নাহ্, তেমন কিছু না, রবিন জানাল। কিশোর বলল, পুলিশ এখনও সূত্র খুঁজে বেড়াচ্ছে।
আহ্, বিরক্ত হয়ে বললেন বেলী আন্টি, ছেলেগুলোকে একটু মুক্তি দাও না। ওরা এসেছে পার্টিতে আনন্দ করতে, আর তুমি ওদের লাগিয়ে দিলে গোয়েন্দাগিরিতে।
আমি জানি, পার্টির চেয়ে গোয়েন্দাগিরিতেই বেশি মজা পায় ওরা, মরগান শ্রাঙ্কেল জবাব দিলেন।
গরম চকোলেটের মগ, প্রচুর মাখন লাগানো কেক আর তিন-চার রকমের ফলের কুঁচি মেশানো আইসক্রীমের ট্রে এনে সোফার পাশের ছোট টেবিলে রাখলেন আটি। যার যারটা তুলে নিতে বললেন তিন গোয়েন্দাকে।
বেলী আন্টি নানা ভাবে চেষ্টা করলেও চুরির আলোচনা বাদে অন্য আলোচনা। জমল না। কোন সময় যে নিজেও তিনি যোগ দিয়ে ফেলে, বলতে পারবেন না।
আচ্ছা, আন্টি, চুরি হওয়ার রাতগুলোতে অস্বাভাবিক কোন কিছু কি চোখে। পড়েছে আপনার? কিংবা কোন শব্দ? প্রশ্ন করল কিশোর।
যতবার ডাকাতি হয়েছে, পৃলিশ এসে একই এশ করেছে আমাদের। আমরাও একই জবাব দিয়েছি না, কিছুই দেখিনি, কিছু শুনিওনি, বেলী আন্টি বললেন।
তবে এটা ঠিক, মরগান আঙ্কেল বললেন, আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে আমাদের অজান্তে কোন গাড়ির যাবার উপায় নেই। শুনতে আমরা পাবই!
কেন? জানতে চাইল মুসা।
কারণ আমাদের বাড়িটা রাস্তার একেবারে ধার ঘেঁষে তৈরি। পাইনভিউ থেকে বেরোনোর সময়ও আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হবে, ঢোকার সময়ও। গাড়ির রাস্তা ওই একটাই, জবাব দিলেন মরগান আঙ্কেল।
তা ছাড়া, বেলী আন্টি বললেন, শীতকালে যানবাহন চলাচলও এখানে নেই বললেই চলে। কালেভদ্রে প্রতিবেশীদের একআধটা গাড়ি যায়-আসে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে। সব শুনতে পাই আমরা। জায়গাটা এত নীরব বলেই শান্তির জন্যে এখানে বাস করতে এসেছি।
এক মুহূর্তের নীরবতার পর আঙ্কেল জিজ্ঞেস করলেন, চুরিগুলো কি বন্ধ করতে পারবে তোমরা? কি মনে হয়?
এক মুহূর্ত চিন্তা করে জবাব দিল কিশোর, আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা তো আমরা অবশ্যই করব। দেখি কি করা যায়।
.
০৪.
থানাতেই পাওয়া গেল ক্যাপ্টেন ইউরি রিকম্যানকে। পাইনভিউ লেকের চুরির কেসটা নিয়ে ব্যস্ত। পিটার আর জ্যাকসনের দুটো সই করা লিখিত বক্তব্য রয়েছে তাঁর সামনে, টেবিলে। সেগুলো পড়ছেন।
সাড়া পেয়ে মুখ তুললেন। অ। তোমরা। বসো…কি খবর? ডোবারের তো তোমাদের সম্পর্কে খুব উঁচু ধারণা…
পিটার চুরি করেনি, কিশোর বলল।
ভুরু উঁচু করলেন ক্যাপ্টেন! কি করে বুঝলে?
গত বছর সে ছিলই না পাইনভিউতে। মিশিগানে মায়ের কাছে চলে গিয়েছিল। কিন্তু চুরি তো থেমে থাকেনি। তারমানে সে জড়িত নয়।
মাথা ঝাঁকালেন ক্যাপ্টেন! জড়িত নয় বলতে পারো না। কারণ তার দোস্তরা তো পাইনভিউতেই ছিল। সে নিজে সামনে ছিল না, এটা বলা যেতে পারে। কিন্তু জড়িত নয়, কিংবা জানে না বলাটা ভুল হবে। একটা মুহূর্ত চুপ করে থেকে তিনজনেরই মুখের দিকে তাকালেন তিনি। তা ছাড়া, সে নিজেই স্বীকার করেছে চুরি করে ঢুকেছে একটা বাড়িতে।
হতবাক হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা।
ভুরু কুচকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, মানে?
একটু আগে সে নিজের মুখে বলেছে, বন্ধুদের নিয়ে ডেভিড শফারের বাড়িতে ঢুকেছিল। দুই হপ্তা আগে চুরি হয়েছে বাড়িটাতে।
ও চুরি করেছে, এ কথা বলেছে?
না, তা বলেনি। বলেছে, সাহস দেখানোর জন্যে বাজি ধরে খালি বাড়িতে ঢুকেছিল। তবে বিনা অনুমতিতে যে ঢুকেছিল, এ কথা স্বীকার করেছে।
কথা বলা যাবে ওর সঙ্গে?
এসো। উঠে দাঁড়ালেন ক্যাপ্টেন!
তাকে অনুসরণ করে বাড়ির পেছন দিকের একটা হাজতের সামনে এসে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা।
দুহাতে মাথা চেপে ধরে একটা বাংকের ওপর বসে রয়েছে পিটার।
পিটার, দেখো কারা এসেছে, ডাক দিলেন ক্যাপ্টেন।
মুখ তুলল পিটার।
কিশোরের দিকে তাকিয়ে ক্যাপ্টেন বললেন, তোমরা কথা বলো। আমি আসছি।
শিকের ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করল পিটার, আমাকে ছাড়িয়ে নিতে এসেছ?
দেখি কি করতে পারি… জবাব দিল কিশোর। ক্যাপ্টেনকে বললাম, এক বছর তুমি ছিলে না পাইনভিউতে। কাজেই ওসময়কার চুরি-ডাকাতিগুলোতে তোমার সরাসরি জড়িত থাকা সম্ভব নয়।
তারমানে আমি নিরপরাধ, এই তো বলছ?
নিরপরাধ কিনা সে-প্রমাণ যেমন এখনও মেলেনি, চোরের সঙ্গে যোগসাজশ আছে কিনা সে-ব্যাপারেও শিওর নই, জবাব দিল কিশোর।
মানে? এগিয়ে এসে শিক ধরে দাঁড়াল পিটার।
ক্যাপ্টেন বললেন, তুমি নাকি ডেভিড শফারের বাড়িতে ঢুকেছিলে।
ও তো স্রেফ মজা করার জন্যে। ঢুকে, ফ্রিজ থেকে কিছু খাবার বের করে নিয়ে বেরিয়ে চলে এসেছি। মনে হচ্ছিল, বেশ একটা মজা হলো।
মজা!
জানি, জানি। গাধামি করেছি, বুঝতে পারছি এখন।
বড় এক গোছা চাবি নিয়ে হাজির হলেন ক্যাপ্টেন। তালাটা খুলে দিতে দিতে পিটারকে বললেন, আপাতত তোমাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তিন গোয়েন্দার দিকে কৃতজ্ঞ চোখে তাকাল পিটার, অনেক ধন্যবাদ তোমাদেরকে।
ধন্যবাদটা নিতে পারছি না আমরা, কিশোর বলল। তোমাকে ছাড়ানোর ব্যাপারে আমরা কিছুই করিনি।
গুঙিয়ে উঠল পিটার, তারমানে বাবা এসেছে।
উঁহু, জবাব দিলেন ক্যাপ্টেন। তাকে ফোন করে তোমার কথা জানালাম। ছাড়া তো দূরের কথা, সারা জীবন আটকে রাখতে বলে দিলেন।
দমে গেল পিটার। তাহলে ছেড়ে দিচ্ছেন কেন?