গত তিন সপ্তাহে এই নিয়ে বারো বার আসতে হয়েছে আমাকে এখানে, ডোবার জানাল। এখন আমি চীফের অপেক্ষা করছি। এগারো বারের বার তিনি। আমাকে বলেছিলেন আবার এ রকম কিছু ঘটলে তিনি নিজে আসবেন তদন্ত করতে।
জ্যাকসনের দোকানের দিক থেকে লেকে নেমে আসতে দেখা গেল দুজন। যুবককে। জনতার ভিড়ের দিকে এগোল ওরা। বয়েস তেইশ-চব্বিশ। একজনের মাথায় সোনালি চুল, ছয় ফুট উঁচু। আরেকজনের কালো চুল, উচ্চতায় প্রথমজনের চেয়ে কয়েক ইঞ্চি খাটো।
ওই যে, জ্যাকসনের দুই নাতি, ডোবার বলল। বড়টার নাম জ্যাকি। আর ছোটটা রকি। বাবা-মা থাকে ম্যারিল্যান্ডে। ওরাও ওখানেই থাকে। বছরে কয়েকবার করে আসে দাদার দোকানদারিতে সাহায্য করতে। ওদেরকে খারাপ লাগে না আমার।
পুলিশ চীফ ক্যাপ্টেন ইউরি রিকম্যানও এসে পৌঁছলেন। বরফের ওপর দিয়ে পা পিছলাতে পিছলাতে দ্রুত তার দিকে এগিয়ে গেল ডোবার। ক্যাপ্টেনও নেমে এগিয়ে আসতে লাগলেন। মাঝপথে মিলিত হলেন দুজনে। কিছু কথা হলো। তারপর একসঙ্গে জনতার দিকে এগোলেন।
অনেকেই আছেন দেখছি, ক্যাপ্টেন বললেন। ভালই হলো। আমি আপনাদের ঝগড়া থামাতে আসিনি। সেটা পার্ক কমিশনারের দায়িত্ব। আমি এসেছি জনসনদের বাড়ির ডাকাতির তদন্ত করতে। কেউ কোন তথ্য দিতে পারবেন আমাকে?
জনতার দিকে তাকিয়ে আছে তিন গোয়েন্দা। কে কি বলে শুনতে আগ্রহী।
পারব, জবাব দিল জ্যাকসন।
অকারণে এর মধ্যে জড়াচ্ছ কেন, দাদা? চুপ করানোর চেষ্টা করল জ্যাকি।
কি চুপ করতে দিলেন না ক্যাপ্টেন। কি জানেন, বলুন?
বাড়িটার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখেছি পিটার হিগিনসকে, জ্যাকসন জানাল।.
ফেটে পড়ল পিটার। দেখো বুড়ো, সাবধান করে দিচ্ছি তোমাকে। পস্তাতে হবে এর জন্যে। হকিস্টিক তুলে শাসাতে লাগল সে। মুখ টকটকে লাল।
দেখলেন, দেখলেন, আপনার সামনেই কেমন করছে? জ্যাকসন বলল। ওকে ছেড়ে রাখলে মানুষ খুন করবে একটু আগে আমাকেই খুন করতে চেয়েছিল…
তুমি থামো, পিটার, ক্যাপ্টেন বললেন। আমি দেখছি।
পিটারের কাছে সরে গেল রবিন।
আপনি জানেন না, ক্যাপ্টেন, চেঁচিয়ে উঠল পিটার, বুড়োটা অনেক দিন থেকেই আমাকে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করছে। বাবাকে তো শেষই করে দিয়েছে। ওর মিথ্যে কথা আপনি বিশ্বাস করবেন না।
শুনি তো আগে, জ্যাকসনের দিকে ঘুরলেন ক্যাপ্টেন। পিটারকে ওখানে কখন ঘুরঘুর করতে দেখেছেন?
কাল সন্ধ্যায় দেখেছি। আজ সকালে দেখেছি। সারা সপ্তাহ ধরেই দেখছি, জ্যাকসন জানাল। দিনে, রাতে, সব সময়। শুধু ওই বাড়িটাই নয়, আরও অনেক বাড়ির সামনে ওকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি।
তাহলে আমার সঙ্গে থানায় চলুন একবার, প্লীজ। লিখিত বক্তব্য পেলে ভাল হয়।
যাচ্ছি। এগুলো জেলে ভরতে না পারলে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না কেউ।
ঘুম তোমার এমনিতেই হয় না, বুড়ো ভাম! রাগে গজগজ করতে লাগল পিটার। শুধু শুধু চোরের দোষ দিও না।
চোরতাকে এখনও অ্যারেস্ট করছেন না কেন? ঝাঁজিয়ে উঠল জ্যাকসন।
অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়লেন ক্যাপ্টেন। এ ভাবে কাউকে অ্যারেস্ট করা যায় না, মিস্তার জ্যাকসন। থানায় চলুন। আপনার বক্তব্য শুনি। পিটারকেও আমাদের সঙ্গে থানায় যেতে হবে। ওর কি বলার আছে সেটাও শুনি। সে যে চোর, প্রমান পেলে তখন অ্যারেস্ট করা যাবে।
এতগুলো লোক যে ওকে বাড়িগুলোর সামনে ঘুরঘুর করতে দেখল, সেটা প্রমাণ না?
না। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন, মিস্টার জ্যাকসন। চোর হলে ও বাঁচতে পারবে না। আর মিথ্যে বললে আপনাকেও ভুগতে হবে। সহকারী অফিসারদের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন। ওকে নিয়ে চলো।
পিটারের দিকে এগিয়ে গেল কয়েকজন অফিসার।
আচমকা এক কাণ্ড করল পিটার। রবিনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, রবিন, এখনও তুমি চুপ করে আছ! কিছু করছ না! আমি যে চোর নই, তুমি তো জানো?
অ্যারেস্ট তো করেনি তোমাকে, প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল রবিন। শুধু কয়েকটা প্রশ্ন করতে নিয়ে যাচ্ছে থানায়।
পিটারের হাত ধরে টান দিল একজন অফিসার।
রবিন, মরিয়া হয়ে বলল পিটার, রবিন, তোমাকে কি আমি সাহায্য করিনি? কিডন্যাপ হওয়া সেই ছেলেটাকে খুঁজতে গিয়ে তুমি যখন বিপদে পড়লে…
মনে আছে আমার, পিটার, শান্তকঠে বলল রবিন। চুপচাপ চলে যাও এখন ওদের সঙ্গে কোন গোলমাল বাধিয়ো না। সত্যি যদি অপরাধী না হও, তোমাকে বের করে আনার ব্যবস্থা আমরা করব।
পিটারকে গাড়ির দিকে নিয়ে চলল পুলিশ।
জ্যাকসন, আপনিও আসুন, ক্যাপ্টেন বললেন দোকান বন্ধ করে আসতে সময় লাগবে?
না। যাচ্ছি, চলুন। দোকান আমার নাতিরাই সামলাতে পারবে।
ক্যাপ্টেনের পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করল জ্যাকসন।
বুডোর দুই নাতির দিকে ঘুরল রবিন। হাত বাড়িয়ে দিল। আমি রবিন মিলফোর্ড। ডোবারের মুখে আপনাদের নাম জেনেছি। জ্যাকি আর রকি।
মুখটা গোমড়া করে রাখল জ্যাকি। রবিনের হাতটা আলতো করে ছুঁয়েই ছেড়ে দিল।
কিন্তু রকি তা করল না। রবিনের হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে বলল, আমি রকি জ্যাকসন। ও আমার বড় ভাই জাকি জ্যাকসন।
কিশোর আর মুসাকে দেখিয়ে রবিন বলল, এরা আম বন্ধু। কিশোর পাশা। ও মুসা আমান। আপনাদের মতই আমরাও বাইরের লোক। লস অ্যাঞ্জেলেসের রকি বীচ থেকে এসেছি।
অ, তাই নাকি?
কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বকবক করছ। ধমকে উঠল জ্যাকি। এসো জলদি!