অ, তোমরা, মুখ তুলে দেখে বলল জ্যাকসন।
কেমন আছেন? আন্তরিকতার ভঙ্গি করল কিশোর।
তোমরা আসার আগে পর্যন্ত তো ভালই ছিলাম, মুখ গোমড়া করে জবাব দিল জ্যাকসন।
রেগে আছেন মনে হচ্ছে আমাদের ওপর? হাসল কিশোর। কারণটা কি?
হিগিনসদের বাড়িতে ঢুকতে দেখলাম তোমাদের, জ্যাকসন বলল।
তাতে অসুবিধেটা কি? প্রায় জিজ্ঞেস করে ফেলতে যাচ্ছিল মুসা। চোখের ইশারায় তাকে নিষেধ করল কিশোর।
জ্যাকসনের কথাটা যেন শুনতেই পায়নি কিশোর এ রকম ভঙ্গিতে চারপাশে তাকাতে শুরু করল। অবাক হওয়ার ভান করে আনমনে বিড়বিড় করল, বাপরে, জিনিসপত্রে একেবারে বোঝাই।
মিথ্যে বলেনি সে। তাক বোঝাই জিনিসপত্র। বেশির ভাগই মাছ ধরার সরঞ্জাম। ছিপ, সুতো, বঁড়শি, ফাৎনা থেকে শুরু করে মাছ ধরার পর তোলার জন্যে বড় হাতলওয়ালা নেট, যা যা প্রয়োজন সবই আছে।
প্রচুর বিক্রি নাকি এ সব জিনিসের? জিজ্ঞেস করল কিশোর। হেঁটে গেল স্তূপ করে রাখা মাছ ধরার আধুনিক সরঞ্জামগুলোর মাঝখানের সরু গলিপথ ধরে। দেখল বোটে লাগানোর ছোট আউটবোর্ড এঞ্জিন আছে। আছে ইলেকট্রনিক ফিশ ফাইন্ডার, তাতে কম্পিউটারের ছোট স্ক্রীন লাগানো, লেকের তলায় কোথায় কি আছে দেখা যায় ওটার সাহায্যে। এক ধরনের স্যাটেলাইট সিসটেমও আছে। যন্ত্রটা আগেও দেখেছে কিশোর। কিন্তু কখনও ব্যবহার করেনি। গ্লোবাল পজিশনিং স্যাটেলাইট সিসটেম বলে এগুলোকে। হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে মাছের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। একটা মেটাল ডিটেক্টরও দেখা গেল একধারে রাখা।
ওসব পচা যন্ত্র নবিসদের জন্যে, যন্ত্রগুলোর প্রতি কিশোরের কৌতূহল লক্ষ করে জ্যাকসন বলল।
তাই? কিশোর বলল, আমি তো আরও ভাবলাম অতিমাত্রায় পেশাদারদের জন্যে ওসব যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে।
দূর। পেশাদাররা ফালতু যন্ত্রের সাহায্য নিতে যাবে কি করতে? মাছ খুঁজে বের করার জন্যে ওদের স্যাটেলাইট দরকার হয় না। এ ভাবে মাছ খুঁজে বের করে ধরার মধ্যে মজাও নেই।
তাহলে রেখেছেন কেন?
নবিসদের কাছে বিক্রি করি না আমি তা তো বলিনি। এ সব আলতু-ফালতু জিনিস ওরাই কেনে। হেসে উঠল জ্যাকসন।
মুসা আর রবিনও কিশোরের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে লাগল। একটা বাক্স দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল রবিন, এটা কিসের জন্যে?
তোমরা তো দেখা যাচ্ছে একেবারেই আনাড়ি, জ্যাকসন বলল। কিছুই চেনো না।
সে-জন্যেই তো চিনতে চাইছি, মুখে হাসি টেনে এনে জবাব দিল কিশোর।
ওটা স্লেড বক্স। মাছ ধরার সমস্ত সরঞ্জাম ভরে নিয়ে বরফের ওপর দিয়ে টেনে নিতে পারবে। বয়ে নেয়ার ঝামেলা নেই। পিঠটা বাঁকা হওয়া থেকে বাঁচবে। মাছ ধরার সময় ওটাতে বসতেও পারবে। এক জিনিসে কত সুবিধে, তাই না?
কোত্থেকে আনেন এগুলো? জানতে চাইল মুসা।
নিজেই বানাই, গর্বের সঙ্গে জবাব দিল জ্যাকসন। এ মৌসুমেই গোটা আষ্টেক বিক্রি করে ফেলেছি।
সবগুলোই কি এক রকম? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
বাজারে যেগুলো কিনতে পাওয়া যায়, আলাদা আলাদা ডিজাইন, সেগুলোর মত কিনা যদি জিজ্ঞেস করো, তাহলে বলব, না। আমারগুলো কাজের জিনিস, এটাই হলো আসল কথা।
অ, হঠাৎ করে যেন মনে পড়ে গেল কিশোরের, আপনার নাতিরা কোথায়?
মাছ ধরতে গেছে।
মনে মনে পুলকিত হলো কিশোর। ভাগ্যটা ভালই। এখন কোনমতে বুড়োটাকে সরিয়ে নিতে পারলেই পুরো বাড়ি খালি পাওয়া যাবে। ভাল মাছ কোনখানে পাওয়া যায়, জানে নিশ্চয় ওরা?।
শিখছে। প্রায়ই তো দেখি যন্ত্রপাতি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে। আমিও বাধা দিই না। শিখতে চায় শিখুক। নবিস থাকার কোন মানে হয় না।
আমাদের কি ওরকম ভাল জায়গা চেনাতে পারবেন?
বাহ! তোমাদেরও দেখছি আইস ফিশিঙের শখ? অবাক মনে হলো জ্যাকসনকে।
হয়েছে আপনার কথা শুনে। আমরাও নবিস থাকতে চাই না, হাসল কিশোর। আইস ফিশিং দেখতে দেখতে ক্রমেই শখ বাড়ছে। কৌতূহলটাও ঠেকাতে পারছিনা। আর মুসা তো সেদিন আপনার সঙ্গে শ্যান্টিতে দেখা হওয়ার পর থেকে আমাকে ধরে মারে আর কি। আপনি ওকে মাছ ধরা শেখাতে চেয়েছিলেন, আমি টেনে বের করে নিয়ে গিয়েছিলাম বলে। ওর সঙ্গে সঙ্গে আমার শখটাও চাগিয়ে উঠেছে। ভাবলাম, একবার চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি? বঁড়শি-টড়শি কিনতে কিছু টাকা খরচ হবে আরকি।
খরচও তেমন বেশি কিছু না, আগ্রহী মনে হলো জ্যাকসনকে। দামী যন্ত্রপাতিগুলো ভাড়া নিতে পারো আমার কাছ থেকে। ভাল কমিশন দেব। কারণ তোমাদেরকে আমার পছন্দ হয়েছে।
টোপ গিলেছে। মনে মনে হাসল কিশোর। এখন খেলিয়ে ডাঙায় তুলতে পারলেই হয়। বলল, কিন্তু আমরা কি পারব এত তাড়াতাড়ি?
পারবে। একেবারে পানির মত সহজ। যদি ঠাণ্ডাটা কেবল মেনে নিতে পারো।
কোনখান থেকে শুরু করব?
জায়গা তো বেশ কয়েকটাই আছে। কাউন্টারের ওপাশ থেকে বেরোল না জ্যাকসন। তবে কিশোর বুঝল, আর সামান্য চাপ দিলেই বেরোবে।
জায়গাগুলো কি দেখাতে পারবেন? সময় হবে আপনার? অনুরোধের ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল সে।
বোঝা যাচ্ছে, না দেখানো পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে দেবে না আমাকে, হাসল জ্যাকসন।
যাক, তাড়াতাড়িই বুঝতে পারলেন, হেসে জবাব দিল কিশোর।
চেয়ার থেকে উঠে এল জ্যাকসন।
মুসার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল কিশোর। জ্যাকসনের পেছনে পেছনে দরজার দিকে এগোল সে। রবিনকে বলল, তোমার আর আসার দরকার নেই। তুমি এখানেই থাকো বরং। দোকান পাহারা দাও।