- বইয়ের নামঃ পিশাচকন্যা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প, ভূতের গল্প
পিশাচকন্যা
০১.
হঠাৎ করেই, প্রায় অলৌকিক ভাবে ক্ষমতাটা পেয়ে গেছি আমি, রিটা গোল্ডবার্গ বলল। কিভাবে পেয়েছি, জানতে চাও?
চাই, বলে মুসা আর জিনার দিকে তাকাল রবিন।
নীরবে মাথা ঝাঁকাল মুসা।
জিনা বলল, বলো।
একেবারে গোড়া থেকে?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল রবিন। আমরা অনেক চিন্তা-ভাবনা আলাপ-আলোচনা করে একমত হলাম, কিশোরের ব্যাপারে কেউ যদি কোন সূত্র দিতে পারে, সে তুমি। ওকে খুঁজে বের করতে হলে সূব তথ্য আমাদের জানা দরকার। কিছুই মিস করা চলবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তোমার এই ক্ষমতা পাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে কিশোরকে উদ্ধারের পথ।
ঠিক আছে, বসো তোমরা, বলে লিভিং-রূম থেকে উঠে চলে গেল রিটা। ফিরে এল কয়েক মিনিটের মধ্যে। বড় একটা বাঁধানো খাতা নিয়ে এসেছে হাতে করে। রবিনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, নিয়ে যাও এটা। আমার স্পেশাল ডায়েরী। পড়লে সব জানতে পারবে। আগে পড়ে নাও, তারপর কিভাবে তোমাদের সাহায্য করা যায়, আলোচনা করব। পড়ে তাড়াতাড়ি ফেরত দিও।
দেব, সাগ্রহে হাত বাড়িয়ে ডায়েরীটা নিল রবিন।
তোমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ যেন ডায়েরীটা পড়তে না। পারে, সাবধান করে দিল রিটা।
চোখেও দেখবে না কেউ, রবিন বলল। বড় খাম আছে তোমার কাছে?
আছে।
রিটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মুসা আর জিনাকে নিয়ে বাড়ি চলে এল রবিন। মা-বাবা বাড়ি নেই, কাজে বেরিয়েছেন। নিরাপদে ডায়েরী পড়তে কোন অসুবিধে হবে না।
লিভিং-রুমে ঢুকেই মুসা বলল, মেরিআন্টির একটা খবর নেয়া দরকার।
ফোন করল সে। রাশেদ পাশা ধরলেন।
কয়েক মিনিট কথা বলে রিসিভার রেখে দিয়ে ফিরে তাকাল। মুসা, আন্টি এখনও বিছানায়। আঙ্কেলের মনমেজাজও ভাল না। ব্যবসা, কাজে-কর্মে মন নেই।
থাকার কথাও নয়, জিনা বলল। কিশোরের খোঁজ না পেলে কোনদিনই আর ভাল হবেন না আন্টি…
বাধা দিয়ে রবিন বলল, কথা আর না বাড়িয়ে কাজে লেগে পড়া যাক। ডায়েরীতে কি আছে পড়ছি আমি। তোমরা কাছে এসে বসো।
ডায়েরীটা খুলল রবিন। সুন্দর হাতের লেখা রিটার। গোটা গোটা অক্ষর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পড়তে কোন অসুবিধা হয় না।
জোরে জোরে পড়তে শুরু করল সে।
*
মহিলাটাকে স্রেফ একটা ডাইনী মনে হলো আমার। তবু সাহস করে সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকালাম। আমার চেয়ে বেশ খানিকটা লম্বা। তাতে কি?-মনকে বোঝালাম। আমার বয়েস কম। ক্ষিপ্রতা বেশি। লড়াই করার জন্যে প্রস্তুত হয়েই এসেছি আমি।
কাবু ওকে করব আমি, তবে হাতাহাতি লড়াইয়ে নয়, কথার মারপ্যাঁচে।
এতদিন ধরে যা শিখে এসেছি, তাতে একটা ব্যাপার আমার কাছে পরিষ্কার, কোন কিছুতে জিততে হলে কিংবা কোন জিনিস পেতে চাইলে একাগ্রভাবে সেটা চাইতে হবে; ইচ্ছে শক্তিটাই হলো আসল।
বাজার করাটা খুব কঠিন কাজ। অন্তত আমার কাছে। রীতিমত যুদ্ধ করা মনে হয়।
চুলের গোড়ায় আঙুল চালিয়ে সাহস সঞ্চয়ের চেষ্টা করলাম। আমার সবচেয়ে সুন্দর হাসিটা তাকে উপহার দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, বিক্রির জন্যে? আগামী সপ্তায় থাকবে তো?
ডাইনী মহিলাটা একজন সেলস লেডি। নাম ক্লডিয়া। বুকে ঝোলানো নেম-ট্যাগে সোনালি অক্ষরে লেখা রয়েছে নামটা।
আমার কথায় চোখের একটা পাপড়িও কপাল না। বরং তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে মাথাটাকে পেছনে ঝটকা দিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিল।
এই একটা জিনিস একেবারেই সহ্য করতে পারি না আমি, তাচ্ছিল্য করা।
বিক্রি? উপহাসের সুরে বলল, এটা সাধারণ ব্লাউজ নয়, খুকী। তুমি চিনতে ভুল করেছ। প্যারিস, লন্ডন, মিলানের সামার কালেকশনে শো করা হয়েছিল। কিনতে হলে প্রচুর টাকা লাগবে। যদি না থাকে, আলোচনা করেও লাভ নেই। কিচ্ছা এখানেই খতম।
পিত্তি জ্বলে গেল আমার। মাঝে মাঝে ভেবে অবাক লাগে, এ ধরনের চাড়ালগুলোকে কোত্থেকে জোগাড় করে দোকান মালিকরা! দুনিয়ার আর কোথাও যেন জায়গা না পেয়ে খুঁজে খুঁজে রকি বীচে এসে হাজির হয় এরা। আজকে আমার জন্মদিন। আর আজই কিনা দেখা হলো এমন একটা জঘন্য চরিত্রের সঙ্গে।
অন্য কোনদিন হলে মহিলার এ কথা শোনার পর আর একটা সেকেন্ডও দাঁড়াতাম না। সোজা ঘুরে হাঁটা দিতাম। কিন্তু আজ আমি নিজের পয়সায় বাজার করতে আসিনি। তাতে সাহস বেড়ে গেছে।
টান দিয়ে পকেট থেকে বাবার আমেরিকান এক্সপ্রেস প্ল্যাটিনাম কার্ডটা বের করলাম। আমার প্রতি জন্মদিনে কেনাকাটা করতে পাঠানোর সময় হাতে তুলে দেয় এটা বাবা, যাতে ইচ্ছেমত খরচ করতে পারি। মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিনতে চাইলে নিশ্চয় পরা যাবে? গায়ে ফিট হলো কিনা বুঝব কি করে?
আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে মাথাটা সামান্য একটু নোয়াল মহিলা। ঝাঁকি দিতেও ইচ্ছে করছে না। যেন অতি তুচ্ছ একটা জীব আমি।
ওর সামনে থেকে সরার জন্যে বললাম, তাহলে চেঞ্জিং রামটা দেখিয়ে দিন, প্লীজ।
আমার হাতের প্লাস্টিকের কার্ডটা মনোযোগ দিয়ে দেখল ক্লডিয়া। তারপর কোন কথা না বলে ঘুরে রওনা হয়ে গেল দোকানের পেছন দিকে। কয়েক কদম গিয়ে কাঁধের ওপর দিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল, এক সেকেন্ড। আসছি।