অ্যাঁ?…হ্যাঁ। কাল সকালে দাদা-নাতি তিনজনের সঙ্গেই দেখা করতে যাব। মুসা, বাড়ি চলো এখন।
বাড়ি ফিরে আন্ট মারগারেটের কোন মেসেজ আছে কিনা দেখার জন্যে দোতলায় উঠে এল রবিন। আনসারিং মেশিনের প্লে বাটন টিপতেই শোনা গেল পুরুষকণ্ঠ: ভাবলাম, তোমাদের জানানো দরকার। জিথার জ্যাকসনের বাড়িতে রহস্যময় ভাবে আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সকাল বেলা চলে এসো। আমিও থাকব।-ডোবার কগনান।
.
০৬.
পরদিন রোববার।
সকাল সকালই জ্যাকসনের বাড়িতে পৌঁছে গেল তিন গোয়েন্দা। দেখল, ওদের আগেই পৌঁছে গেছে ডোবার। জ্যাকসন আর তার দুই নাতি রকি-জ্যাকির সঙ্গে কথা বলছে।
মূল বাড়ি, যেটাতে রয়েছে জ্যাকসনের বেইট শপ আর বসবাসের ঘর, সেটা থেকে ডজনখানেক গজ দূরে একটা জিনিসপত্র রাখার ছাউনি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পোড়া কয়লার টুকরো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। আগুনের তাপে চারপাশের বরফ গলে গেছে। বরফ গলা পানিতে মাটি ভিজে কাদা হয়ে গিয়েছিল। সেই কাদা জমে এখন কাদার বরফ।
ভ্যান থেকে নেমে গেল কিশোর। নাকে লাগল পোড়া প্লাস্টিকের ঝাঁজাল পন্ধ।
মুসা আর রবিনও নেমে এগিয়ে গেল তার পেছনে।
এই যে, তিন গোয়েন্দা, ডোবার বলল। জ্যাকি জ্যাকসন আর রকি জ্যাকসনের সঙ্গে নিশ্চয় আগেই পরিচয় হয়েছে তোমাদের?
গতকালই, জবাব দিল কিশোর। হাত মেলানো চলল। গতকালকের মত আজ আর শীতল ব্যবহার করব না জ্যাকি। ব্যাপারটা লক্ষ করল কিশোর।
কি হয়েছিল? জিজ্ঞেস করল সে।
আগুন, ডোবার জবাব দেয়ার আগেই বলে উঠল জ্যাকি।
আমার কাছে কিন্তু দুর্ঘটনার মত লাগছে না, ডোবার বলল। ওই দেখো, হাত তুলে কিশোরকে পোড়া একটা পেট্রল রাখার ক্যান দেখাল সে। ছাউনির বেড়ায় পেট্রল ঢেলে তারপর আগুন দিয়েছে।
ওরকম ক্যান আমরা বিক্রি করি না, জ্যাকি বলল।
কেউ কিছু দেখেছে? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
দাদার সঙ্গে পেছনের ঘরে বসে কথা বলছিলাম, জ্যাকি জানাল। এ সময় দেখি আগুন।
নিভানোর চেষ্টা করেছি, রকি বলল! হোস পাইপে বরফ জমে গিয়েছিল। পানি বের করতে করতে পুড়ে ছাই হয়ে গেল ঘরটা।
রাগত দৃষ্টিতে ছোট ভাইয়ের দিকে তাকাল জ্যাকি।
কি ছিল ছাউনিতে? কিশোরের প্রশ্ন।
বেশির ভাগই গরমকালে লেকে ব্যবহারের জিনিসপত্র, জবাব দিল জ্যাকি। ভেলা, বালতি, চাকার টিউব-এ ধরনের জিনিস।
কয়েকজন মাছ শিকারী গিয়ে দোকানে ঢুকল এ সময়।
এক মিনিট, বলে গোয়েন্দাদের রেখে জিনিসপত্র বিক্রি করতে চলে গেল দুই ভাই। কিশোর লক্ষ করল, বড় ভাইকে ভীষণ ভয় পায় রকি।
এই দুজনের সম্পর্কে কতটা জানেন? ডোবারকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
গতকাল যা যা বললাম। তার বেশি না।
বুড়ো জ্যাকসন এখন কোথায়?
মাছ ধরছে।
সত্যি! এত ঘটনা ঘটে গেল। ঘর, জিনিসপত্র পুড়ে নষ্ট হলো। তার কিছুই এসে গেল না?
দুই সহকারীকে নিয়ে পোড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গিয়ে দাঁড়াল কিশোর। একটা শিক পড়ে থাকতে দেখে সেটা দিয়ে পোড়া ছাই আর কয়লা ঘটতে শুরু করল। সূত্রের আশায়।
শিকটাকে তো পোড়া মনে হচ্ছে না, ডোবারের দিকে তাকাল কিলোর। কেউ ঘাটাঘাটি করে গেছে নাকি?
আমাদের ফরেনসিক বিভাগের লোকজন আর দমকল বাহিনীর কর্মীরা, ডোবার জানাল।
বুড়ো জ্যাকসন আর নাতিরা ঘাঁটেনি?
হয়তো ঘেঁটেছে। তবে জুতোর ছাপটাপ তো কিছু দেখলাম না পোড়া ছাইয়ের মাঝে। এমন পোড়া পুড়েছে, হয়তো কোন জিনিসই আর অবশিষ্ট নেই বুঝতে পেরে অকারণ কষ্ট করতে যায়নি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, অফিসার ডোবার, কিশোর বলল। খবরটা আমাদেরকে জানানোর জন্যে।
সাবধান থেকো, ডোবার বলল। চোরগুলোকে মোটেও সুবিধের মনে হচ্ছে না আমার। আগুন লাগিয়ে যারা বাড়ি পুড়িয়ে দিতে পারে, ওরা সহজ লোক নয়। আরও খারাপ কিছুও করতে পারে। জমাট লেকটার দিকে তাকাল সে। এত শান্ত। দেখে মনেই হয় না এখানে এ ধরনের কোন কিছু ঘটতে পারে!
ডোবার চলে গেল।
কিশোরের দিকে তাকাল রুবিন। এখন, কি করব?
বুড়ো জ্যাকসনের সঙ্গে কথা বলব।
খাড়া পাড় বেয়ে লেকের দিকে নামতে শুরু করল তিন গোয়েন্দা। আগে আগে চলেছে কিশোর। পানির চিহ্নও নেই। লেকের যেদিকেই তাকানো যায়, জমাট বরফ। কিনারের কাছটাতেও প্রায় ফুটখানেক পুরু। যত বরফ, আইস ফিশারম্যানদের ততই সুবিধে।
প্রচুর পরিশ্রম আর খুব যত্ন করে বানানো হয়েছে মাছ ধরার শ্যান্টিগুলো। খুপরির মত ঘরগুলোর কোন কোনটার মাথায় টেলিভিশনের অ্যান্টেনাও দেখা যাচ্ছে। আয়েশী শিকারী।
আহ্! নাক কুঁচকাল মুসা। খাবারের গন্ধ! রান্না করছে কে?
করছে, যাদের খিদে পেয়েছে, হেসে বলল রবিন।
মাংস ভাজার গন্ধ। গরম খাবার, টেলিভিশন, ঘরের মধ্যে বসে মাছ ধরা-বড় মৌজে আছে শিকারীরা, কিশোর বলল।
দেখো দেখো, কি কাণ্ড করেছে, রবিন বলল। প্রতিটি শ্যান্টির দরজায় রঙ দিয়ে বড় বড় করে নাম-ঠিকানা লেখা রয়েছে। এ সব লিখেছে কেন?
যদি হারিয়ে যায় শ্যান্টিগুলো, রসিকতা করল মুসা, চিনে যাতে বাড়ি ফিরে আসতে পারে।
বেশির ভাগ শ্যান্টির তুলনায় জ্যাকসনেরটা হোট। পুরানোও অনেক। প্রাইউডের দেয়ালের চলটা উঠে গেছে জায়গায় জায়গায়। চালায় নতুন আলকাতরা পড়েনি বহুকাল। কড়া রোদে পুড়ে শুকিয়ে সাদা সাদা হয়ে গেছে আগের আলকাতরা।
মলিন দরজাটায় থাবা দিল কিশোর। মিস্টার জ্যাকসন, আমি কিশোর পাশা।