তবে অন্য কোন লাভজনক কারণে কেউ ঝুঁকি যদি নিতে চায় নিতে পারে, তাই না? কিশোর বলল।
কোন কারণেই নিতে চাইবে না কেউ। মাথায় যদি সামান্যতম ঘিলু থাকে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পড়লে বরফের পাতলা স্তরও ভীষণ শক্ত থাকে। তখন বোঝাটোঝা কম নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কি কারণে যাবে?
কারণ, মাছ শিকারীরা কেউ ওদিকে যায় না। রহস্যময় কণ্ঠে বলল কিশোর।
পুলিশ এল। ডগলাসের বক্তব্য শুনল। ওষুধ মেশানো মাংসের টুকরোটা দেখল। একটা ব্যাগে তুলে নিল গবেষণাগারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করানোর জন্যে। তারপর ডগলাসকে সাবধান থাকতে বলে চলে গেল।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বয় বলল, আজকের মত তো শেষ হলো। কাজ। বাড়ি গিয়ে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়তে ইচ্ছে করছে।
চিন্তা নেই। পৌঁছে দেব, কিশোর বলল। কিংবা এত রাতে আর বাড়ি ফিরে না গিয়ে চলো শার্লিদের ওখানেই চলে যাই। বাড়িতে মাকে একটা ফোন করে দিয়ো, রাতে ফিরছ না।
তা কথাটা মন্দ বলোনি, অরাজি হলো না রয়। ঠিক আছে, চলো। এত কাছে এসে রবিনকে না দেখে গেলে রাগ করবে। তা ছাড়া এখানে কম্বলের নিচে ঢোকাটাও তাড়াতাড়ি হবে।
হেসে ফেলল মুসা আর কিশোর।
.
১৩.
পরদিন সকাল সকালই উঠে বাড়ি রওনা হয়ে গেল রয়। জানিয়ে গেল, বিকেলের আগে সময় দিতে পারবে না। স্কুলে যেতে হবে। জরুরী আরও একটা কাজ আছে। শেষ করে তারপর আসবে। বার বার করে বলে গেছে, তাকে বাদ দিয়ে যেন কোনমতেই স্পটগুলোতে খুঁজতে না যায় তিন গোয়েন্দা। হুমকি দিয়েছে, তাহলে চিরকালের শত্রুতা হয়ে যাবে।
দিনের অনেকটা সময়ই তদন্তের কাজে ঘুরে বেড়াল মুসা আর কিশোর। ডগলাসের ট্রাকটা দেখতে পেল বনের ভেতর। পরিত্যক্ত অবস্থায়।
রবিন সারাটা দিনই বিশ্রাম নিল।
বিকেলে আসার আগে ফোন করল রয়। জানাল, সে রওনা হচ্ছে।
কিশোর বলল, রয়, একটা মেটাল ডিটেক্টরও দরকার আমাদের। সেই সঙ্গে কালকের ম্যাপ আর তোমার জিপিএসটা তো আনবেই।
ডোবার কগনানকে ফোন করল সে। চলে আসতে বলল। বলল, পাইনভিউ লেকের চুরিগুলোর ব্যাপারে মূল্যবান তথ্য দিতে পারবে। তারপর ফোন করল পিটারকে। মিস্টার মরগানের বাড়িতে আসতে বলল সবাইকে।
পনেরো মিনিটের মধ্যেই চলে এল পিটার।
রয় আসতে আসতে সন্ধ্যা করে ফেলল। অন্ধকার হয়ে গেছে ততক্ষণে।
গাড়ির শব্দ শুনেই বেরিয়ে গেল তিন গোয়েন্দা আর পিটার।
হাসিমুখে গাড়ি থেকে নামল রয়। কাঁধে জিনিসপত্রের ব্যাগ। এক হাতে মেটাল ডিটেক্টর, অন্য হাতে একটা হালকা কুড়াল আর একটা আইস পিক।
ওর ভঙ্গি দেখে বলে উঠল মুসা, খাইছে! মেরু অভিযানে যাবে নাকি?
হেসে জবাব দিল রয়, বরফ কাটতে কাজে লাগবে। বাড়তি যদি না থাকে এখানে, সেজন্যে নিয়ে এলাম।
আর কারও সাহায্য দরকার হবে? জিজ্ঞেস করলেন মরগান আঙ্কেল। নিজের কথাই বোঝালেন তিনি।
আপাতত লাগবে না, কিশোর বলল। লাগলে জানাব।
হতাশ মনে হলো আঙ্কেলকে। তবে আর কিছু বললেন না। উঠে গিয়ে বসলেন বেশ কিছুটা দূরে। বেলী আন্টি আর শার্লি যেখানে বসে টিভি দেখছে।
বলে বলে হাল ছেড়ে দিয়েছেন বেলী আন্টি। গোয়েন্দাদের কাজে বাধা দিতে এলেন না আর। এমনকি ওদের কথার মধ্যেও এলেন না। ওদের কর্মকাণ্ড গা সওয়া হয়ে গেছে গত কয়েক দিনে।
কার কি কাজ, ভালমত বুঝিয়ে দিতে লাগল কিশোর। পিটারকে বলল, পিটার, তুমি আর রবিন গিয়ে জ্যাকসনদের ওপর নজর রাখবে। যদি বোঝে ওরা আমাদের ওপর হামলা চালাতে আসছে, শিস দিয়ে সঙ্কেত, দেবে। তিনবার। শিস-দুবার ছোট, একবার লম্বা। যাও, দশ মিনিট সময় দিলাম। অবস্থান নাওগে।
আরনির বাড়িতে ছুটল পিটার আর রবিন। বনের ভেতর দিয়ে এগোল যাতে চোখে পড়ে না যায়। জ্যাকসনের বাড়ির কাছে পৌঁছে দেখল ভেতরে আলো ওলছে। বেশি কাছে যাওয়ার সাহস পেল না ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে। তবে নিজেদের নিয়ে চিন্তিত নয় রবিন-বাড়িটার বেশি কাছে না গেলেই হলো, ভাবছে। কিশোরদের কথা। ওদের বরফ কাটার শব্দ যদি শুনে ফেলে জ্যাকসনরা?
ভেবে লাভ নেই। যা হবার হবে। যেটা করতে বলা হয়েছে ওদের, সেটাই করল। দুজন দুদিকে সরে গিয়ে দোকানের দুটো প্রবেশ পথের দিকে লক্ষ রাখতে লাগল।
রবিনদেরকে অবস্থান নেয়ার সময় দিয়ে উঠে দাঁড়াল কিলোর। মুসা, আর রয়কে নিয়ে বেরিয়ে এল ঘর থেকে। লেকের দিকে রওনা হলো।
ঠাণ্ডা নির্মল রাত। চাঁদের আলোয় আলোকিত লেকের দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর, যাক, আবহাওয়াটা ভালই আজ। কালকের মত না। কাজ করতে অত কষ্ট হবে না।
ডোবার তো এল না এখনও, রয় বলল।
বলেছে যখন, আসবে, বলল কিশোর। কোন কারণে দেরি হচ্ছে আরকি। আসার আগেই দেখি কাজটা শেষ করে ফেলতে পারি কিনা আমরা।
হাতের লম্বা লাঠির মত জিনিসটা দিয়ে খোঁচা দিতে দিতে এগিয়ে চলল কিশোর। আগের দিন যে স্পটগুলো দেখেছে, সেগুলোতে গেল না আর।
তাকে অনুসরণ করল রয়। হাতের জিপিএসটার দিকে চোখ। যন্ত্রটার এলসিডি স্ক্রীন থেকে সবুজ আভা বেরোচ্ছে।
হঠাৎ বলে উঠল, ডানে!…হ্যাঁ হ্যাঁ, আরেকটু ডানে।
জিপিএস পকেটে রেখে দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের দিকে নজর দিল সে। কানে হেডফোন লাগানোই আছে। কিশোরের পাশ কাটিয়ে আগে চলে গিয়ে ডিটেক্টরের সাহায্যে তুষারে ঢাকা বরফের মধ্যে খুঁজতে শুরু করল। কয়েক বর্গগজ খুঁজেই থেমে গেল আচমকা।