খচ্চরটাকে থামাল কিশোর। পকেট থেকে রুমাল বের করে। ভুরুর ওপরের ঘাম মুছল।
কাছে এসে দাঁড়াল গ্যারিবাল্ড। পেছনে ঠেলে দিল হ্যাটটা। ভূমিকার মধ্যে না গিয়ে সরাসরি বলল, কিশোর, আগেই সাবধান করা হয়েছিল তোমাকে। সাফ কথা বলো, আজকের মধ্যে টাকা দিতে পারবে কিনা?
ঢোক গিলল কিশোর। আমার কাছে মাত্র বিশ হাজার পেসো আছে। ফসল না উঠলে কোনমতেই আর একটা পয়সাও জোগাড় করতে পারব না।
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল গ্যারিবাল্ড। চোখ নামিয়ে বলল, বেশ, ওটা আমি নিয়ে যাচ্ছি। আপাতত বাড়ি থেকে আর বিদেয় করলাম না তোমাদের।
পকেট থেকে নোটগুলো বের করল কিশোর। ফেলে দিল। গ্যারিবাল্ডের ছড়ানো তালুতে। ভারী চাপ অনুভব করছে বুকের মধ্যে। কিছুই রইল না আর তার কাছে। তিনজন মানুষের কি করে চলবে! ভয়ানক দুর্ভাবনাটা জোর করে তাড়াল মাথা থেকে।
নোটগুলোর ওপর শকুনের নখের মত বাঁকা হয়ে চেপে বসল গ্যারিবাল্ডের আঙুল। হাতটা ঢুকে গেল কোটের পকেটে। ভঙ্গি দেখে প্রচণ্ড রাগ যেন দলা বেঁধে উঠে আসতে শুরু করল কিশোরের গলা বেয়ে।
তোমাদের জানোয়ারগুলো সব সুস্থ আছে? জিজ্ঞেস করল গ্যারিবাল্ড।
আছে।
ফ্রেঞ্চদের ভাগ্য অতটা ভাল নয়। গাঁয়ের সবাই অবাক। সবার গরু মরছে, তোমাদের মরে না কেন?
জানি। রাতের বেলা চোরের মত এসেছিল ওরা। সিসিকে খুন করার হুমকি দিয়ে গেছে।
এ ভাবে গরু যদি মরতেই থাকে, সিসিকে সত্যিই খুন করবে। ওরা; কেউ ঠেকাতে পারবে না।
কিন্তু সিসি কি ওদের গরু মারছে নাকি? রাগটা দমন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে কিশোরের পক্ষে। গরু মরছে রোগে। দোষটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সান্ত্বনা পেতে চাইছে হদ্দ বোকাগুলো।
হ্যাটটা টেনে সোজা করে বসাল গ্যারিবাল্ড। তোমার কথা আমি বিশ্বাস করলেও, কিশোর, গায়ের অন্য কেউ করবে না।
১০.
কিশোরের যখন এই দুর্গতি, রিটার তখন অন্য ঘটনা। রবিনদের লিভিং-রুমে ডায়েরী পড়ে সেই ঘটনার কথাই জানছে রবিন। গভীর আগ্রহে শুনছে মুসা আর জিনা।
পোশাকের দোকানটাতে নিয়ে যাওয়া হলো আমাকে-রিটা লিখেছে।
জুলন্ত চোখে আমার দিকে তাকাল ক্লডিয়া। চুরি করে পালাচ্ছিলে, তাই না? মজা টের পাবে। চোরের জন্যে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে আমাদের।
কি বলছেন? চমকে গেলাম। চোর হতে যাব কেন আমি?
চোর নও তো কি? আঙুল তুলল ক্লডিয়া। তোমার গায়ে। এখনও পরাই আছে ব্লাউজটা। নিয়ে পালাচ্ছিলে, আবার বলছ চোর নও!
ব্লাউজটার দিকে তাকালাম। ধীরে ধীরে মাথায় ঢুকল ঘটনাটা কি ঘটেছে। ব্লাউজ সহ দোকানের বাইরে ধরেছে আমাকে ওরা। না বলে জিনিস নিয়ে বেরিয়েছি। চুরিই তো। কিন্তু আসলে তো আমি চুরি করিনি। বোঝাতে গেলাম, দেখুন… বলেই চুপ হয়ে গেলাম। কি বলব? সময় পেরিয়ে অন্য সময়ে চলে গিয়েছিলাম! বিশ্বাস করবে?
চুপ হয়ে গেলে কেন? ধমকে উঠল ক্লডিয়া।
দেখুন, জিনিসটা কিনতেই তো চেয়েছিলাম আমি, জবাব দিলাম। নাহয় বাইরে থেকেই ধরে আনা হয়েছে আমাকে। তাতে কি হয়েছে? দাম দিয়ে দিচ্ছি। জিনিসটা আমার হয়ে গেল। ব্যস, ঝামেলা খতম।
উঁহু, তা হবে না, মাথা নাড়ল ক্লডিয়া! সবাই সুযোগ পেয়ে যাবে তাহলে। পকেটে টাকা নিয়ে এসে জিনিস চুরি করবে। ধরা পড়লে বলবে, দাম দিয়ে দিচ্ছি। একটা উদাহরণ তৈরি করে রাখা দরকার। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। চুরি করার আগে যাতে দশবার ভাবে কেউ…
ভাল করে তাকিয়ে দেখুন তো, আমাকে কি চোর বলে মনে হচ্ছে?
ভদ্র চেহারার আড়ালেই চুরি করা সহজ, কঠোর জবাব দিল ক্লডিয়া। প্রহরীদের বলল, এই, সিকিউরিটি অফিসে নিয়ে যাও একে।
*
জঘন্য কথা বলল আমাকে সিকিউরিটি-ইন-চার্জ। বার বার চোর বলে অপমান করল। বাবাকে খবর দিল।
আমার বাবা একজন সম্মানিত লোক, ভাল মানুষ, যে কেউ পছন্দ করবে তাকে। জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি থেকে সাইকোলজিতে ডিগ্রি নিয়ে এখন মানসিক রোগের চিকিৎসা করেন। টাকার সমস্যা নেই। তার মেয়ে হয়ে আমি এ ধরনের অপরাধ করতেই পারি না। এ সব বলে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম ইন-চার্জকে। বুঝল তো না-ই, বরং ধমক দিল। আমার বাবার নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলল, মানুষের রোগ সারাতে যাওয়ার। আগে নিজের মেয়ের চিকিৎসা দরকার ছিল।
এত রাগ লাগল, কোন কথাই বলতে গেলাম না আর। একেবারে চুপ মেরে গেলাম। এদের সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই। বাবার আসার অপেক্ষায় রইলাম।
বাবা এল। নির্বিকার ভঙ্গিতে সিকিউরিটি-ইন-চার্জের সব কথা শুনল। কোন প্রতিবাদ করল না। আমার পক্ষে কোন সাফাই গাইতে গেল না। ইন-চার্জের কথা শেষ হলে শান্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, কি করতে চান এখন? ওর বিরুদ্ধে কেস করবেন? আমার উকিলকে ফোন করব?
না, এতটা নিচে নামব না আমরা, ইন-চার্জ বলল। অনেক কিছুই করতে পারতাম, কিন্তু আপনি সম্মানী লোক বলে ছেড়ে দিচ্ছি। পুলিশকে আর ডাকাডাকি করলাম না। বাবার দিকে চেয়ে কঠিন হাসি হাসল লোকটা। তবে, এ ধরনের কাজ করতে যাতে আর কেউ সাহস না পায়, সে-জন্যে একটা ব্যবস্থা করে রাখা দরকার।
*
আমার কয়েকটা ক্লোজআপ ছবি তুলে রেখে, বেশ কিছু সারগর্ভ উপদেশ দিয়ে বাবা সহ আমাকে বিদায় দিল সিকিউরিটি-ইন চার্জ।
ছবি তোলায় আতঙ্কিত বোধ করলাম। কি করবে? পোস্টারে আমার ছবি ছেপে চোর আখ্যায়িত করে লাগিয়ে দেবে মলের দেয়ালে দেয়ালে? অন্য দোকানদারদের সাবধান করে দেবে?