ভাইয়ের আচরণে বিব্রত বোধ করল রফি। হাসিটা ধরে রাখল কোনমতে। কিছু মনে কোরো না। সবার সঙ্গেই এমন ব্যবহার করে ও। আমি যাই। দোকান সামলাতে হবে। পরে কথা বলব।
ভাইয়ের পিছু পিছু রওনা হয়ে গেল ও।
আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কোন কারণ নেই। যার যার পথে চলে যেতে লাগল সবাই। নেতাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। খেলাটেলা আর জমবে না বুঝতে পেরে পিটারের দুই দোস্ত ডট আর কারনিও আর দাঁড়াল না। আচমকা স্কেইটিং করে ছুটতে শুরু করল। তাকিয়ে আছে কিশোর। মুহূর্তে জ্যাকসনের নাতিদের কাছে পৌঁছে গেল ওরা। কনুই দিয়ে গুঁতো মেরে রকিকে বরফের ওপর ফেলে দিল কারনি। ভান করল, যেন না দেখে করেছে। ডটের হকি স্টিকের মাথাটাও বেশ জোরেই লাগল জ্যাকির পিঠে।
কিশোরের কানে এল ডটের ব্যঙ্গভরা কন্ঠ, বরফের মধ্যে দেখে চলাফেরা কোরো।
হাসতে হাসতে চলে গেল পিটারের দুই দোস্ত।
ছেলে দুটোর আচরণ ভাল লাগল না তিন গোয়েন্দার।
এখানে আর করার কিছু নেই ওদেরও।
শার্লিদের বাড়িতে ফিরে চলল।
.
০৩.
দরজার কাছেই দেখা হয়ে গেল মরগান আঙ্কেলের সঙ্গে।
পুলিশকে আমিই ফোন করেছিলাম, জানালেন তিনি।
ভাল করেছেন, জবাব দিল কিশোর। নইলে খুনোখুনি হয়ে যেত।
আমিও বুঝতে পারছিলাম। যে ভাবে মারমুখো হয়ে উঠেছিল বুড়ো জ্যাকসন দূর থেকে দেখেও বেশ কেঝা যাচ্ছিলযাকগে। কেসটা হাতে নিয়েছ নাবি তোমরা?
তেমন করে হাতে এখনও নিইনি। তবে খেয়েদেয়ে জনসনের বাড়িটা একবার ঘুরে আসব। দেখি কোন সূত্র পাওয়া যায় কিনা। আন্টি, খিদে পেয়েছে। খাবার দিন।
খেতে বসে বার বার পার্টির কথা তুলে কিশোরকে নিরস্ত করার চেষ্টা করতে লাগলেন বেলী আন্টি। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারলেন না। মরগা আঙ্কেল আরও উসকে দিতে লাগলেন কিশোরের কৌতূহলটাকে। অতএব নাকেমুখে খাবারগুলো প্রায় খুঁজে দিয়ে দুই সহকারীকে নিয়ে উঠে পড়ল কিশোর। জনসনদের বাড়ি রওনা হলো।
জনসনদের বাড়িটা অনেক বড়। লেকের দিকে মুখ করা। কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে দেখা গেল সূত্র খুঁজতে। ডোবার কগনানকেও পাওয়া গেল ওখানেই।
কিছু পেলেন? জানতে চাইল কিশোর।
নাহ, মাথা নাড়ল ডোবার। জ্যাকসনের কথার ওপরই কেবল ভরসা। তবে হিগিনসদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয় তার। মিথ্যেও বলে থাকতে পারে।
সম্পর্কটা খারাপ হলো কেন? কৌতূহলী হলো কিশোর।
এক সময় পিটারের বাবা মিস্টার হিগিনস আর জ্যাকসন একসাথে ব্যবসা করেছে। এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত যা হয়, সম্পর্কটা টেকেনি।
এর বেশি আর কিছু বলতে চাইল না ডোবার। কাজেই অন্য প্রসঙ্গে গেল কিশোর, কটা বাড়িতে চুরি হয়েছে?
গত তিন বছরে প্রায় দুই ডজন।
কি কি জিনিস নিয়েছে?
বেশির ভাগই সোনা-রূপার গহনা। ঘড়ি আর ওরকম সহজে বহনযোগ্য ছোটখাট দামী দামী জিনিস যা পেয়েছে সব নিয়েছে। কোন হদিস করা যায়নি ওগুলোর। যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
বিক্রি না করে কোথাও লুকিয়ে ফেলেছে বলছেন?
হয় লুকিয়ে ফেলেছে, নয়তো অনেক দূরের কোন শহরে নিয়ে গিয়ে চোরাই বাজারে বিক্রি করেছে। রবিনের দিকে তাকাল ডোবার। আচ্ছা, পিটারকে তোমার সন্দেহ হয়?
উঁহু, মাথা নাড়ল রবিন। বদমেজাজী। তবে চোর বোধহয় নয়।
অভাবে স্বভাব নষ্ট অনেক সময় হয়ে যায়, ডোবার বলল। যাকগে, চোর নাহলেই ভাল।
বাড়িটার চারপাশে তিন গোয়েন্দাও খানিকক্ষণ খুঁজে দেখল। কিন্তু বরফে পুলিশের এত বেশি জুতোর ছাপ পড়েছে, চোরেরটা থেকে থাকলেও আলাদা করে চেনা এখন মুশকিল। কিছু পাওয়া যাবে না বুঝতে পেরে বাড়ির সীমানা থেকে বেরিয়ে চলে এল ওরা।
চলো, এখানে আর দেরি না করে শার্লিদের বাড়ি চলে যাই, রবিন বলল। পার্টিটায় যোগ দেয়া দরকার। নইলে শার্লি আর আন্টি, দুজনেই মনে কষ্ট পাবে। মরগান আঙ্কেলের কথা আলাদা। পার্টির চেয়ে চোর ধরার ব্যাপারটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন উনি।
রবিন, মুসা জিজ্ঞেস করল, সত্যিই কি তোমার মনে হয় পিটার নিরপরাধ? তার দোস্ত দুটোকে দেখে কিন্তু জ্যাকসনের ধারণাই সঠিক বলে মনে হচ্ছে আমার। পাজির পা ঝাড়া।
আর যে-ই করে থাকুক, পিটার যে নিজে চুরি করেনি এ ব্যাপারে আমি এখন মোটামুটি শিওর, জবাব দিল কিশোর।
কি করে শিওর হলে? রবিনের প্রশ্ন।
ডোবার কি বলল শোনানি? রহস্যময় এই চুরিগুলো হচ্ছে বছর তিনেক ধরে।
হ্যাঁ। তাতে কি?
তুমিই তো বলেছ গত বছর মিশিগানে চলে গিয়েছিল পিটার। তার মার কাছে এক বছর থেকে এসেছে। ও এখানে যখন ছিল না, তখনও তো চুরি হয়েছে।
হুঁ, এটা একটা শক্ত যুক্তি, মাথা দুলিয়ে বলল মুসা। তা ছাড়া নিজের এলাকায় থেকে এ ভাবে একের পর এক চুরি করার সাহস দেখাবে, এটাও অবিশ্বাস্য।
ঠিক, কিশোর বলল।
কিন্তু কথা হলো, প্রশ্ন তুলল রবিন, পিটার যদি চুরি না করে থাকে, তাহলে চোর কে?
সেটাই এখন খুঁজে বের করতে হবে আমাদের, জবাব দিল কিশোর।
শার্লিদের বাড়িতে ফিরে এল ওরা। বিশাল লিভিং রূমটায় বসে আছেন মরগান আঙ্কেল, বেলী আন্টি ও শালি। গরম চকোলেট খাচ্ছে সবাই।
কিশোরদের দেখেই জিজ্ঞেস করলেন বেলী আন্টি, আইসক্রীম খাবে?
গুঙিয়ে উঠল মুসা। ওটা তো আর গরম গরম দিতে পারবেন না।
হাসলেন বেলী আন্টি। দেখা যাক, গরম কি দেয়া যায়।
মরগান আঙ্কেল জিজ্ঞেস করলেন, কিছু পেলে?