এইমাত্র খবর পেলাম, আরেকটা বাড়িতে চোর ঢুকেছিল, জবাব দিলেন ক্যাপ্টেন। তুমি এখানে আটকা রয়েছ। এই একটা চুরি অন্তত তুমি করোনি, এটা বোঝা গেছে।
তারমানে সত্যি আমাকে যেতে দিচ্ছেন?
বললাম তো, আপাতত। পরে তোমাকে আবার দরকার হবে আমাদের। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে। এখন বাড়ি যাও। দূরে কোনখানে যাবে না। খোঁজ করলে যেন পাই। রবিনের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন। তোমরা যাবে সঙ্গে?
মাথা ঝকাল রবিন, যাব।
পিটারকে নিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এল ওরা। মুসা বসল ড্রাইভিং সীটে। রবিন তার পাশে। পিটারকে নিয়ে কিশোর বসল পেছনে।
পাইনভিউতে ফিরে চলল আবার ওরা।
রাত যতই বাড়ছে, আবহাওয়া আরও ঠাণ্ডা হচ্ছে। রাস্তা খারাপ নয়, কিন্তু বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বরফের কারণে। গাড়ি চালাতে অতিরিক্ত সাবধান থাকতে হচ্ছে মুসাকে। একটু এদিক ওদিক হলেই গিয়ে পড়বে রাস্তার পাশের খাদে।
শহর থেকে বেরিয়ে এসে পাইনভিউর রাস্তায় পড়ল গাড়ি। পিটারকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, তারপর? এই চুরির পেছনের আসল ঘটনাটা কি বলো তো?
আমি কি করে জানব? রুক্ষ স্বরে জবাব দিল পিটার।
দেখো, পিটার, ক্যাপ্টেন কিন্তু সহজে তোমাকে ছাড়বেন না। তোমার আর তোমার দুই দোস্তের ওপর দোষটা চাপানোর চেষ্টা করবেন তিনি। তোমাকে আমরা সাহায্য করতে চাইছি। আর কিছু না করো, নিজেকে বাঁচাতে অন্তত আমাদেরকে সহযোগিতা করো।
দোষ কি করে চাপাবে? গত চুরিটার সময় আমি হাজতে আটকা ছিলাম, ক্যাপ্টেন নিজের মুখে বলেছে।
এমনও তো হতে পারে তোমার দোস্তরা গিয়ে কাজটা সেরে এসেছে, তুমি যে নির্দোষ সেটা বোঝানোর জন্যে। তা ছাড়া শফারের বাড়িতে চুরি করে ঢোকার কথাটা বোকার মত স্বীকার করে ফেলে নিজের নামটাকে সন্দেহের তালিকায় লিখিয়ে দিয়ে এসেছ।
কিন্তু আমি চুরি করিনি। এ সব চুরি-ডাকাতিতে যুক্তও নই। আমার তো ধারণা, সব শয়তানির মূলে ওই বুড়ো জ্যাকসন।
সামনের প্যাসেঞ্জার সীট থেকে ঘুরে তাকাল রবিন। জনসনদের বাড়ির কাছে তোমাকেই সন্দেহজনক ভাবে ঘুরঘুর করতে দেখা গেছে। জ্যাকসনকে নয়। এর কি জবাব দেবে?
সন্দেহজনক ভাবে নয়, তীব্র প্রতিবাদ জানাল পিটার। দেখতে গিয়েছিলাম। বড় বড় বাড়িগুলো দেখতে আমার ভাল লাগে। দেখি আর ভাবি, আমিও একদিন ওরকম একটা বাড়িতে বাস করব।
ও কি বলতে চায় বুঝতে পারল রবিন। লেকের ধারের বাড়িগুলো এমনিতেই বড় বড়। আর জনসনদের বাড়িটা তো রীতিমত একটা প্রাসাদ। তাকিয়ে থাকার মতই।
ভাল সুন্দর কোন বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকাটা নিশ্চয় অপরাধ নয়? পিটার বলল, হোক না সেটা অন্যের বাড়ি।
চুরি করে বিনা অনুমতিতে কারও বাড়িতে ঢুকলে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে, জবাব দিল কিশোর। এটা আবার ভুলে যেয়ো না।
ভুলিনি। দেখো, একটা কথা বিশ্বাস করতে পারো, আমি বা আমার বন্ধুরা চোর নই। এই চুরির সঙ্গে জড়িত থাকা তো দূরের কথা।
তোমার কথা বাদ দিলাম। তোমার দোস্তরা যে জড়িত নয়, কি ভাবে প্রমাণ করবে? তোমাকে দেখতে কি থানায় গিয়েছিল ওরা? চুরিটা যখন হয়, তখন কি তোমার সামনে ছিল?
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে জবাব দিল পিটার, কাজে ব্যস্ত থাকলে যাবে কি করে?
এ সব বলে পুলিশকে বোঝাতে পারবে না।
আবার এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে পিটার বলল, দেখো, না বলে শফারদের বাড়িতে ঢুকে অপরাধ করেছি, ঠিক। তবে জিনিসপত্র চুরি করিনি। এই চুরিগুলো বুড়ো জ্যাকসনের কাজ। আমার বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে আমার ওপর দোষটা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
তোমার বাবার সঙ্গে জ্যাকসনের শত্রুতাটা কি নিয়ে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ব্যবসায় পার্টনার ছিল। বেইট শপ আর ওটার চারপাশের জমির মালিক ছিল দুজনে, সমান সমান ভাগ, তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল পিটারের কণ্ঠ। কিন্তু মার সঙ্গে বাবার ডিভোর্সের সময় বাবা বেশ বড় রকমের একটা সমস্যায় পড়ে গেল। টাকার সমস্যাও ছিল।
তারপর?
পেছন ফিরে তাকিয়ে আছে রবিন। শুনছে। গাড়ি চালানোর জন্যে পেছনে নজর দিতে পারছে না মুসা। পিচ্ছিল রাস্তায় গাড়ি চালাতে খুব সাবধান থাকতে হচ্ছে তাকে। তবু যতটা সম্ভব শোনার চেষ্টা করছে।
জ্যাকসনের কাছে টাকা ধার চাইল বাবা। কিন্তু বুড়ো একটা পয়সাও দিল না। বাবা তখন খানিকটা জমি বেচতে চাইল। বুড়ো তাতেও রাজি হলো না। টাকার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠল বাবা। নামমাত্র মূল্যে পুরোটাই ঠকিয়ে নিল তখন জ্যাকসন। ওর কাছে বিক্রি করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না বাবার। তারপর থেকেই বুড়োকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে বাবা। শত্রুতাটা বুড়োই জন্ম দিয়েছে। বাবা নয়।
এদিকেই যেন কোথায় তোমাদের বাড়িটা? শহরের একপ্রান্তে পৌঁছে জিজ্ঞেস করল রবিন।
হ্যাঁ, ডানে। ওই যে, গাছটার নিচে। হাত তুলে সবচেয়ে বড় গাছটা দেখাল পিটার।
গাছের কাছে গিয়ে গাড়ির গতি ধীর করল মুসা। পথ এত বেশি পিচ্ছিল, বাড়ির দিকে বাঁক নেয়ার সময় প্রায় শামুকের গতিতে গাড়ি চালাতে হলো তাকে।
রাস্তার ধারে কিছু ডালপালা পড়ে আছে। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে হয়তো। তার ওপাশে একটা জীর্ণ মলিন পুরানো বাড়ির সামনে তার চেয়েও পুরানো একটা গাড়ি। বাড়ির একটা জানালার কাঁচ ভেঙে গিয়েছিল। সেখানটায় হার্ডবোর্ড লাগিয়ে ফোকর বন্ধ করা হয়েছে। বড়ই করুণ দশা।