হালো, কে, রবিন?…ও, আমাদের বাড়িতে আসছিলে?… শোনো, আসার দরকার নেই। আপতত বাড়িতেই থাকো। সেই লোকটা, অফিসার ডেরিয়াল এসে বসে আছে। আমাকে থানায় নিয়ে যেতে চায়। কিসের ফর্ম নাকি পূরণ করতে হবে। আমার সন্দেহ লাগছে। কথা বলে আসি। আবার ফোন করব তোমাকে।
ডেরিয়ালের সঙ্গে কথা বলে সন্দেহজনক তেমন কিছু বুঝতে পারল না। কিন্তু মনটা খুঁতখুঁত করতেই থাকল তার।
আবার ওপরতলায় এসে রবিনকে ফোন করল সে। বলল, আমি থানায় যাচ্ছি।
ঠিক আছে, যাও। সাবধানে থেকো। থানায় গিয়েই একটা ফোন কোরো। আমরা ফোনের পাশে রইলাম।
*
কয়েক মিনিট পর একটা পুলিশ ক্রুজারের পেছনে বসে রওনা হলো রিটা। অস্বস্তিটা কোনমতেই তাড়াতে পারল না মন থেকে। অফিসার ডেরিয়ালই ওকে পেছনে বসতে বলেছে, নিরাপত্তার খাতিরে। কেবলমাত্র পুলিশম্যানেরাই নাকি সামনে বসে।
পেছনের সীটটা বানানো হয়েছে অপরাধীদের জন্যে। দরজার হাতল নেই, জানালার বাটন বা লক নেই। ড্রাইভারের সীট থেকে পেছনের সীটটাকে আলাদা করে রেখেছে প্লাস্টিক আর ধাতুর তৈরি গ্রিল। ছোটখাট একটা হাজতের মত লাগছে রিটার কাছে।
কোন অসুবিধে হচ্ছে? রিটার অস্বস্তিটা টের পেয়েই যেন। জিজ্ঞেস করল ডেরিয়াল।
না, হচ্ছে না, অফিসার।
শুধু ডেরিয়াল বললেই চলবে। ঘুরে যেতে অনেক রাস্তা, দেখি, শর্টকাটে যাই। অনেক সময় বাঁচবে তাতে।
কোনদিক দিয়ে যাবে না যাবে, সেটা ডেরিয়ালের ইচ্ছে। রিটা আর কি বলবে। চুপ করে রইল।
মোড় নিয়ে সরু একটা নির্জন, পরিত্যক্ত রাস্তায় নামল ডেরিয়াল।
অস্বস্তিটা বাড়ল রিটার। দুই ধারে কোথাও চষা খেত, কোথাও বন। বাড়িঘরের চিহ্ন নেই।
এ পনেরো মিনিট পর যখন বন আরও ঘন হতে দেখল, আর জিজ্ঞেস না করে পারল না সে, এদিক দিয়ে কি সত্যি বেরোনো যাবে?
জবাব পেল না। হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেছে ডেরিয়াল।
আবার জিজ্ঞেস করল রিটা।
ভারী গলায় জবাব দিল ডেরিয়াল, বেরোনো যাবে, কিন্তু আমি থানায় যাব না। সন্দেহটা ঠিকই করেছ তুমি। পালাতে আর পারবে না, ডেলটা গার্ল। ধরা পড়ে গেছ।
ডেলটা গার্ল!
কেন, জানো না নাকি? তুমিও ডেলটাদের একজন। অসামান্য ক্ষমতাধর। কিন্তু আজ আর কিছু করতে পারবে না তুমি।
ডেলটাদের একজন মানে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
না পারার তো কথা নয়। মাত্র সেদিনই তো কিশোর পাশার নকল একজন ডেলটা এসেছিল। ওর নাম এজেন্ট নিমো। মিশন সাকসেসফুল না করেই চলে যেতে হয়েছে তাকে।
এখন আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
গেলেই দেখতে পাবে।
চুপ হয়ে গেল ডেরিয়াল।
বিপদটা আঁচ করতে পারল রিটা। ডানা হিউগ্রি আর কিশোর পাশার মত তাকেও হয়তো উধাও করে দেয়া হবে।
পালানোর কথা চিন্তা করতে লাগল সে। জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়া যাবে? উঁহু! এটা মিনি-হাজত এখান থেকে বেরোনো অসম্ভব। সেজন্যেই এ রকম জায়গায় তাকে বসতে দিয়েছে। ডেরিয়াল।
হঠাৎ মনে পড়ল ওদের ভলভো গাড়িটার কথা। সে-রাতে রাস্তার মাঝে রহস্যময়ভাবে ডেড হয়ে গিয়েছিল। মনে পড়ল, মার কথা। মা বলেছে যে অসামান্য ক্ষমতা রয়েছে তোর, প্রয়োজনে। সেটা প্রয়োগ করবি। কি ক্ষমতার কথা বলেছে মা, বুঝে গেছে রিটা। ব্যাটারি থেকে শক্তি শুষে নিয়ে নিজের শরীরে স্টোর করতে পারে সে। পরে সেটা ব্যবহার করে শত্রুকে নাস্তানাবুদ করে দিতে পারে। ভলভোর ব্যাটারি থেকে নিজের অজান্তে শক্তি শুষে নিয়ে সেদিন চার্জশূন্য করে দিয়েছিল বলেই থেমে গিয়েছিল ইঞ্জিন। সেই শক্তি পরে ব্যবহার করেছে ছেলেগুলোর ওপর।
হাসি ফুটল রিটার মুখে।
চোখ বন্ধ করে ধ্যানের জগতে চলে গেল সে। আশ্চর্য এক শক্তি অনুভব করতে শুরু করল শরীরে। রেডিওটা বাজতে বাজতে হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। মাঝপথে অকস্মাৎ বন্ধ হয়ে গেল ইঞ্জিন। মরে গেল যেন গাড়িটা।
ঝটকা দিয়ে ফিরে তাকাল ডেরিয়াল। গর্জে উঠল, জলদি ইঞ্জিন চালু করো!
চিৎকার শুনে চমকে চোখ মেলল রিটা।
তাড়াতাড়ি করো! আবার চিৎকার করে উঠল ডেরিয়াল। ব্যাটারির চার্জ ফিরিয়ে দাও!
রাগটা কমান, শান্তকণ্ঠে বলল রিটা। কপালের রগ ছিঁড়ে যাবে তো।
তোমাকে জ্যান্ত ধরে নিয়ে যাবার আদেশ আছে আমার ওপর, দাঁতে দাঁত চেপে বলল ডেরিয়াল, কিন্তু জখম না করার কথা বলেনি।
জানালার বাইরে তাকাল রিটা। এখনও বুনো অঞ্চলে রয়েছে। আর কোন গাড়ির চিহ্নও চোখে পড়ল না।
আপনাকে তিনটে শব্দ বলার আছে আমার।
কি?
ধরতে পারলে ধরুন! বলেই গাড়ির দরজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল রিটা। ছরছর করে গোলাপী রঙের স্ফুলিঙ্গ-বৃষ্টি শুরু হলো যেন। দপ করে জ্বলে উঠল কমলা আগুন। প্রচণ্ড শক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হলো দরজাটা। কজা, লক সব ভেঙে খুলে গিয়ে ছিটকে পড়ল বাইরে। এক লাফে গাড়ি থেকে বেরিয়ে বনের দিকে দৌড় দিল সে।
পিছু নিল ডেরিয়াল।
রিটার চেয়ে শক্তিশালী সে। দ্রুতগতি। মাথা না খাটালে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধরা পড়ে যাবে, বুঝে গেল রিটা। প্রাণপণে ছুটতে ছুটতে কি করা যায় বুদ্ধি বের করার চেষ্টা করল।
সামনে তারের বেড়া দেখা গেল। সাইনবোর্ডে লেখা:
খাবার পানি সরবরাহ কেন্দ্র।
সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।
ওই বেড়া ডিঙানো কোন ব্যাপারই না তার জন্যে।
সাইনবোর্ডের নির্দেশ অমান্য করল সে। কাঠবিড়ালীর মত বেড়া বেয়ে উঠে লাফিয়ে নামল অন্যপাশে। ফিরে তাকিয়ে দেখল, চোখ দুটো আর স্বাভাবিক মানুষের মত নেই ডেরিয়ালের। অদ্ভুত আকৃতি হয়ে গেছে। গোল গোল চাকতি। হীরার দ্যুতির মত রাগের আগুন বেরোচ্ছে যেন ও দুটো থেকে। দৌড়ে কোন লাভ হবে না, মেয়ে। পালাতে পারবে না আমার হাত থেকে। ৯৪