চোখ কপালে উঠল রয়ের। তার মানে! পাগল হয়ে গেছে?
পাইনভিউতে চুরির খবর জানা আছে রয়ের। তিন গোয়েন্দা কেসটা হাতে নেয়ার পর কি কি ঘটেছে জানাল ওকে কিশোর। সব শেষে কাগজটা দেখিয়ে বলল, আমার ধারণা, পাইনভিউ লেকের চুরি-ডাকাতিগুলোর সঙ্গে এ নম্বরগুলোর কোন সম্পর্ক আছে। কোন ধরনের কোডও হতে পারে।
তীক্ষ দৃষ্টিতে লেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল রয়। মুখ তুলে বলল, চলো, ওপরে।
ওপরে এসে কিশোর বলল, তোমাদের ফোনটা ব্যবহার করা যাবে?
রান্নাঘরের দিকে হাত নেড়ে রয় বলল, কিরো গিয়ে।
কাকে করবে? জানতে চাইল মুসা।
ডোবার কগনানকে। যাও না। তুমিই করে এসো না। জিজ্ঞেস করবে, নতুন কিছু জানতে পারল কিনা।
ফোন সেরে দোতলায় চলে এসো, রয় বলল। ডান দিকের প্রথম ঘরটা।
নিজের ঘরে কিশোরকে নিয়ে এল রয়। কাণ্ডই করে রেখেছে। ঘরের দেয়ালের প্রতিটি ইঞ্চিতে ইলেকট্রনিক যন্ত্র লাগানো। তারের জটলা দেখে মনে হয় না এগুলো আর কোনদিন ছাড়ানো যাবে।
একটা কম্পিউটারের সামনে বসে পড়ল রয়। প্রথমে কাগজের নম্বরগুলো টাইপ করে নিল। তারপর একটা ম্যাথমেটিক্যাল টেস্ট চালাল সেগুলোর ওপর।
বুঝলে কিছু? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
মাথা নাড়ল রয়। এখনও না।
কোন ধরনের সাঙ্কেতিক লেখা নাকি?
মনে হয় না। প্রথম সারির নম্বরগুলো দেখো ভালমত খেয়াল করে। সাত তিন অর্থাৎ তিয়াত্তর দিয়ে শুরু। সবগুলোই। দ্বিতীয় সারিরগুলো চার শূন্য অর্থাৎ চল্লিশ। তারপর ফুলস্টপ। আবার একজোড়া সংখ্যা। আবার ফুলস্টপ। আবার সংখ্যা…
রয়ের কাঁধের ওপর দিয়ে নম্বরগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আচমকা চিৎকার করে উঠল কিশোর, ইস, আমি একটা গাধা! অনেক আগেই বুঝে যাওয়া উচিত ছিল আমার। রয়, ম্যাপ আছে?
এবার অবাক হওয়ার পালা রয়ের। তা তো আছে। কিন্তু কি বুঝলে?
ম্যাপটা কোথায়? উত্তেজিত হয়ে উঠেছে কিশোর।
বুকশেলফ থেকে একটা ম্যাপ এনে দিল রয়।
বুঝলে না এখনও? কিশোর বলল। লনগিটিউড এবং ল্যাটিচিউড।
হাসি ছড়িয়ে পড়ল রয়ের মুখে। ঠিক। ঠিক বলেছ। কিন্তু তার জন্যে তো ম্যাপ বইয়ের দরকার নেই।
কম্পিউটারেই একটা ম্যাপের প্রোগ্রাম খুলে নিল রয়। মাউসের সাহায্যে লনগিটিউড ৭৩ ও ল্যাটিচিউড ৪০-এর চারপাশে রেখা একে একটা বাক্স তৈরি করল। মাউসের সাহায্যেই বাক্সটাকে বড় করতে লাগল।
নিউ ইয়র্ক, কিশোর বলল।
কাগজের নম্বর দেখে টাইপ শুরু করল রয়। রিটার্ন বাটন টিপতেই বড় হয়ে সামনে এগিয়ে এল ম্যাপ।
নিউ পোর্ট, বলে উঠল কিশোর। উত্তেজনায় গলা কাঁপছে। আরও জুম করো। টার্গেট ঠিক করো।
কাগজের নম্বরের সারি দেখে আবার নম্বর টাইপ করল রয়। পাইনভিউ লেকের ওপর লাল রঙের ক্রস চিহ্ন জুলতে নিভতে শুরু করল।
এটাই তোমার জায়গা, কণ্ঠস্বরেই বোঝা যাচ্ছে রয়ও উত্তেজিত হয়ে। উঠেছে।
লেকের মধ্যে? আনমনে যেন নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করল কিশোর।
হ্যাঁ।
ঘরে ঢুকল মুসা। ডোবারের সঙ্গে কথা বললাম। নতুন কিছু পায়নি। বলল, আরও কয়েক জায়গায় খোঁজ নেবে।
নিতে থাকুক। এসো, দেখে যাও।
কিছু পেলে নাকি? এগিয়ে এল মুসা।
তোমাদের নম্বরগুলো হলো লনগিটিউড এবং ল্যাটিচিউড, রয় বলল।
মানে? কিছুই বুঝতে না পেরে হাঁ করে রইল মুসা।
ওকে ওভাবেই থাকতে দিয়ে কিশোর বলল রয়কে, এগিয়ে যাও। দেখা যাক, কি আসে?
আবার খানিকক্ষণ নম্বর টিপল রয়। লেকের ওপর এখন জ্বলতে-নিভতে শুরু করল লাল ক্রস।
দরজায় থাবা পড়ল এ সময়। রয়ের মা ডাকলেন, এই, চা নিয়ে যা।
তুমি কাজ করো, মুসা বলল। আমি আনছি।
দরজা খুলে মিসেস কভারলির হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে ফিরে এল। তাতে চা আর বিস্কুট। একটা টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখল।
ট্রের দিকে একবার তাকিয়েই মুখ ফেরাল কিশোর। নিচের ঠোঁটে ঘন ঘন চিমটি কাটল দুবার। মাছ ধরার অতি চমৎকার জায়গা! মুসার দিকে তাকাল সে। এত ভাল জায়গাগুলো বিছানার নিচে লুকিয়েছে কেন, বলো তো?
মুসার হা-টা আরও বড় হলো। অহেতুক কেন আমার মাথাটাকে গুলিয়ে দিচ্ছ?
জবাবটা নিজে নিজেই দিল কিশোর, গোপন রাখার জন্যে। উন্নত আধুনিক যন্ত্রপাতি পছন্দ করে না বুড়ো জ্যাকসন। কাগজটা দেখলে নিশ্চয় কিছু বুঝতে পারবে না সে।
মজা পেয়ে গেছে রয়। দ্রুত টাইপ করে চলেছে তার আঙুলগুলো। লেকের ওরে আরও কয়েক জায়গায় লাল ক্রস আবিষ্কার করল।
আর দরকার নেই, কিশোর বলল। লেকে গিয়ে এখন খোঁজ নিতে হবে। রয়, ক্রসগুলো সহ তোমার ম্যাপের এই অংশটার একটা প্রিন্ট দিতে পারবে?
তা তো পারবই। সঙ্গে আরও ভাল জিনিসও দিতে পারব।
একটা তাকের কাছে গিয়ে দাঁড়াল রয়। নানা ধরনের ছোট ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির মধ্যে থেকে একটা যন্ত্র টেনে বের করল। দেখতে সেলুলার ফোনের মত যন্ত্রটার বড় একটা এলসিঁড়ি স্ক্রীন আছে। কিশোরকে দিয়ে বলল, এটা ব্যবহার করতে পারো। গ্লোবাল পজিশনিং স্যাটেলাইট সিসটেম। সংক্ষেপে জিপিএস। স্যাটেলাইটকে ব্যবহার করে এটা তোমার অবস্থান বলে দিতে পারবে। বোঝা যাবে তুমি কোথায় আছ। যে ক্রস চিহ্নগুলো আবিষ্কার করলাম, নিখুঁত ভাবে ওই সব জায়গা বের করা যাবে এটার সাহায্যে। জায়গাগুলোতে কি আছে, খুঁজলেই বেরিয়ে পড়বে। কখন রওনা হচ্ছি আমরা?
মুসার দিকে তাকাল কিশোর, কখন?