রকি! জ্যাকি! বিশ্বাস করতে পারছে না জ্যাকসন। তোদের পুলিশে ধরেছে কেন?
চুরি করেছে, তাই ধরেছি, জবাবটা ডোবারই দিয়ে দিল। এ এলাকায় বেড়াতে এসে দোকানে কাজ করার ছুতোয় আপনার বাড়িতে থেকেছে। রাতে মানুষের বাড়িতে ঢুকে টুকে চুরি-ডাকাতি করেছে। লুটের মাল নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রেখেছে লেকের বরফের তলায়। গত কয়েক বছর ধরে করছে এ সব। এবারও বাদ দেয়নি।
অবিশ্বাসটা বাড়ল জ্যাকসনের। জ্যাকি, কি বলছে ওরা?
জবাব দিল না জ্যাকি। নীরবে মুখ ফিরিয়ে ঘুরে দাঁড়াল।
রকি?
বুকের ওপর ঝুলে পড়ল রকির মাথা।
এ ভাবে আমার…আমার-কান কাটলি তোরা! গাড়ির গায়ে গিয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল জ্যাকসন। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।
.
১৬.
দিন কয়েক পরে আবার একটা পার্টি দিল মরগান আঙ্কেলরা।
গাড়ি ভর্তি করে এল তিন গোয়েন্দা সহ পিটার, রয় ও শার্লির বন্ধুরা। রাস্তার শেষ মোড়টা ঘুরতে চোখে পড়ল ওদের পাইনভিউ লেকের ছবির মত দৃশ্য। কিন্তু এক প্রান্তের আইস-ফিশিং শ্যান্টিগুলোর কাছে একজন মৎস্য শিকারীকেও দেখা গেল না। অন্য প্রান্তে নেই হকি খেলোয়াড়ের দল।
মরগান আঙ্কেলদের মূস্ত লিভিং রূমটাতে ঢুকল ওরা দল বেঁধে। আরও লোককে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তারা এসে পৌঁছায়নি এখনও।
পিটারের বাবাকেও দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তিনিও এসেছেন। বুড়ো জ্যাকসনকে দাওয়াত দেয়া হবে না জেনেই এসেছেন।
ফায়ারপ্লেসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে. তিন গোয়েন্দা। ঘরে ঢুকলেন পুলিশ চীফ ক্যাপ্টেন, ইউরি রিকম্যান।
কেসটার সমাধান করে দেয়ার জন্যে পুলিশের তরফ থেকে তোমাদেরকে অনেক ধন্যবাদ, তিন গোয়েন্দাকে বললেন তিনি। হাততালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাল উপস্থিত মেহমানরা।
আপনাদেরকেও ধন্যবাদ, তিন গোয়েন্দার পক্ষ থেকে জবাব দিল কিশোর। কিন্তু আপনাদের সাহায্য ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারতাম না।
তার কথার সঙ্গে যোগ করল রবিন, আন্টি যে ভাবে জলে ডোবা মানুষগুলোকে বাঁচিয়েছেন, সেটার প্রশংসা না করেও পারছি না।
মাছ শিকারীরা সবে কথা বলা শুরু করেছে পিটার ও তার বন্ধুদের সঙ্গে, ঠিক এ সময় দরজায় দেখা দিল বুড়ো জ্যাকসন।
এক্সকিউজ মী, বিব্রত ভঙ্গিতে বলল সে। দাওয়াত ছাড়াই এসে ঢুকে পড়লাম। কারণ, জানি আজ সবাইকে এখানে একসঙ্গে পাব। আমি আমার নাতিদের হয়ে মাপ চাইতে এসেছি সবার কাছে। ভাবলেই আমার এত খারাপ লাগে…বিশ্বাস করুন, ঘুণাক্ষরেও যদি টের পেতাম, পিটিয়ে সোজা করে ফেলতাম।..
টের পাননি কি আর করা, ক্যাপ্টেন রিকম্যান বললেন। আপনার হয়ে জেলখানার চোর-বদমাশরাই এখন ওদের সিধে করুক।
ঘরের ভেতর চোখ বুলিয়ে পিটার আর তার বাবাকে দেখতে পেল জ্যাকসন। পিটারের কাছে আমি বিশেষ ভাবে মাপ চাইতে এসেছি।
জ্যাকসনের কথা শুনে গুঞ্জন উঠল মেহমানদের মধ্যে।
পিটার, বুড়ো বলল, অকারণে তোমার ওপর দোষ চাপিয়েছিলাম আমি। আমাকে মাপ করে দাও। আমি এখন বুঝতে পারছি, তুমি সত্যিই একটা ভাল ছেলে। আমি যা করেছি তোমার বিরুদ্ধে, সেটা ঠিক করিনি।
ঘরের মাঝখান দিয়ে হেঁটে গেল পিটায়। জ্যাকসনকে অবাক করে দিয়ে তার হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিল। আমি কিছু মনে করিনি, মিস্টার জ্যাকসন।
ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেলেন এরপর মিস্টার হিগিনস। জ্যাকসনের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, জ্যাকি, পরস্পরকে ঘৃণা করাটা চালিয়ে যেতেই পারি আমরা, ব্যাপারটা যত খারাপই হোক। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক খারাপের জন্যে গাঁয়ের মানুষকে ঝামেলায় ফেলাটা কি ঠিক হচ্ছে?
এরপর যা ঘটল, বিশ্বাস করতে পারল না মেহমানরা। চোখ বড় বড় করে। সবাই দেখল, হাতে হাত মেলাচ্ছেন মিস্টার হিগিনস আর বুড়ো জ্যাকসন। ঘর ভর্তি মানুষ আনন্দে হুল্লোড় করে উঠল। হাততালি দিতে লাগল।
একটা সত্যি কথা বলি এবার? হেসে বলল জ্যাকসন, বরফের ওপর হকি খেলাটা আমাদের মাছ শিকারীদের জন্যে বরং ভাল। লেকের এক প্রান্তে খেলা চললে ভড়কে গিয়ে ওদিকের সমস্ত মাছ চলে আসবে অন্য প্রান্তে আমাদের দিকে। কাজেই হকি খেলতেই পারে ছেলেরা। আপনারা কি বলেন?
হাসতে শুরু করল শৌখিন মৎস্য শিকারীর দল।
পিটার বলল, তাহলে আর মুফতে খেলতে যাচ্ছি না। খেলে দেয়ার জন্যে। আমাদের টাকা দিতে হবে।
পিটারের কাঁধে হাত রাখলেন ক্যাপ্টেন রিকম্যান। খেলার জন্যে টাকা দেবে কি দেবে না সেটা মেছুয়াদের ব্যাপার। কিন্তু আমার একটা প্রস্তাব আছে। আমি জারি গাড়ি সাংঘাতিক ভালবাসো তুমি। মেরামত করাটা তোমার নেশা। আমি তোমাকে একটা কাজ দিতে চাই। আগামী দুমাস প্রতি শনিবারে গিয়ে আমাদের থানার সবগুলো পুলিশের গাড়িকে টিউনিং করে দিয়ে আসবে!
পিটারের মুখ দেখে মনে হলো, লটারির টাকা পেয়ে গেছে। সত্যি বলছেন?
মাথা ঝাঁকালেন ক্যাপ্টেন। মুখে মৃদু হাসি।
ঘরের পরিবেশ হালকা হয়ে এল। পার্টি শুরু হলো সবাই যার যার মত কথা বলছে। গরম সাইডার আর চকলেট খাচ্ছে।
পিটার বলল, মুসা, হয়ে যাবে নাকি একটা হকি ম্যাচ। কালকেই খেলে ফেলতে পারি আমরা।
উঁহু, খেলাটেলা পরে, হাত নেড়ে মানা করে-দিল বুড়ো জ্যাকসন। আগে ওরা আইস-ফিশিং শিখবে। মুসার দিকে ভুরু নাচাল। কি বলো, মুসা আমান? আড়চোখে কিশোরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল সে। ছিপটিপের জন্যে পয়সা দিতে হবে না। কিশোর বলল, তাহলে আমি রাজি। মাথা দুলিয়ে সায় দিল রবিন। তুমি কি বলো, রবিন?