হ্যাঁ, মনে আছে, জবাব দিলাম। আমাকে ছুরি মারা হয়েছে!
না না, হনি, বাবা বলল, তোমার কিছু হয়নি। ছুরি ওরা মারতে পারেনি তোমাকে।
ক্লান্তিতে ভেঙে আসছে শরীর। বালিশে মাথা রাখলাম। চোখের পাতা মেলতেও কষ্ট হচ্ছে।
তোমাকে এখন প্রশ্ন করতে খারাপই লাগছে, ক্যাপ্টেন বললেন। কিন্তু তোমার স্মৃতিটা তাজা থাকতে থাকতে সব কথা জেনে নিতে চাই। বদমাশগুলোকে শায়েস্তা করতে হলে সব। জানতে হবে আমাদের।
ওই চার গুণ্ডার কথা বলছেন?
হ্যাঁ। ওরা এখন পুলিশের কজায়। শয়তানের গোড়া একেকটা। ওদের বিরুদ্ধে আগেও পুলিশের খাতায় অভিযোগ ছিল। এখন তো হাতেনাতেই ধরা পড়ল। দেখলে চিনতে পারবে?
পারব মানে? হেসে উঠলাম। ওদের চেহারা এখনই মুখস্থ বলে দিতে পারি আপনাকে।…এমনকি ছবি কোথায় পাবেন, তা-ও বলতে পারব।
ছবি!
মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলে আফসোস করতে লাগলাম। কিন্তু আর ফেরার উপায় নেই। মলের দেয়ালে অভিযুক্তদের ছবি যেখানে সাঁটানো হয়, সেখানে দেখতে পাবেন ওদের নেতার ছবি-বাকি চারটেও নিশ্চয় আছে, অত খেয়াল করিনি; আমার ছবিটার পাশে।
তোমার ছবি মানে? কথাটা ধরে বসল অফিসার ডেরিয়াল। তুমি চুরি করেছিলে নাকি?
না, করিনি!
সে অনেক কথা, প্রসঙ্গটা চাপা দেয়ার চেষ্টা করল বাবা।
বিরক্ত দৃষ্টিতে ডেরিয়ালের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন। আমার। দিকে ফিরে বললেন, আসল কথা আগে। রিটা, গুণ্ডাগুলো কিভাবে তাড়া করল তোমাকে, খুলে বলতে পারবে?
হ্যাঁ, পারব। গাড়িতে বসে ছিলাম, বললাম আমি। বাবা গিয়েছিল সার্ভিস স্টেশনে, গাড়ি ঠিক করার জন্যে মেকানিক আনতে। চারপাশ থেকে ভূতের মত এসে উদয় হলো শয়তানগুলো। গাড়িটাকে ঘিরে ফেলে জানালায় থাবা মারতে লাগল কেউ, কেউ ট্রাংকে উঠে লাফানো শুরু করল; তারপর একজন পাথর দিয়ে বাড়ি মেরে জানালার কাঁচ ভাঙল।
কোনটা?
মোটকা জুলহস্তীটা। ওর নাম নাকি রিকো।
খোঁচা দিয়ে কথা বলেছিলে?
নামটা ঠিক হয়নি বলে হেসেছিলাম।
তারমানে নাম নিয়ে ব্যঙ্গ! আনমনে বিড়বিড় করে ছোট একটা কালো পুলিশ বুকে তথ্যটা লিখে নিল ডেরিয়াল।
ডেরিয়াল, তুমি এখান থেকে যাও তো, শীতল কণ্ঠে বললেন ক্যাপ্টেন। হলে গিয়ে অপেক্ষা করো।…রিটা, জানালার কাঁচ ভাঙার পর কি করলে?
কোনমতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে ঢুকে পড়লাম বনের মধ্যে। সার্ভিস স্টেশনটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলাম। ঢাল বেয়ে উঠতে গিয়ে গড়িয়ে পড়ে গেলাম নিচে। একেবারে ওদের হাতের মুঠোয়।
তারপর? বাধা দিলে কিভাবে?
আমি আসলে বাধা দিতে পারিনি, ভয়ঙ্কর দৃশ্যটা কল্পনা করে নিজের অজান্তেই ভুরু কুঁচকে গেল আমার। ছুরি বের করে আমাকে মারতে আসছিল হিপো…মানে, রিকো, হঠাৎ বাজ পড়ল ওদের ওপর…
বাজ পড়লে তুমি রেহাই পেলে কি করে? সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করল ডেরিয়াল।
তোমাকে না এখান থেকে যেতে বললাম! ধমকে উঠলেন ক্যাপ্টেন।
দরজার দিকে এগোল ডেরিয়াল। ভঙ্গি দেখেই বোঝা গেল, যেতে ইচ্ছে করছে না।
আমার দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন, হ্যাঁ, বাজ পড়ল, তারপর?
আমি জবাব দেবার আগেই ডাক্তার বলে উঠলেন, কিন্তু তা কি করে সম্ভব? রিটা, তুমি যা-ই বলো, ওই ছেলেগুলো বজ্রপাতের শিকার নয়।
কিন্তু ডাক্তার, ক্যাপ্টেন বললেন, প্রচণ্ড ইলেকট্রিক শক খেয়েছে ওরা, এটা তো ভুল নয়?
না, ভুল নয়। তবে বজ্রপাত থেকে শক্ খায়নি ওরা। বজ্রপাত হলে জুতো, কাপড়-চোপড় পুড়ে যেত, চামড়া ঝলসে যেত। কিন্তু তেমন কোন জখমই নেই ওদের শরীরে। কাপড়ের কোন ক্ষতি হয়নি। এত কাছে থেকে রিটাও অক্ষত থাকত না।
কিন্তু আমি নিজের চোখে দেখলাম, জোর দিয়ে বললাম আমি। হঠাৎ জ্বলে উঠল লাল-সাদা বিদ্যুতের শিখা, ঘিরে ফেলল ওদের।
অন্য কোন ধরনের বজ্র নয় তো? বাবা বলল। বল্ লাইটনিং বা অন্য কিছু?
বল লাইটনিং জাতীয় কিছু বাস্তবে সত্যি আছে কিনা জানা নেই আমার, ডাক্তার বললেন। যদি থাকেও, ওই বিদ্যুতের শিকার নয় ছেলেগুলো। ওদেরকে যেটা আঘাত হেনেছে সেটা লো-অ্যাম্পিয়ারেজ কিন্তু হাই-ভোল্টেজ এনার্জি সোর্স থেকে আসা। কোন ধরনের স্টান গান হতে পারে।
স্টান গান! মানে অবশ করে দেয়া বন্দুক? বাবা বলল। তারমানে আর কেউ ছিল তখন ওই বনে, গাছের আড়ালে লুকানো…
আমার তা মনে হয় না, ক্যাপ্টেন বললেন। ওই নির্জন গভীর জঙ্গলে, অন্ধকারে, প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে অকারণে কে বসে থাকবে ট্যাজার গান নিয়ে? তারপর যেন নিজেকেই বোঝালেন, অবশ্য এ ছাড়া আর ব্যাখ্যাটাই বা কি!
আমিও ক্যাপ্টেনের সঙ্গে একমত। আমি আর ওই গুণ্ডাগুলো ছাড়া জঙ্গলে কেউ ছিল না তখন। ভেবে অবাক হলাম। বজ্রপাত হলে বিদ্যুৎ এল কোথা থেকে? আমার কিছু হলো না কেন? তবে কি… নিজের কাছেই প্রশ্নটা বেখাপ্পা লাগল আমার: আমিই কি কোনভাবে উৎপন্ন করেছি ওই বিদ্যুৎ?
স্টান গানটা তোমার কাছে ছিল না তো, রিটা? দরজার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করল ডেরিয়াল। হলে যায়নি সে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল।
হাসলাম। ডান হাতের তর্জনী তুলে পিস্তলের মত তাক করলাম তার দিকে। এই যে আমার স্টান গান।
রীতিমত চমকে গেল ডেরিয়াল। লাফ দিয়ে সরে গেল। দরজার কাছ থেকে।
আমার রসিকতায় হেসে উঠল ঘরের সবাই।
যাকগে, ওসব কথা, যুক্তিসঙ্গত কোন ব্যাখ্যা না পাওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না ক্যাপ্টেন। রিটা, বদমাশগুলোকে চিকিৎসার জন্যে স্টেট হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চিকিৎসা শেষে থানায় নেয়া হবে। যাবে দেখতে?