অপেক্ষা করে রইল ওরা। কিন্তু গুলির শব্দ আর হলো না।
নিচেই থাকো, ফিসফিস করে বলল কিশোর। ওরাও হয়তো অপেক্ষা করছে। আমাদের ওঠার জন্যে।
আরও দুতিন সেকেন্ড অপেক্ষা করে আচমকা লাফিয়ে উঠে দরজার দিকে দৌড় দিল সে।
কিশোর, কোথায় যাচ্ছ! মুসা বলল। কি করছ তুমি? মরবে তো!
জবাব দিল না কিশোর। এক ধাক্কায় দরজাটা খুলে ফেলে বাইরে লাফিয়ে পড়ল। এঁকেবেঁকে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল একটা ঝোঁপের মধ্যে।
ঘরে যারা অপেক্ষা করছে তারা কান পেতে আছে। কিশোর কোথায় আছে, কি করছে, কিছুই বুঝতে পারছে না। মাঝে মাঝে সামান্য খসখস ছাড়া আর কোন শব্দ আসছে না ওদের কানে।
অনন্তকাল ধরে যেন পড়ে রইল ওরা ঘরের মেঝেতে।
অবশেষে সামনের দরজায় শব্দ হলো।
পাল্লাটা খুলল।
ভেতরে ঢুকল জুতোর শব্দ।
বন্ধ হলো পাল্লাটা।
ঠিক আছে, এখন উঠতে পারো। কিশোরের কণ্ঠ।
সবার আগে উঠে পড়ল শার্লি। ঘুরে দাঁড়াল। দেখল, হাতে একটা বড় ডাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর।
ঘরের কোণে ডালটা নামিয়ে রেখে এসে আগুনের কাছে বসল সে। ডাল ভাঙার শব্দ হয়েছিল। গুলি নয়।
জিমের অত শখের জাপানী ফেদার ম্যাপলের ডাল, বেলী আন্টি বললেন। রেগে আগুন হয়ে যাবে ও। কিন্তু ডাল ভাঙতে এল কেন?
নিশ্চয় ডালের ওপর উঠে বসে নজর রেখেছিল ঘরের ভেতর, জবাব দিল কিশোর। টেলিফোন পেয়ে আমাদের কি প্রতিক্রিয়া হয়, দেখতে চাইছিল হয়তো। ফিরে গিয়ে যে ফোন করেছে তাকে জানাত।
পড়ে গিয়ে কোমরটা যদি ভাঙত আমি খুশি হতাম, রাগত স্বরে বলল মুসা।
মুসার দিকে তাকাল কিশোর। দুঃখের বিষয়, খুশিটা আর হতে পারলে না। চলো এখন, রয়ের ওখান থেকে ঘুরে আসি। রবিন, তুমি থাকো। শার্লিকে ঝলল, শার্লি, দাও তত দ্রুত একটা চিঠি লিখে। তোমার মামাত ভাইয়ের কাছে। কাগজ কলম নাও। যা যা বলি, লেখো।
আমি গেলে অসুবিধে কি? রবিনের প্রশ্ন।
না, মাথা নাড়লেন বেলী আন্টি। তোমার শরীর এখনও বাইরে বেরোনোর উপযুক্ত হয়নি।
রয়ের কাছে কেন যাচ্ছে, সংক্ষেপে বেলী আন্টি আর শার্লিকে জানাল কিশোর।
শার্লি বলল, রয়কে একটা ফোন করে দিলেই তো হয়। আমিও দিতে পারি। রবিনও পারে।
উঁহু, মাথা নাড়ল কিশোর। চমকে দেয়ার মজাটা আর তাহলে থাকে না। টেলিফোনেই যদি কাজটা সেরে ফেলা যেত, যাওয়া আর না লাগত, তাহলে আলাদা কথা ছিল। কিন্তু যাওয়া যখন লাগবেই, গিয়েই পরিচয় করে নেব। জানাব সব।…দাও দাও, চিঠিটা লিখে দাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
*
যত তাড়াতাড়ি পারা যায় কেসটার কিনারা করে ফেলা জরুরী, কিশোর বলল। ফোনে ওই হুমকি দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকবেন মরগান আঙ্কেলরা।
বনের ভেতরের সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে মুসা। জ্যাকসনদেরই সন্দেহ করছ এখনও?
সন্দেহটা এখন পর্যন্ত ওদিকেই তো বেশি যাচ্ছে। তাই না? বিশেষ করে আমাদেরকে পাতলা বরফের দিকে নিয়ে যাওয়ার পর।
তা বটে। ম্যারিল্যান্ডে জ্যাকি আর রকি কারও কাছে কোন রকম জিনিস বিক্রি করেছে কিনা, সে-খোঁজ নিতে এখন বলা যেতে পারে ডোবারকে। ওদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় হয়ে যাবে।
তারচেয়ে ভাল হয়, যদি চোরাই মালগুলো বের করে ফেলতে পারি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এবারের মৌসুমে যা চুরি করেছে, সব পাইনভিউতেই আছে এখনও। সরায়নি। লুকিয়ে রেখেছে। শীতের পর নিজেরা যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যাবে।
সারাটা পথ আলোচনা করেও কি ভাবে মালগুলো বের করবে, তার কোন সমাধান বের করতে পারল না ওরা।
*
রয় কভারলিকে পেল ওরা, রয়দের বাড়ির বোমেন্টে। মাটির নিচের এই মস্ত ঘরটায় রয়ের ওঅর্কশপ। বড় একটা ওঅর্কবেঞ্চে বসে গভীর মনোযোগে কাজে ব্যস্ত। চারপাশে ছড়ানো ছিটানো কম্পিউটারের অসংখ্য পার্টস। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জোড়া দিয়ে একটা কম্পিউটার তৈরি করছে।
রয়, তোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে, দূরজায় উঁকি দিয়ে মিসেস কভারলি বললেন।
কি করছ? জিজ্ঞেস করল মুসা।
ফিরে তাকাল রয়। চোখ থেকে সেফটি গগলসটা খুলে নিল। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দুই গোয়েন্দার দিকে। দুচোখে প্রচণ্ড বিস্ময়। তোমরা?
আমি কিশোর পাশা, ও মুসা..।
আরে জানি জানি! কিন্তু এলে কি ভাবে?
রবিন আর শার্লির কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে।
রবিন কই?
পাইনভিউতে, জবাবটা দিল মুসা। পানিতে ডুবে আধমরা হয়ে এখন আগুনের সামনে দম নিচ্ছে।
দেখেই চিনলে কি করে আমাদের? কিশোরের প্রশ্ন। নিশ্চয় আমাদের ছবি এত বেশি দেখিয়েছে রবিন…।
মাথা ঝাঁকাল রয়। তারপর লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল, দেখো, কথাই বলে যাচ্ছি শুধু। বসতে বলতেও ভুলে গেছি। এসো এসো, ভেতরে এসো।
তারা কথা বল, মিসেস কভারলি বললেন। আমি চা পাঠাচ্ছি।
একটা বিষয়ে আটকে গেছি, রয়, বলল কিশোর। তোমার কম্পিউটার জ্ঞান দিয়ে কোন সাহায্য পাওয়া যায় কিনা, দেখতে এলাম। রবিন বলল, তুমি এ ধরনের কাজে বিশেষজ্ঞ।
পকেট থেকে শার্লির চিঠিটা বের করে দিল কিশোর।
পড়ে বলল রয়, এটার কোন প্রয়োজন ছিল না। তোমরা সোজা এসে। বললেই পারতে।,
তখন কি আর জানতাম, দেখামাত্র চিনে ফেলবে।
যাকগে, বলো কি করতে হবে? জানতে চাইল রয়।
পকেট থেকে নম্বর লেখা কাগজটা বের করে রয়ের হাতে দিল কিশোর।
কাগজটার দিকে তাকিয়ে রয় বলল, ভিজল কি করে?
ওই যে বললাম, চুবানি খেয়েছে। পাইনভিউ লেকের পানিতে সাঁতার কাটতে নেমেছিল রবিন, মুসা বলল।