.
১২.
গর্জন করতে করতে ছুটে অন্ধকারে হারিয়ে গেল ট্রাক।
চিৎকার করে উঠল কিশোর, মুসা, কোথায় তুমি?
আমি এখানেই আছি। ভাল। তোমরা?
আমি ভাল নেই, জবাব দিল রয়। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
তার কথায় পাত্তা না দিয়ে অন্ধকারে ট্রাকটা যেদিকে চলে গেছে সেদিকে তাকিয়ে মুসা বলল, দেখা দরকার, কে এ রকম করে রাতের বেলা চড়াও হতে এসেছিল আমাদের ওপর।
ট্রাকটা তো ডগলাসের! উঠে দাঁড়াল কিশোর।
তারমানে ডগলাসই চোর? মিথ্যে সন্দেহ করেছি আমরা জ্যাকি আর রকিকে? আলো ফেলে ডালটা খুঁজতে লাগল মুসা।
আমাদের খুন করতে চেয়েছিল নাকি? রয়ের প্রশ্ন।
বুঝলাম না, জবাব দিল কিশোর। খুন করার ইচ্ছে থাকলে তো ঘুরে আবার আসত।
ভয় দেখাতে এসেছিল আমাদের, মুসা বলল। বরফে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে একটা বোনাস মজা দিয়ে দিলাম আমরা।
ডগলাস কিনা সন্দেহ আছে আমার, চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল। ভাবছি, ওর বাড়িতে খোঁজ নিতে যাব নাকি?
চলো, মুসা রাজি।
খোঁজাখুঁজি চালিয়ে যাওয়ার আর সাহস হলো না ওদের। ফিরে এল। নিজেদের গাড়িতে। ডগলাসের স্যালভিজ ইয়ার্ডে রওনা হলো।
ইয়ার্ডে পৌঁছে ড্রাইভওয়ের উল্টো দিকে রাস্তার ধারে গাড়ি রাখতে বলল কিশোর। গেটের দিকে হাত তুলে বলল, ওই দেখে। চাকার তাজা দাগ।
গাড়ি থেকে নামল ওরা। দাগগুলো পরীক্ষা করতে গেল কিশোর।
দাগের ওপর তুষারের স্তর পাতলা, বিড়বিড় করে যেন নিজেকেই বলল। সে। তারমানে বড়জোর ঘণ্টাখানেক আগে গেছে।
উঠে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকাল কিশোর।
গর্জন করে পাক খেয়ে বইছে হিমেল বাতাস। ইয়ার্ডের ভাঙাচোরা গাড়িগুলোর ফাঁক দিয়ে শিস কেটে যাচ্ছে।
পুটি কোথায়? কিশোরের প্রশ্ন।
কোন সাড়া নেই কুকুরটার। কোথাও দেখা গেল না ওটাকে। একটিবারের জন্যে ঘেউ ঘেউও করল না।
মূল বাড়িটা অন্ধকার। অফিসটাও।
মুসার হাত থেকে টর্চটা নিয়ে প্রথমে অফিসের দিকে গেল কিশোর। জানালা দিয়ে ভেতরে আলো ফেলল। আসবাবপত্র এলোমেলো। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে খবরের কাগজ। মেঝেতে পড়ে থাকা বড় এক টুকরো মাংসের ওপর আলো পড়ল। টুকরোটার পাশেই নেতিয়ে পড়ে আছে পুটি।
সেদিক থেকে চোখ না সরিয়ে বলল সে, গোলমাল তো একটা দেখা যাচ্ছে।
তার পাশে এসে জানালা দিয়ে উঁকি দিল মুসা আর রয়।
পুটিকে দেখতে পেল।
ঘুমাচ্ছে নাকি কুকুরটা? রয়ের প্রশ্ন।
ওটার পাঁজরের ওঠানামা চোখে পড়ল কিশোরের। বলল, বেঁচেই আছে। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে মনে হয় ওকে।
ডগলাস কোথায়? মুসার প্রশ্ন।
চলো, খুঁজে দেখা যাক। একসঙ্গে না গিয়ে তিনজন তিন দিকে।
ভাঙাচোরা গাড়ির সারির ভেতর দিয়ে এগোতে লাগল ওরা। মাটির দিকে চোখ। তুষারে পায়ের চিহ্ন খুঁজছে। কিন্তু ছাপ এত বেশি ওখানে, কোনটা যে নতুন বোঝা মুশকিল। দুর্ঘটনায় ভেঙেচুরে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া গাড়ি আছে প্রচুর। তিন-চার থাক করে একটার ওপর আরেকটা রাখা। কোন কোনটা পুড়ে এমন অবস্থা হয়েছে, চাকাটাকা তো নেই-ই, দরজা-জানালা, বাম্পার এমনকি ফেন্ডার প্যানেল পর্যন্ত গায়েব।
শব্দ শুনতে পাচ্ছি, অন্য সারির মধ্যে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে জানাল মুসা।
দৌড়ে গেল কিশোর আর রয়।
থাবা দেয়ার শব্দ, মুসা বলল। শুনতে পাচ্ছ?
কোনখান থেকে আসছে? কান পাতল রয়।
ঝোড়ো রাতের বাতাসের মধ্যে অন্য কোন শব্দ বোঝা কঠিন। তারপরেও তিনজনেই শুনতে পেল শব্দটা।
ডগলাস? ডগলাস? আপনি করছেন শব্দ? চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা।
পুরানো সেডান গাড়ির একটা উঁচু স্তূপ থেকে দুবার জোরাল থাবা দেয়ার শব্দ হলো। একটারও জানালার কাঁচ নেই। কোন কোনটার দরজা গায়েব। তবে প্রত্যেকটার ট্রাংক রয়েছে। যদিও রঙ চটা।
এদিকে, শব্দ লক্ষ্য করে দৌড় দিল মুসা।
নিচের গাড়িটার ট্রাংক থেকে শব্দটা আসছে মনে হলো। সেটাতে থাবা দিল মুসা। সামান্য আঘাতেই নড়ে উঠল ওপরের গাড়িগুলো।
ওপর দিকে টর্চের আলো ফেলে কিশোর বলল, সাবধান। একদম ওপরের বড় গাড়িটার ভাবভঙ্গি ভাল না। পড়ে যাবে।
বের করো আমাকে! ডগলাসের কথা ভেসে এল নিচের গাড়িটার ট্রাংক থেকে।
এক মিনিট। এখনই বের করছি, জবাব দিল মুসা।
রয়, একটা শাবল পাও নাকি দেখো তো, কিশোর বলল। বেয়ে ওঠা গেলে ওপরেরটা ঠেলে ফেলা যাবে হয়তো।
কিন্তু উঠতে গেলেই যদি উল্টে পড়ে সব?
স্তূপটা পরীক্ষা করে দেখে মাথা দোলাল কিশোর, হুঁ, পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
রয় শাবল নিয়ে ফিরে এলে মুসা বলল। যে ভাবে আছে এ ভাবেই খোলার চেষ্টা করতে হবে।
যে ট্রাংকটায় আটকে আছে ডগলাস, সেটার দিকে কাত হয়ে মুসা বলল, ডগলাস, একটা ভেজালে পড়ে গেছি আমরা। আপনার ওপরের গাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে নাড়া লাগলেই উল্টে পড়ে যাবে।
ক্রেনটা নিয়ে এসে ওপরের গাড়িটা সরিয়ে ফেলা যেতে পারে, রয় বলল।
না না! ট্রাংকের ভেতর থেকে চিৎকার করে উঠল ডগলাস। ক্রেনটায় গণ্ডগোল আছে। আমি ওটা মেরামত করে সারতে পারিনি।
তাহলে আর কি, জবাব দিল মুসা। দেখি এই অবস্থায় কতটা কি করতে পারি।
ট্রাংকের তালার নিচের ফাঁকটায় শাবলের মাথা ঢুকিয়ে দিল মুসা। বলল, ডগলাস, রেডি! ট্রাংকের ডালা খোলার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে চলে আসবেন।
শাবলের চাড় পড়তেই তীক্ষ্ণ ধাতব শব্দ হতে লাগল। চাপ লাগছে যে। মাথাটায়, গাড়ির সে-দিকটা নিচু হয়ে গেল।