পিটারের বাবার সঙ্গে দেখা করবে? মুসা জিজ্ঞেস করল।
থাকলে করব। পিটার কি করছে, সেটাও দেখেই যাই।
গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে এনে পিটারদের ড্রাইভওয়েতে ঢুকল মুসা।
গ্যারেজে পাওয়া গেল ওদের। পিটার আর তার দুই বন্ধু ডট ও কারনিকে। পিটারের পুরানো পিকআপ গাড়িটা চালু করছে তিনজনে মিলে।
জ্যাক দিয়ে পেছনটা উঁচু করে চাকা লাগাচ্ছে পিটার।
কাজকর্ম তো ভালই জানে মনে হচ্ছে, মুসা বলল।
হাসল রবিন। কি করে বুঝলে?
ভঙ্গি দেখে।
রতনে রতন চেনে, হাসিটা বাড়ল, রবিনের। একটা কথা তোমাকে বলা হয়নি, মুসা। পিটারও তোমার মতই গাড়ি পাগলা।
কথা শুনে ফিরে তাকাল কারনি। দেখতে পেল তিন গোয়েন্দাকে। বলে উঠল, আরি আরি, কে এসেছে দেখো! জুনিয়ার শার্লক হোমসের দল। ন্যাকড়া দিয়ে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এল সে। হাতটা বাড়িয়ে দিল কিশোরের দিকে, কালি লাগবে কিন্তু।
লাগুক, হেসে হাতটা ধরল কিশোর।
তোমাদের কথা সব আমাদের বলেছে পিটার। যে ভাবে ওকে থানা থেকে বের করে এনেছ…
আমরা আনিনি, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। ক্যাপ্টেন ইচ্ছে করেই ছেড়ে দিয়েছেন। হয়তো ফাঁদ পেতেছেন, কে জানে! ছেড়ে না দিলে তো ফাঁদে ফেলতে পারবেন না।
কাছে এসে দাঁড়াল ডট আর পিটার।
ডট হাত মেলাল তিন গোয়েন্দার সঙ্গে।
পিটার জিজ্ঞেস করল, কাল আসোনি কেন? শুনলাম, কালও এসেছিলে পাইনভিউতে।
কালকে ব্যস্ত ছিলাম অতিরিক্ত।
চোর ধরা নিয়ে?
মাথা ঝাঁকাল কিলোর।
এগোল কিছু?
হ্যাঁ না দুটোই বলতে হয়। ডট আর কারনির দিকে তাকাল কিশোর। তোমাদের দুজনকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব। কিছু মনে কোরো না। আশা করি সত্যি জবাব দেবে।
কুঁচকে গেল কারনির ভুরু। কি করে বুঝবে সত্যি বলছি?
বলোই না। বোঝাবুঝির ব্যাপারটা তো পরে।
বলে ফলো।
পিটারকে থানায় নিয়ে যাবার পর এ এলাকায় আরেকটা চুরি হয়েছে। তোমরা করোনি তো? পিটারকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যে?
ভুরুটা আরও কুঁচকে গেল কারনির। তারপর হেসে ফেলল, না। আমরা, খারাপ ছেলে হতে পারি, কিন্তু অপরাধ করে আরেকজনকে নিরপরাধ প্রমাণ করার মত খারাপ নই, বোকাও নই। তা ছাড়া চুরি করার মত ঘৃণিত কাজ আমাদেরকে দিয়ে হবে না।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইল জন। তারপর বলল, বিশ্বাস করছ আমাদের কথা?
নির্দ্বিধায় মাথা ঝাঁকাল কিশোর। করছি।
হাসি ফুটল কারনি আর ডটের মুখে।
ঘরে যাবে? পিটার বলল। একটা জিনিস দেখাব তোমাদের।
মাথা কাত করল কিশোর।
দুই বন্ধুর দিকে ফিরল পিটার। তোমরা চাকাটা লাগিয়ে ফেলো। আমি ওদের সঙ্গে একটু কথা বলে আসি।
তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে ঘরে ঢুকল পিটার। নিজের বেডরূমে নিয়ে এল। দেয়ালে ছোট-বড় নানা রকম পোস্টার লাগানো। সবই গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেলের ছবি।
এ জিনিসটা আশা করি সাহায্য করবে তোমাদের তদন্তে, বলে ড্রয়ার খুলল পিটার। পোস্টকার্ড সাইজের একটা কার্ড বের করল। তাতে নতুন মডেলের মস্ত
একটা ট্রাকের ছবি।
ছবিটা কিশোরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল সে, এটা আমার মিশিগানের বন্ধুদের। গত বছর ক্রিসমাসের সময় ওখানে ছিলাম আমি। উল্টে দেখাল কার্ডটা। দেখো, পেছনে নাম সই করা রয়েছে আমার বন্ধুদের। তারিখও দেয়া রয়েছে। বলতে পারো, কার্ড তো ডাকেও পাঠানো যায়। ওদের টেলিফোন নম্বর আছে আমার কাছে। ফোন করে কার্ডটার ব্যাপারে জানতে চাইতে পারো। সন্দেহ দূর হবে।
কার্ডটা হাতে নিল কিশোর। বলল, দেখিয়ে ভালই করলে। গোয়েন্দাগিরিতে কোন কিছুকেই সন্দেহের বাইরে রাখা যায় না, যতক্ষণ না কেসটার সমাধান হয়ে যায়। আচ্ছা, আরেকটা কথা। রাতের বেলা কি করে কারনি আর ডট? ওরা যে চুরিগুলো হওয়ার সময় বাড়িতেই ছিল, প্রমাণ করার উপায় আছে?
হাসল পিটার। বড়ই খুঁতখুতে মন তোমাদের। তবে সেটাকে দোষ বলছি না। এ রকম না হলে বড় গোয়েন্দা হওয়া যায় না। মাথা ঝকাল সে, হ্যাঁ, প্রমাণ করার ভাল উপায় আছে। ওরা দুজনেই সন্ধ্যার পর একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করে। মাঝরাত পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারো, এখানকার একটা চুরিও মাঝরাতের পরে হয়নি, সব আগে হয়েছে। আর রেস্টুরেন্টের নাম-ঠিকানা ফোন নম্বর লিখে দিচ্ছি, মালিকের নামও জেনে যাও, কারনি আর ডটের ব্যাপারে খোঁজ নিতে সুবিধে হবে।
তার আর দরকার হবে না, বলতে গেল মুসা, তোমাদের কথাতেই বিশ্বাস করলাম…
তাকে থামিয়ে দিয়ে কিশোর বলল পিটারকে, দাও, নাম-ঠিকানাগুলো লিখেই দাও। আর তোমার কার্ডটা আপাতত আমার কাছেই থাক।
০৯.
পরদিন আবার পাইনভিউ লেকে এল তিন গোয়েন্দা। জ্যাকসনের সঙ্গে কথা বলবে। সুযোগ পেলে বাড়ির ভেতর খুঁজে দেখবে। আর যদি আপনাআপনি সুযোগ না আসে, তাহলে সুযোগের ব্যবস্থা করবে।
দোকানের সামনের খোয়া বিছানো বিরাট আঙিনাটায় গাড়ি রাখল মুসা।
দোকানের দরজার পাশে রাখা জ্যাকসনের পিকআপ। নীল রঙের বডি।
উঁকি দিয়ে দেখে ফিসফিস করে বলল কিশোর, জ্যাকসনকে কেবল দেখা যাচ্ছে। কোন ভাবে বের করে দিতে পারলে, খোঁজাখুঁজিটা করা যেত। দেখি, কি করা যায়। আমি আর মুসা ওকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। রবিন, তুমি খোঁজ চালাবে।
ঘাড় কাত করল রবিন। ঠিক আছে।
দোকানে ঢুকল ওরা।
কাউন্টারের ওপাশে কতগুলো ফাত্না নিয়ে কি যেন করছে জ্যাকসন। বোধহয় বোঝার চেষ্টা করছে কোনটা ভালমত ভেসে থাকবে।