এখানেই আছে, চেঁচিয়ে উঠল সে।
হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল মুসা আর কিশোর। আগের রাতের মত হাত দিয়ে তুষার সরাতে লাগল, ডিটেক্টরটা যেখানে নির্দেশ করছে ঠিক সেই জায়গায়। বেরিয়ে পড়ল সাদা বরফ।
কুড়াল দিয়ে কোপানো শুরু করল মুসা। কঠিন বরফে আঘাত হানার শব্দ লেকের পাড়ে বাড়ি খেয়ে প্রতিধ্বনি তুলে ফিরে এল। শব্দ না করে কাটা সম্ভব না।
প্রায় এক বর্গগজ জায়গায় ইঞ্চি পাঁচেক বরফ কাটা হতেই বেরিয়ে পড়ল অনেকগুলো টিনের পাত নিয়ে গোল করে পাকানো একটা বল।
কালকের মতই তো টিনের পাত। কাল ছিল একটা। আজ অনেকগুলো।
বলটায় মাছ ধরার সুতো বাঁধা, দেখতে পাচ্ছ? কিশোর বলল। কালকেরগুলো পরিত্যক্ত জায়গা। কাজ সেরে চলে যাওয়ার সময় টিনের পাতগুলো সরানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। কল্পনাই করেনি হয়তো, এ সব জায়গায় খুঁজতে আসবে কেউ।
আইস পিক দিয়ে আঁচড়ে আঁচড়ে টিনের বলটার চারপাশের তুষার সরিয়ে ফেলল সে।
ভাল করে দেখার জন্যে মাথা বাড়িয়ে দিল রয়।
দস্তানা খুলে ফেলল কিশোর। বলটাকে শক্ত করে ধরে বরফ থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করল। উঠে আসতে শুরু করল ওটা। টান লাগল। ওটার সঙ্গে বাঁধা সুতোটায় টান পড়ল।
সুতোর চারপাশের বরফ কুপিয়ে কেটে ফেলতে শুরু করল মুসা। থেমে গেল হঠাৎ। শিসের শব্দ। দুবার খাটো। একবার দীর্ঘ।
*
জ্যাকসনের বাড়ির পেছনের ঘরের জানালায় টেলিভিশনের আলো নড়াচড়া করতে দেখছিল রবিন। হঠাৎ দেখে দুটো কালো ছায়ামূর্তি দোকানের সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসছে।
জ্যাকি আর রকি, রাতের বাতাসকে উদ্দেশ করে যেন ফিসফিসিয়ে বলল রবিন।
কি করব এখন? একই ভঙ্গিতে ফিসফিস করে জবাব দিল পিটার।
চমকে গিয়ে ফিরে তাকাল রবিন। কথামত কাজ না করায় রেগে গেল। পিটারের ওপর। তোমার এখানে কি?
একা একা ওখানে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন কি করব আমরা?
রাগটা চেপে রাখল রবিন। বলল, ওরা সরলেই সাবধান করে দিতে হবে কিশোরদের।
দৌড়ে দোকানের পেছন দিকে চলে গেল দুই ভাই। একটু পরেই ইঞ্জিনের গর্জন শোনা গেল। রবিনরা দেখল স্নোমোবাইলে চড়ে লেকের দিকে ছুটে যাচ্ছে দুজনে।
*
দ্রুত হাতে তখন ঠাণ্ডা পানি থেকে সুতোটাকে টেনে তুলছে কিশোর। কানে এল ইঞ্জিনের শব্দ।
স্নোমোবাইল, রয় বলল।
আলো নেভাও, বলে উঠল কিশোর।
দ্রুত টর্চ নিভিয়ে ফেলা হলো। তবে চাঁদের আলোতেও সাদা বরফের ওপর তাদের আকৃতি বহুদূর থেকে চোখে পড়বে।
সুতো টানা বন্ধ করল না কিশোর। আজকে জিনিসগুলো বের করেই ছাড়বে। তার আগে কিছুতেই যাবে না লেক ছেড়ে।
সুতো শেষ হলো। শেষ মাথায় বাঁধা রয়েছে একটা মোটা দড়ি। দড়ি ধরে টানতে লাগল।
কাছে চলে আসছে স্নোমোবাইলের ইঞ্জিনের শব্দ।
সরে যাওয়া দরকার, রয় বলল।
দড়িটাও শেষ হলো। মাথায় বাঁধা একটা কালো রঙের প্লাস্টিকের ব্যাগ। মুখটা খুলল কিশোর। চাঁদের আলোয় চকচক করে উঠল ভেতরের রূপালী জিনিস।
কাছে চলে এসেছে স্নোমোবাইল।
কিশোর, চলে এসো, জরুরী কণ্ঠে রয় বলল।
ব্যাগের মুখটা আবার বেঁধে ফেলতে লাগল কিশোর। তোমরা দৌড়াতে থাকো। আমি আসছি। একেকজন একেক দিকে যাও।
দৌড়ানো শুরু করল রয়। মুসা ছুটল তার পেছনে।
ইঞ্জিনের গর্জন বাড়ছে। কাপুনি টের পাওয়া যাচ্ছে বরফে।
ব্যাগের মুখ বাঁধা হয়ে গেছে কিশোরের। ওটাকে টেনে নিয়ে দৌড় দিল সে ও।
.
১৪.
ডগলাস বলেছে স্পটগুলো বিপজ্জনক। প্রমাণ পেল এখন। মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে বরফ ভাঙার শব্দ কানে এল কিশোরের।
জায়গাটা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান সোমোবাইল চালকের। কি করতে হবে জানা আছে। সোজা না এসে, অনেকখানি ঘুরে চক্কর দিয়ে এগোতে শুরু করল। কিশোরের দিকে। যে ভাবেই হোক ওরা বুঝে গেছে চোরাই মাল কিশোরের কাছেই আছে।
বরফ ভাঙার শব্দ বাড়ছে। জমাট বরফের মত স্থির হয়ে গেল কিশোর। নড়লেই মুহূর্তে এখন বরফ ভেঙে নিচে পড়ে যাবে। যদি না নড়ে তাহলেও বিপদ। স্নোমোবাইল চালক এগিয়ে এসে ঝাঁকুনি দিয়ে ভেঙে দেবে। তাতেও নিচে পড়ে যাবে সে।
ওরা ভাঙলে অন্য একটা সম্ভাবনাও আছে। স্নোমোবাইল নিয়ে ওরাও নিচে পড়ে যেতে পারে। মরলে ডাকাতগুলোকে নিয়েই মরা উচিত। তৈরি হয়ে দাঁড়াল। সে।
শেষ মুহূর্তে কয়েক ইঞ্চির জন্যে মিস করল ওকে স্নোমোবাইল। কারণ চালকের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ঝাঁপ দিয়ে বরফের ওপর পড়ে গেছে কিশোর। গায়ের কয়েক ইঞ্চি ওপর দিয়ে শাই করে চলে গেল ইস্পাতের ভারী আইস বারের মাথা। আগের জায়গায় থাকলে হয় শিকটা শরীরে গেঁথে যেত, নয়তো মাথায় বাড়ি খেত।
মুসার চিৎকার শুনে মাথা উঁচু করে দেখল সে, ওকে পড়ে যেতে দেখে ছুটে আসছে মুসা।
পালাও, মুসা! এসো না! চিৎকার করে উঠল কিশোর। মুসার দিকে ছুটে যাচ্ছে এখন স্নোমোবাইল।
ঘুরে আবার দৌড় দিল মুসা। স্নোমোবাইলের সঙ্গে পারল না।
পৌঁছে গেল স্নোমোবাইল। রকি চালাচ্ছে। জ্যাকি পেছনে বসা। হাতের আইস বারটা দোলাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে কিশোরের মতই একপাশে ঝাঁপ দিল মুসা। ওর গায়েও লাগাতে পারল না জ্যাকি।
থামল না স্নোমোবাইল। ছুটছে। পৌঁছে গেল রয়ের কাছে। কিশোর কিংবা মুসার মত অতটা ক্ষিপ্রতা দেখাতে পারল না রয়। হাঁটুর পেছন দিকে আইস বারের প্রচণ্ড বাড়ি খেল সে। প্রায় ডিগবাজি খেয়ে পড়ল।