হ্যাঁ। সে-ই ভাল, জ্যাকসন বলল। যে রকম চোরের উৎপাত এখানে। দেখা গেল, দিনের বেলাতেও চুরি শুরু করল। সুযোগ দেয়ার দরকার কি?
কিশোর আর মুসাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল জ্যাকসন।
ওরা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজে নামল রবিন। একটা সেকেন্ডও দেরি করল না। দোকানের পেছনে একটা দরজা আছে। জ্যাকসনদের বেডরূমে ঢোকার। দৌড়ে এসে সেটা দিয়ে ঢুকে পড়ল সে।
বড় একটা ঘর। আসবাবপত্রে ঠাসা। এক পাশে রান্নাঘর আরেক পাশে বাথরূম। জানালার কাছে জ্যাকসনের বিছানা। দুটো চারপায়ার ওপর রাখা দুটো স্লীপিং ব্যাগ। জ্যাকি আর রকির জন্যে। ওদের ব্যাগ আর কাপড়-চোপড় মেঝেতে স্তূপ করা। ধোয়াধোয়ির আর ধার দিয়ে যায় না। অপরিচ্ছন্ন। নোংরা।
জ্যাকসনকে বাইরে কতক্ষণ আটকে রাখতে পারবে কিশোররা, বলা যাচ্ছে না। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। দুটো চারপায়ার মাঝখানে রাখা ছোট টেবিলটার দিকে নজর দিল সে। কিন্তু সন্দেহ করার মত কোন জিনিস দেখল না।
দ্রুত জ্যাকসনের ড্রেসারের ড্রয়ার পরীক্ষা করে দেখল। তারপর ঢুকল রান্নাঘরে। কেবিনেটগুলো খুলে দেখল। কোথাও চোরাই মাল আছে কিনা। নেই। এত সাধারণ জায়গায় থাকবে, আশাও করেনি। তবু দেখল। নিশ্চিত হওয়ার জন্যে। মাল থাকলে হয় দেয়ালের ফাপা কোন জায়গায় থাকবে, নয়তো মেঝের তক্তার নিচে, মনে হলো তার।
পাঁচ মিনিট খোঁজাখুঁজি করে কোন কিছুই পাওয়া গেল না। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল, এখনও লেকের বরফের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে কিশোররা। সময় নষ্ট না করে সরে এল রবিন।
সারা ঘরে নতুন করে আবার চোখ বোলাল সে। বোঝার চেষ্টা করল কেন জায়গায় থাকতে পারে জিনিসগুলো। স্লীপিং ব্যাগগুলো উঁচু করে দেখল। তারপর মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে চারপায়াগুলোর নিচে উঁকি দিল। চোখে পড়ল ছোট এক টুকরো ভাঁজ করা কাগজ। একটা চারপায়ার ক্যানভাসের নিচে গোঁজা।
কৌতূহল হলো।
বের করে এনে দেখল, তাতে দুই সারি নম্বর লেখা। তালিকার মত। তবে কোন জিনিসের নাম লেখা নেই নম্বরগুলোর বিপরীতে।
কি মানে এগুলোর, বুঝতে পারল না কিছু। কিন্তু মনে হতে লাগল, এর মধ্যে সূত্র আছে। নইলে এত যত্ন করে ওখানে লুকিয়ে রেখেছে কেন?
পকেট থেকে নোটবুক বের করে তার ভেতর থেকে কাগজ বের করল। পেন্সিল দিয়ে দ্রুত নকল করে নিল নম্বরগুলো। ঠিক যে ভাবে লেখা রয়েছে, সে ভাবে সাজিয়ে। আসল কাগজটা রেখে দিল আগের জায়গায়।
বাইরে কথা শোনা গেল। জোরে জোরে কথা বলছে কিশোর। বুঝল, সাবধান করে দিচ্ছে।
এ ঘরে আর কিছু পাওয়ার আশা নেই। আর থাকলেও সময় নেই। তাড়াতাড়ি দোকানে ফিরে এল রবিন।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সামনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকল জ্যাকসন। পেছনে কিশোর আর মুসা। বাপরে, বড় বাঁচা বেঁচেছে!-বুকের মধ্যে দুরুদুরু করছে রবিনের। আর সামান্য দেরি করলেই যেত ধরা পড়ে।
তারমানে তো মাছ ধরার সরঞ্জাম লাগবে এখন তোমাদের, জ্যাকসন জিজ্ঞেস করল। দেব?
এখন দেবেন? রবিনের দিকে তাকাল কিশোর।
মাথা ঝাঁকিয়ে ইঙ্গিতে বোঝাল রবিন, কাজ হয়ে গেছে।
জ্যাকসনকে বলল কিশোর, থাক পরেই দেন। আজকে মেরিন ডগলাসের সঙ্গে এক জায়গায় যাওয়ার কথা আছে আমাদের।
শুধু শুধু আমাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে আমার সময় নষ্ট করলে কেন তাহলে? রেগে উঠল জ্যাকসন। কাউন্টারের ওপাশের চেয়ারে গিয়ে বসল।
কারণ আপনি ছাড়া মাছের সবচেয়ে ভাল জায়গাগুলো আর কেউ দেখাতে পারত না, তেলানোর ভঙ্গিতে জবাব দিল কিশোর।
তাতে অবশ্য কাজ হলো। নরম হলো জ্যাকসন। একটা ম্যাগাজিন তুলে নিয়ে পাতা ওল্টাতে শুরু করল।
ও, ভাল কথা, কিশোর বলল, আপনার দুই নাতির সঙ্গে একটু দেখা করার দরকার ছিল। কোথায় ওরা?
কেন, লেকে দেখোনি ওদের? ম্যাগাজিনটা জানালার দিকে নাড়ল জাকসন।
না তো। ঠিক আছে। এখন যাচ্ছি। দেখি পাওয়া যায় নাকি, বলে আর দাঁড়াল না কিশোর। দরজার দিকে রওনা দিল। বেরিয়ে এল দুই সহকারীকে নিয়ে।
পাহাড়ের গা বেয়ে লেকের দিকে নামতে নামতে ফিরে তাকাল একবার কিশোর। দেখল, জানালা দিয়ে ওদের দিকে নজর রাখছে কিনা জ্যাকসন।
দেখা গেল না তাকে।
রবিনকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, কিছু পেলে?
নোটবুক থেকে কাগজটা বের করে দিল রবিন। এটা দেখো, কিছু বুঝতে পারো নাকি।
কতগুলো নম্বর, দেখতে দেখতে বলল কিশোর।
পাশ থেকে দেখার জন্যে কাত হয়ে এল মুসা।
নম্বরগুলোর মানে কি? জিজ্ঞেস করল রবিন।
বুঝতে পারছি না, জবাব দিল কিশোর। থাক, এটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। হাত তুলে দুজন মানুষকে দেখাল, জ্যাকি আর রকি না ওরা? মুসা, ডাক দাও তো।
অ্যাই, শুনছেন! চিৎকার করে ডাকল মুসা।
ফিরে তাকিয়ে তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল দুই ভাই। কিন্তু কাছে এল না। কিশোররা ওদের দিকে এগোল। ওরা সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করল। লেক পার হয়ে ওপারে চলে যাবে মনে হচ্ছে।
তিন গোয়েন্দাও গতি বাড়িয়ে দিল। বুটের নিচে কাঁটা থাকায় পিছলে পড়া থেকে বাঁচল।
এত তাড়াহুড়া করছে কেন? রবিনের প্রশ্ন। দেখছে না ওদের কাছে যেতে চাইছি আমরা?
আগে আগে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ টের পেল রবিন, পায়ের নিচে পাতলা হয়ে এসেছে বরফ। চাপ পড়তেই চড়চড় করে উঠল।
এগিয়ো না! এগিয়ে না! দুই বন্ধুর উদ্দেশে চিৎকার করে উঠল সে।