কেউ জমায় স্ট্যাম্প, কেউ অন্য কিছু রবিন বলল, আমাদের হবি অপরাধের কিনারা করা।
সাবধানী চোখে ওদের দিকে তাকালেন বেলী আন্টি। সবগুলো পাগল।
মরগান আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, কতদিন ধরে হচ্ছে এ সব?
হচ্ছে তো কয়েক বছর ধরেই। শীতকালে। শীতের ভয়ে লোকে পালায়। লেকের চারপাশের ওসব নির্জন বাড়িতে তখন চোর ঢোকে। জিনিসপত্র চুরি করে। নিয়ে যায়, মরগান আঙ্কেল জানালেন। পুলিশ কিছু করতে পারছে না। বড় দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। বাড়ি খালি রেখে আমরাও তো শহরে-টহরে যাই। তোমরা আসাতে ভালই হলো। শার্লি এসে কাল যখন বলল তোমরা এসেছ, ভাবলাম, যাক, এবার বোহয় এ সমস্যাটার একটা সমাধান হবে। শুনেছি তো, এমন এমন অনেক কেসের। কিনারা করেছ তোমরা, পুলিশও যার থই খুঁজে পায়নি। আর সে-বছর রবিনও এসে একটা জটিল কেসের কিনারা করে রেখে গেছে। তারপর থেকেই ভক্তি এসে গেছে। তোমাদের ওপর। একটা বাচ্চাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল। দিব্যি খোঁজ-খবর করে কিডন্যাপারদের পাকড়াও করে ফেলল রনি। বাচ্চাটাকে উদ্ধার করল। তাই বলছিলাম, যদি চুরির কেসটারও কিছু করতে পারতে…
জিম, বাধা দিলেন বেলী আন্টি, এখানকার কাজটা তুমি শেষ করো। আমি বারগার বানাতে গেলাম।
ছেলেদের দিকে তাকালেন মরগান। তোমরা আনন্দ ফুর্তি করো। আমি যাই।
আচ্ছা, কিশোর বলল।
স্লোম্যানটার গায়ে ফিনিশিং টাচ দিতে লাগলেন মরগান আঙ্কেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খানিক দেখল তিন গোয়েন্দা। তার কাজের প্রশংসা না করে পারল না।
শার্লি বলল, লেকে যাবে নাকি? বাবা বলল, বরফের অবস্থা খুব ভাল। স্কেইটিং জমবে।
তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে বাড়ির পেছন দিক ঘুরে লেকের পাড়ে এসে দাঁড়াল সে।
সত্যি, এত সুন্দর জায়গা! লেকটার দিকে তাকিয়ে থেকে মুসা বলল। পিকনিকের জন্যে এর তুলনা হয় না।
নির্বিঘ্নে চুরি-ডাকাতির জন্যেও তুলনাহীন, কিশোর বলল।
চোর-ডাকাতের কথা এখানে ভাল লাগছে না। দৃশ্যটার সঙ্গে বেমানান।
স্বর্গেও সাপ থাকে, গম্ভীর স্বরে জবাব দিল কিশোর। বাড়িঘরগুলোর অবস্থান দেখো। দেখলেই বুঝবে জায়গাটা কেন চোর-ডাকাতের স্বর্গ হয়েছে।
বেশির ভাগ বাড়িই বড় বড়। দুতিনতলা উঁচু। প্রতিটি বাড়ির চারপাশে প্রচুর খালি জায়গা। একজন মানুষকেও দেখা গেল না কোনখানে।
ডোবারকে ফোন করব কিনা ভাবছি, চিন্তিত ভঙ্গিতে রবিন বলল। চুরিগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা যাবে। ডোবার কগনান নিউ পোর্ট থানার অফিসার। কিডন্যাপ করা বাচ্চাটাকে উদ্ধারের সময় আমাকে অনেক হেল্প করেছিল। খুব ভাল অফিসার।…থাকগে, পরেই করব। চলো, শরীরটাকে গরম করে আসি। স্পীড স্কেইট নিয়ে এলে ভাল হত, লেকের ওপর জমে থাকা শক্ত, সমতল, মসৃণ বরফের দিকে তাকিয়ে আফসোস করল সে।
আনলেও কোন লাভ হত না, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল মুসা। আমার সঙ্গে পারতে না। সাধারণ স্কেইট দিয়েই তোমাকে হারানোর ক্ষমতা রাখি আমি।
তাই নাকি? এসো, সাধারণ স্কেইট দিয়েই হয়ে যাক প্রতিযোগিতাটা।
চলো।
কিশোর এ সব চ্যালেঞ্জের মধ্যে গেল না। তবে গাড়ি থেকে অন্য দুজনের সঙ্গে সে-ও তার স্কেইট বের করে নিয়ে চলে এল লেকের কিনাবে। পরে নিল দ্রুত।
শার্লি বলল, তোমরা যাও। আমি বরং মাকে সাহায্য করিগে।
ঘুরে বাড়ির দিকে রওনা হয়ে গেল সে।
কোনখান থেকে ছোটা শুরু করবে ভাবছে কিশোর, এমন সময় হই-চই কানে এল।
ফিরে তাকাল তিন গোয়েন্দা।
লেকের একধারে জটলা করছে হকি খেলোয়াড় ছেলেগুলো। ওদের মুখোমুখি হয়েছে কয়েকজন বয়স্ক লোক। ঝগড়া করছে মনে হলো। তুমুল উত্তেজনা। কিশোর বলল, হকি খেলছে, না চোর ধরা পড়েছে?
চোর না, চোর না! পেছন থেকে বলে উঠল শার্লি। হট্টগোল শুনে কি হয়েছে দেখার জন্যে ফিরে এসেছে। তোমার মাথায় এখন চোর ছাড়া আর কিছু নেই মনে হচ্ছে। বারার মত!
আঙ্কেলকেও নিশ্চয় দোষ দেয়া যায় না, রবিন বলল। বছর বছর চুরি হচ্ছে। পুলিশ কিছু করতে পারছে না। এখানে বাস করছেন। চিন্তায় তো তিনি পড়বেনই।
তা ঠিক, একমত হয়ে মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
হট্টগোলের দিকে নজর দিল রবিন। ওর চেয়ে দুএক বছরের বড় একটা ছেলেকে দেখিয়ে আনমনেই বলে উঠল, পিটার হিগিনস না?
আচমকা হকি স্টিক তুলে একজন লোককে বাড়ি মারতে গেল ছেলেটা।
ওকে একদম সইতে পারে না বাবা, শার্লি বলল। এক্কেবারে বুনো। মারামারির জন্যে গত বছর আমাদের স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ওকে।
তবে ফুটবলটা ভালই খেলে, দেখে গিয়েছিলাম, রবিন বলল।
তা খেলে, শালি বলল। তবে ফাউল করে করে অনেকের পায়েই ব্যান্ডেজও আঁধায়। বাবার ধারণা, পিটার আর ওর বন্ধুরাই চুরিগুলো করে।
হঠাৎ লোকের কিনার থেকে ভেসে এল গলা ফাটানো চিৎকার। অ্যাই, ভাগো এখান থেকে। কোন কথা নেই। খেলা বন্ধ, ব্যস!
পিটার আর তার সঙ্গী খেলোয়াড়দের দিকে এগিয়ে আসছে আরও কিছু লোক। শার্লি জানাল, ওরা শিকারী। কারও কারও হাতে আইস বার। ইস্পাতের ভারী ওই শিকগুলোর সাহায্যে বরফ খোঁচায় ওরা। বরফে মাছ ধরার গর্তগুলোকে বুজে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। তবে এ মুহূর্তে পিটানোর জন্যেই নিয়ে এসেছে ওই শিক।
চলো! বলে শার্লি বাধা দেবার আগেই বরফের ওপর দিকে স্কেইটিং করে ছুটল কিশোর।
পিছু নিল তার দুই সহকারী।