না না, মিস্টার মরগানের বাড়িতে নিয়ে চলুন। ওখানেই ভাল হবে। মিসেস মরগান নার্স, সেবাটা ঠিকমত হবে। কিশোর বলল। জ্যাকসনদের বিশ্বাস করতে পারছে না সে।
গ্র্যাহাম গুন নামে একজন মাছ শিকারী গিয়ে তাড়াতাড়ি করে তার স্নোমোবাইলটা নিয়ে এল। পেছনে টেনে নিয়ে এল জ্যাকসনের হাতে বানানো একটা শ্লেড। রবিনের পাশে এনে রাখল। রবিনকে শ্লেডে তুলে দেয়া হলো। মুসা উঠে বসল তার মাথার কাছে। গরম রাখার জন্যে রবিনের মাথাটা দুই হাতে চেপে ধরে রাখল।
স্নোমোবাইল চালানো শুরু করল গ্রাহাম।
রবিন? জেগে আছ তত? রবিনের নীল হয়ে যাওয়া ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা।
বিড়বিড় করে কিছু বলল রবিন, স্নোমোবাইলের এঞ্জিনের গর্জনে বোঝা গেল না।
তার ঠোঁটের কাছে কান নিয়ে এল মুসা।
পায়ের তালুতে কোন সাড়া নেই, রবিন জানাল।
মুসা জানে, রবিনের জন্যে এ সময়টা এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়। ঠাণ্ডা পানিতে কাটিয়ে এসে দেহ ঠাণ্ডা। তার ওপর গায়ের সমস্ত কাপড়-চোপড় ভেজা। বরফ-ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এসে সেগুলো জমে যেতে আরম্ভ করেছে। তাতে দেহটা আরও দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
জেগে থাকো, রবিন, মুসা বলল। খবরদার, ঘুমিয়ে না। এসে গেছি আমরা।
.
স্নোমোবাইলের পেছন পেছন দৌড়ে চলেছে কিশোর। কি মনে হতে থেমে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকাল। লেকের কোনখানে দেখতে পেল না জ্যাকি কিংবা রকিকে। সন্দেহটা জোরালো হলো তার। ইচ্ছে করে ওদেরকে পাতলা বরফের দিকে টেনে নিয়ে গেছে, দুই ভাই। একটাই উদ্দেশ্য। পানিতে ফেলে খুন করা। লোকে ব্যাপারটাকে দেখবে অ্যাক্সিডেন্ট হিসেবে। শত্রুকে শেষ করে দেয়া হবে। নিজেদেরও কিছু হবে না।
চমৎকার পরিকল্পনা।
কিন্তু কেন করল?
কারণ, সঠিক পথেই এগোচ্ছে তিন গোয়েন্দা।
তার মানে, চুরিগুলোর পেছনে যে জ্যাকি আর রকির হাত আছে, তাতে কোনোই সন্দেহ থাকল না আর।
*
মুখ তুলে শার্লিদের বাড়ির দিকে তাকাল মুসা।
হাত নাড়তে দেখল শার্লিকে।
বাড়ির পেছনের দরজার কাছে এনে স্নোমোবাইল থামাল গ্র্যাহাম।
পানিতে পড়ে গিয়েছিল রবিন, শার্লিকে জানাল মুসা।
শ্লেড থেকে রবিনের প্রায় জমে যাওয়া দেহটা গ্রাহামের সহায়তায় তুলে নিল সে।
ওকে যে তোমরা তোলার চেষ্টা করেছ, দেখেছি আমরা, শার্লি জানাল। রেডি হয়ে আছে মা।
রবিনকে বয়ে নিয়ে আসা হলো।
জরুরী কণ্ঠে বেলী আন্টি বললেন, সোজা ওকে বাথরুমে নিয়ে যাও। কাপড়-চোপড় সব খুলে ফেলো। শার্লি, চুলায় গরম পানি হয়ে গেছে। যা, নিয়ে। আয়। আমি আসছি।
ধরাধরি করে রবিনকে নিয়ে চলল মুসা আর গ্রাহাম। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে লাগল।
দোতলায় এসে সোজা বাথরূম।
গরম পানি দিয়ে টাবটা ভর্তি করে রেখেছেন বেলী আন্টি। মুসা আর গ্রাহাম মিলে দ্রুত হাতে রবিনের গায়ের সমস্ত জামা-কাপড় খুলে দিল। শুধু আন্ডারওয়্যার বাদে। বাথরূমে ঢুকলেন বেলী আন্টি।
লজ্জা-শরমের সময় নেই এখন, বললেন তিনি। প্রাণ বাঁচানোটাই আসল কথা। এগুলোও খোলো। তারপর গরম পানিতে শোয়াও।
যে ভাবে যা করতে বলা হলো, অক্ষরে অক্ষরে পালন করল মুসা আর গ্রাহাম।
ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া দেহ গরম পানিতে রাখতেই কেঁপে উঠল রবিন।
ওর দিকে চোখ রাখো, বেলী আন্টি বললেন। আমি গরম কিছু নিয়ে আসিগে অ্যামবুলেন্সকে ফোন করে দেয়া হয়েছে। চলে আসবে যে কোন সময়।
কিশোর ঢুকল এ সময়। শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকাল রবিনের দিকে। ও ভাল হবে। তো?
পানিতে খুব বেশিক্ষণ ছিল নাকি? জানতে চাইলেন বেলী আন্টি।
হিসেব রাখতে পারিনি। মিনিট তিনেক হবে বড় জোর। পানি থেকে যখন তুললাম, তখন জ্ঞান ছিল ভালমতই।
তাহলে চিন্তা নেই। ভাল হয়ে যাবে।
ধীরে ধীরে জেগে উঠতে শুরু করল রবিন।
রঙ ফিরতে লাগল শরীরে।
ওকে খাওয়ানোর জন্যে এক মগ গরম পানি নিয়ে এলেন বেলী আন্টি। বললেন, ওর ভেতরটাও গরম করা দরকার।
ডাক্তার আসতে আসতে রীতিমত সুস্থ হয়ে গেল রবিন। উঠে বসল টাবের মধ্যে। বিমূঢ়ের মত তাকাতে লাগল।
বাথরূমে ঢুকলেন ডাক্তার। কেমন আছ এখন?
ভাল, দুর্বল কণ্ঠে জবাব দিল রবিন।
তার দেহের তাপমাত্রা দেখলেন ডাক্তার। নাড়ি দেখলেন। ব্লাড প্রেশার মাপলেন। তোমার কপাল ভাল, তাড়াতাড়ি তুলে ফেলেছে। গা ভালমত গরম করতে হবে এখন। তবে বিপদ কেটে গেছে।
কত রকম ভুল কথা বলে মানুষ। এত ভোগান্তির পর কপাল ভাল হয় কি করে? ভাল তো হত যদি একেবারেই না পড়ত, মুসা বলল। রবিন বেঁচে যাওয়াতে অতি আনন্দে দিশেহারা।
হেসে ফেললেন ডাক্তার। পরিস্থিতির আড়ষ্ট ভাবটা কেটে গেল। হাসিটা সংক্রমিত হলো উপস্থিত সবার মাঝে।
পুরোপুরি ভাল হতে কত সময় নেবে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ভাল মোটামুটি হয়েই গেছে। প্রাণশক্তি খুব বেশি। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি আমরা ওকে। তবে তার বোধহয় আর প্রয়োজন হবে না। যা করার মিসেস মরগানই করতে পারবেন। ওকে বিছানায় রেখে মাঝে মাঝে টেম্পারেচার পরীক্ষা করা আর গরম তরল খাবার খাওয়ানো ছাড়া কিছুই করা লাগবে না।
ফিরে তাকাল কিশোর। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন বেলী আন্টি। আপনি কি বলেন, আন্টি? হাসপাতালে পাঠাব?
ডাক্তারের সঙ্গে আমিও একমত। আমার মনে হয় না আর নেয়ার কোন প্রয়োজন আছে।