কেউ কিছু বলার আগেই বলে উঠল পিটার, হ্যাঁ, এটাকেই বাড়ি বলে এখন আমার বাবা। কিন্তু বুড়ো জ্যাকসন যদি বাবার কথাটা মেনে নিত, তাহলে এত দরিদ্র হালে বাস করা লাগত না আমাদের। লেকের পাড়ের কোন একটা বাড়িতেই থাকতে পারতাম।
বাড়ির সামনে এনে গাড়ি রাখল মুসা। পুরানো ভলভো গাড়িটার পেছন থেকে আচমকা বেরিয়ে এলেন ক্যামোফ্লেজ জ্যাকেট পরা একজন মানুষ। হাতের শটগানটা তুলে কাঁধে ঠেকালেন। নিশানা করলেন মুসার দিকে।
.
০৫.
বাবা, কি করছ? আমরা চেঁচিয়ে উঠল পিটার।
তোমার বাবা? কিশোর জানতে চাইল।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল পিটার। মাথা গরম। পাহারা দিচ্ছিল।
এই, কি করেছিলি তুই? চিৎকার করে জানতে চাইলেন মিস্টার হিগিনস। বন্দুক নামালেন।
কিছুই করিনি।
তাহলে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল কেন?
দরজা খুলে নেমে গেল পিটার। বুড়ো জ্যাকসনের শয়তানি।
আস্তে করে দরজা খুলে নেমে এল কিশোর। রবিন আর মুসাও নামল।
জ্যাকসন! কি করেছে? জানতে চাইলেন মিস্টার হিগিনস।
ঘরে চলো না। ঘরে গিয়ে বলি, পিটার বলল। এখানে ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি কথা।
জ্যাকসনের কথা আর কি বলব, বিড়বিড় করলেন মিস্টার হিগিনস। ওর মত ঠগবাজ আর দ্বিতীয়টি দেখিনি।
আপনাদের ব্যবসার কথা সব বলেছে আমাকে পিটার, কিশোর জানাল।
পিটার আর তার বাবার পেছন পেছন ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল কিশোর। এতই জীর্ণ, দুএক জায়গায় তক্তাও নেই। সে-সব জায়গা টপকে পেরোল। রবিন আর মুসাও একই ভাবে উঠে গেল।
তোমরা ভাবছ আমিই সম্পর্কটা নষ্টের জন্যে দায়ী? শটগানটা নামিয়ে রেখে নড়বড়ে একা লাউঞ্জ চেয়ারে বসে পড়লেন মিস্টার হিগিনস। ভুলেও তা ভেবো না।
পুরানো লম্বা একটা কাউচ দেখিয়ে কিশোরদের বসতে বলল পিটার। কিন্তু কাউচের মাঝখানে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে একটা মন্তু কুকুর। এটাকে সরানোর চেষ্টা করল পিটার। নড়লও না কুকুরটা। এমনকি চোখের পাতা একবার মেলেই সেই যে বন্ধ করল, খুললও না আর।
দাঁড়িয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিল কিশোর। ঘরের চারপাশে দ্রুত একবার চোখ বোলাল। চুপচাপ তার পাশে দাঁড়িয়ে রইল মুসা আর রবিন।
মিস্টার হিগিনস, লেকের পাড়ের বাড়িগুলোতে চুরি হওয়ার কথা তো নিশ্চয় শুনেছেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
বুড়ো জ্যাকসনের কাজ, সাফ জবাব দিয়ে দিলেন মিস্টার হিগিনস।
কিন্তু তিনি চুরি করবেন কেন? টাকার তো তার অভাব নেই।
ঘোঁৎ-ঘোঁৎ করে কি বললেন মিস্টার হিগিনস, বোঝা গেল না। ছেলের দিকে তাকালেন। তোকে থানায় নিয়েছিল কেন?
জনসনের বাড়ির কাছে আমাকে ঘুরতে দেখেছিল। সত্যি বলছি বাবা, বিশ্বাস করো, আমি চুরি করিনি।
আমার জীবনটা তো ধ্বংসই করে ছেড়েছে, এবার তোর পেছনে লেগেছে। ওই শয়তানটাকে আমি শেষ করে ছাড়ব আজ। থাবা মেরে বন্দুকটা তুলে নিয়ে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন মিস্টার হিগিনস। আজ আমারই একদিন কি ওর…।
তাড়াতাড়ি তার সামনে এসে দাঁড়াল কিশোর। মিস্টার হিগিনস, প্লীজ। পুলিশ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যা করার ওরাই করবে। অকারণে বিপদে পড়তে যাবেন না।
কিন্তু তোমরা কে? এখানে কি করছ? ধমকে উঠলেন মিস্টার হিগিনস।
বাবা, ওরা আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে, পিটার বলল।
আমাদের ধারণা, জবাব দিল কিশোর, চুরিগুলো পিটার করছে না। সেটাই প্রমাণ করতে চাইছি আমরা।
তোমরা এতে নাক না গলালেই ভাল করবে, মিস্টার হিগিনস বললেন। এটা জ্যাকসন আর আমার সমস্যা।
আপনাদের সমস্যা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই। কিন্তু পিটার যে চুরিগুলোতে জড়িত নয়, এটা আমাদের প্রমাণ করতেই হবে। নইলে যে কোন সময় আবার ওকে ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ।
কিছুটা শান্ত হলেন মিস্টার হিগিনস। বেশ। করো প্রমাণ। তবে বুড়োটা যদি আমার ছেলের পেছনে আবার লাগে, ওকে আমি খুন না করে ছাড়ব না।
আর লাগতে পারবে না। আমরা লাগতে দেব না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
বসে পড়লেন আবার হিগিনস। বন্দুকটা নামিয়ে রাখলেন।
আমরা এখন যাচ্ছি। প্রয়োজন হলে আবার আসব।
রবিন আর মুসাকে নিয়ে বেরিয়ে এল কিশোর।
এগিয়ে দিতে এল পিটার। অনেক ধন্যবাদ তোমাদেরকে। আমার জন্যে অনেক কষ্ট করলে।
ও কিছু না, কিশোর বলল। সত্যি যদি ডাকাতগুলোর সঙ্গে তোমার কোন সম্পর্ক না থাকে, বুড়ো জ্যাকসন তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। চলি। আবার দেখা হবে।
গাড়িতে উঠে রবিন জিজ্ঞেস করল, কি মনে হয় তোমার?
কিশোর প্রশ্ন করল, কোন ব্যাপারে?
চুরি। মিস্টার হিগিনসের ধারণা জ্যাকসনই চোর।
আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
আমিও না। চুরি করার কোন কারণ নেই তার। টাকার প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া চুরি করে করে ঘাবড়ে দিয়ে এখানকার বাসিন্দাদের তাড়ালে আখেরে তারই লোকসান হবে। দোকানের আয় কমে যাবে। বন্ধই করে দিতে হবে হয়তো একদিন।
এঞ্জিন স্টার্ট দিল মুসা। গীয়ার দিতে দিতে বলল, কিন্তু, বুড়োর মারমুখো আচরণ দেখেছ? কাস্টোমারের সঙ্গে এই ব্যবহার করলে দ্বিতীয়বার আর তার দোকান মাড়াবে না কেউ। আমার তো ধারণা, নাতি দুটো ওকে না সামলালে এতদিনে মানুষের মার খেয়ে ভূত হয়ে যেতে হত বুড়োকে।
হুঁ, আনমনে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। নিচের ঠোঁট চেপে ধরে জোরে এক টান দিয়ে ছেড়ে দিল।
রবিন বলল, দুটো নয়, একটা। বড় নাতিটা তো বুড়োর মতই বদমেজাজী। দাদা-নাতি তিনজনের মধ্যে একমাত্র শান্ত মগজ কেবল ছোটটার। কিশোর, তুমি কিছু বলছ না?