম চেনে না। বরং বেশিই চেনে। কোথায় কোথায়, কি আছে মনে করার চেষ্টা করল। পেছন দিয়ে বেরোনোর পথ নেই। তবে একটা বিকল্প আছে! প্রায় চিৎকার করে উঠল সে, শূ এলিভেটর।
কি? বুঝতে পারল না মুসা।
অনেকটা ডাম্বওয়েইটারের মত কাজ করে ওটা, জবাব দিল রিটা। জুতো বয়ে আনে।
শুধু কিছু জুতো বওয়ানোর জন্যে একটা এলিভেটর বানিয়ে ফেলেছে ওরা? অবাক না হয়ে পারল না রবিন।
হ্যাঁ, বানিয়েছে। তবে কিছু জুতো নয়, অনেক, রিটা বলল। যে জুতোটা তোমার পছন্দ, জানাবে সেলসম্যানকে, মিনিটের মধ্যে ওই মিনিএলিভেটরে করে এসে হাজির হবে তোমার
ভাল বুদ্ধি করেছে, প্রশংসা করল রবিন।
জুতো কিনতে আসিনি আমরা, মনে করিয়ে দিল মুসা। কাজেই এলিভেটরের প্রশংসা না করে ওটা দিয়ে কাজটা কি হবে সেটা জানতে পারলে ভাল হয়।
রিটার কথা বুঝে গেছে রবিন। তুড়ি বাজিয়ে বলল, ঠিক! রিটা, ঠিক! তোমার বুদ্ধি আছে!
নাহ্, নেতৃত্ব পেলেই এরা সবাই কিশোর পাশা হয়ে যায়! তিক্তকণ্ঠে বলল মুসা। দুর্বোধ্য কথাবার্তা! মূল্যবান সময় নষ্ট না করে বলেই ফেলো না ছাই কি বলতে চাও।
বুঝতে পারছ না? জুতো বয়ে আনে, তারমানে ওটার সার্বক্ষণিক অবস্থান হলো স্টোরের মধ্যে। যে তলায় স্টোর আছে সেই তলায় রাখা হয় ওটা। রিটাকে জিজ্ঞেস করল রবিন, রিটা, আমাদের ভার বইতে পারবে ওটা?
জিনাও দেখেছে এলিভেটরটা। জুতো বয়ে আনার জিনিস, মানুষের ভার বইতে পারবে না। তবে ওটা খুলে নিয়ে শ্যাফটটা ব্যবহার করতে পারব আমরা।
জলদি এসো! ছোটার গতি বাড়িয়ে দিল রবিন।
এলিভেটরটা খুঁজে পাওয়া কঠিন হলো না। ছোট বাক্সমত কারটা খোলার চেষ্টা করে দেখল সে। খুলল না। অত সহজ হবে না খোলা।
সবাই মিলে চেষ্টা করতে লাগল। খুলল অবশেষে।
খুলে ওটা নামিয়ে রাখল ওরা, এই সময় বিকট শব্দ হলো। পেছনে। কোন কিছু ভেঙে পড়েছে। ফুটখানেক পুরু, পনেরো ফুট উঁচু ভারী দরজাটাই হবে।
গেল লাখ লাখ ডলারের দরজাটা, মুসা বলল।
ভাঙল কি করে! জিনা অবাক।
ওরা মানুষ নয়, আগেই তো বলেছি, রিটা বলল। ওদের ক্ষমতা অসীম।
সামনের এলিভেটরের শ্যাফটটার দিকে তাকাল সবাই। চৌকোনা লম্বা একটা গর্ত। চওড়া খুব বেশি না। তবে একবারে একজন করে ঢুকতে পারবে।
গার্ডদের ছুটন্ত পায়ের শব্দ কানে এল।
আগে আমি যাচ্ছি, মুসা বলল। দোখ, নিরাপদ কিনা।
কে আগে যাবে সেটা নিয়ে তর্ক করার সময় নেই। নিচে নেমে আমাদের জন্যে অপেক্ষা কোরো না, রবিন বলল। দৌড়াতে শুরু করবে। ভাগাভাগি হয়ে একেকজন একেকদিকে চলে যাওয়াটাই ভাল। সবাইকে একসঙ্গে ধরা পড়তে হবে না।
আইডিয়াটা খারাপ লাগল না রিটার। কিন্তু অন্ধকারে একা হয়ে যাওয়ার কথাটা ভাবতেও ভাল লাগল না।
*
শ্যাফট বেয়ে নেমে চলেছে রিটা। দুই হাতের তালু দুই দেয়ালে এমন শক্ত করে চেপে রেখেছে যাতে পড়ে না যায়। কোন কারণে হাতের চাপ ঢিল হলেই বিশ ফুট নিচের কংক্রীটের মেঝেতে গিয়ে পড়তে হবে।
স্টোররুমে নেমে এল সে। সবাই ওর আগে নেমে গেছে। ওপরে প্রচণ্ড শব্দ। ভাঙচুর করছে গার্ডেরা। শ্যাফটটা ওদের নজরে পড়তে দেরি হবে না। পড়লেই বুঝে যাবে সব।