তাহলে আমি বরং থেকেই যাই, রবিন বলল। এখানে সবার সামনে হাসপাতালের চেয়ে ভাল থাকব।
থাকতে পারো, হেসে বললেন বেলী আন্টি, এক শর্তে। আমার কথা সব শুনতে হবে। ইচ্ছে করলেই উঠে বেরিয়ে যাওয়া চলবে না।
না না, যাব না, রবিন এক কথায় রাজি। হাসপাতালে যাওয়ার চেয়ে যে। কোন শর্ত মেনে নেয়া অনেক ভাল। যা বলবেন তাই করব। পথ্য যা খেতে দেবেন, খাব।
হেসে বেরিয়ে গেলেন ডাক্তার।
রবিনকে একটা মেয়েদের বাথরোব এনে দিলেন বেলী আন্টি। পশমী মোজা দিলেন। ভেজা কাপড়-চোপড়গুলো ড্রাইয়ারে ঢোকালেন শুকানোর জন্যে। রবিনকে বললেন, আগুনের কাছে গিয়ে বসে থাকোগে।
রোবটা গায়ে দিল রবিন। উসখুস করতে লাগল।
কি হলো? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
এ রকম একটা বাথরোব পরে এখানে মেয়েমানুষদের সামনে ঘোরাফেরা করতে লজ্জা লাগছে আমার, আড়চোখে শার্লির দিকে তাকাল রবিন।
তাতে কি হয়েছে? গায়ে কাপড় তো আছে, কিশোর বলল।
খানিক আগে বাথরূমে যে অবস্থায় ছিলে সে ভাবেই যে থাকতে বলেননি, এটাই বরং তোমার ভাগ্য, মুসা বলল।
মুচকি হাসলেন বেলী আন্টি। হাসিটা বেড়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ঠেকানোর জন্যে কৃত্রিম ধমক লাগালেন, এখনই কিন্তু কথা না শোনা শুরু করেছ তুমি।
আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে, ঠিক আছে। আর দ্বিধা করল না রবিন। তাড়াতাড়ি গিয়ে আগুনের কাছে বসে পড়ল।
মুসা আর কিশোর বসল তার কাছাকাছি।
গরম চকলেট ড্রিংক এনে দিল শার্লি।
আগুনের উত্তাপ শোষণ করতে লাগল রবিনের শরীর। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করল। কিশোরের দিকে তাকাল সে। লেকে আসলে কি ঘটেছিল তখন, বলো তো?
জ্যাকি আর রকি এ রকম করল কেন জানতে চাইছ তো?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল রবিন।
আমার বিশ্বাস, ইচ্ছে করেই আমাদেরকে পাতলা বরফের ওপর টেনে নিয়ে। গিয়েছিল ওরা, কিশোর বলল।
শেষ দিকে আমারও তাই মনে হচ্ছিল, রাগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল মুসার কণ্ঠে। রবিন পড়ে যাওয়ার পর ওর দিকে ছাড়া আর কোনদিকে তাকানোর সুযোগ ছিল না। কিশোরের দিকে তাকাল সে। ওরা কি করেছে দেখেছ নাকি?
নাহ্, মাথা নাড়ল কিশোর। আমার নজরও রবিনের দিকেই ছিল। পরে যখন খেয়াল হলো, ফিরে তাকালাম, দেখি ওরা দুজন চলে গেছে।
অ, ওরা আর সবার মত ছুটে আসেনি?অবাক হলো রবিন।
না।
এ সময় শার্লি ঢুকল ঘরে। রবিনের কাছে এসে বলল, তোমার পকেটের জিনিসপত্র। একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ পাওয়া যায় কিনা দেখি, ভরে রাখার জন্যে।
তাহলে তো ভালই হয়, শার্লির হাত থেকে মানিব্যাগটা নিয়ে আগুনের সামনে রাখল রবিন। থাক এখানে। শুকাক।
আর এই যে তোমার হিসেবের কাগজ, জ্যাকসনের ঘর থেকে নকল করে। আনা কাগজটা রবিনের হাতে দিল শার্লি।
ওহহো, ভুলেই গিয়েছিলাম এটার কথা। সাবধানে ভেজা কাগজটার ভাজ খুলল সে, যাতে ছিঁড়ে না যায়। কালি জাবড়ে গেছে। তবে পড়া যায় নম্বরগুলো।
জিনিসপত্রগুলো দিয়ে চলে গেল শার্লি।
বেলী আন্টি রান্নাঘরে।
নম্বরগুলো দেখতে দেখতে কিশোর বলল, কি ভাবে পড়তে হবে? ওপর থেকে সারি দিয়ে নিচের দিকে, না পাশের দিকে জোড়ায় জোড়ায়?
কি জানি, হাত ওল্টাল রবিন।
মুসার দিকে তাকাতেই মাথা নাড়ল মুসা, আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই, যেটা তুমি বুঝতে পারছ না, সেটা আমি কি করে বুঝব?
খানিকক্ষণ নম্বরগুলো নিয়ে মাথা ঘামাল ওরা। কিন্তু কি ভাবে পড়লে বা মানে কি এগুলোর– কোন সমাধান করতে পারল না।
হঠাৎ তুড়ি বাজাল রবিন। কে পারবে জানো? রয় কভারলি।
ভুরু কুঁচকাল কিশোর। কভারলিটা কে?
কম্পিউটারের জাদুকর। শার্লির মামাত ভাই। ওর কাছে এ ধরনের যে সমস্যা নিয়ে যাবে, সমাধান করে দেবে। সেবার কিডন্যাপ করা বাচ্চাটাকে? বের করতে আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল সে।
কিশোর বলল, তোমার যখন এত আস্থা, তার কাছেই যাওয়া দরকার
ফোন বাজল।
রান্নাঘরের এক্সটেনশন থেকে ধরলেন বেলী আন্টি। ডেকে বললেন, কিশোর, তোমাদের চায়। যে কেউ একজন আসো।
উঠে দাঁড়াল কিশোর। তোমরা বসো। আমি দেখে আসি, কে।
রান্নাঘরে ঢুকে বেলী আন্টির হাত থেকে রিসিভারটা নিয়ে কানে ঠেকাল কিশোর।
ওপাশের কথা শুনতে শুনতে গম্ভীর হয়ে গেল সে। বেলী আন্টি লক্ষ করলো। ব্যাপারটা। রিসিভারটা রেখে দিয়ে যখন ঘুরল কিশোর, জিজ্ঞেস করলেন, কি?
আসুন, ফায়ারপ্লেসের কাছে। সবাইকে একবারেই বলি।
কিশোর বসার ঘরে ঢুকতেই মুসা জিজ্ঞেস করল, কার ফোন?
জানি না, জবাব দিল কিশোর। শার্লির দিকে তাকাল। ওপর থেকে কাজ সেরে এসে সে-ও বসেছে এখন ফায়ারপ্লেসের কাছে। একটা অচেনা পুরুষ কণ্ঠ। আমার মাধ্যমে মরগান আঙ্কেলদেরকে একটা মেসেজ দিতে চায়।
দুঃসংবাদ। বুঝতে পারলেন আন্টি। কি মেসেজ?
হুমকি দিল আপনাদেরকে…
কি হুমকি? চিৎকার করে উঠল শার্লি।
আস্তে! কিশোরের দিকে তাকালেন আবার বেলী আন্টি। কি বলল?
বলল, তিন গোয়েন্দাকে সাহায্য করেছেন। এখন বিপদের জন্যে প্রস্তুত হোন।
কিশোরের কথা শেষ হতে না হতেই তীক্ষ্ণ, জোরাল একটা শব্দ হলো।
গুলির শব্দের মত।
.
১১.
মাথা নিচু! মাথা নিচু! চিৎকার করে উঠল কিশোর। বসে পড়ো সবাই মেঝেতে!
পাশে বসা শার্লির হাত ধরে একটানে নিচে নামিয়ে ফেলল মুসা। একই সঙ্গে নিজেকেও ছুঁড়ে দিল মেঝেতে।
রাবন নিজেই নামতে পারল।
বেলী আন্টিকে সাহায্য করল কিশোর।