তবে বাইরে থেকে এলে মুশকিল হয়ে যাবে। কাউকে সন্দেহ করতে পারব না, মুসা বলল। ধরব কি করে ওকে?
দুজনের কথায় বিশেষ কান নেই কিশোরের। বেইট শপটার দিকে তাকিয়ে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে। মগজে গভীর ভাবনা চলেছে ওর। আচমকা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, জ্যাকসনের ব্যাপারে কি ধারণা তোমাদের?
মানে! চমকে গেল মুসা আর রবিন দুজনেই।
আগুন লাগার ঘটনাটা?
বড় বেশি ভাগ্যবান মনে হয়েছে ওদেরকে, জবাব দিল রবিন। আগুন লাগার আগে সমস্ত দামী দামী জিনিস সরিয়ে ফেলা। ঘর পুড়ে যাওয়ার পরেও জ্যাকসনের অতিরিক্ত নির্বিকার ভাব। কাকতালীয় মনে হয়।
ঠিক বলেছ, বাতাসে তর্জনী দিয়ে বাড়ি মারার ভঙ্গি করল কিশোর। নির্বিকার থাকার কারণটা বোঝা যায়। পুড়েছে তো কেবল মূল্যহীন ভাঙা একটা ছাউনি। পুড়িয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, কাজটা পিটারের। পুলিশ বা আমাদের নজর অন্য দিকে সরানোর জন্যেও এ কাজ করে থাকতে পারে। এক ঢিলে দুই পাখি।…কিন্তু আমি ভাবছি মোটিভটা কি? কেন চুরি করবে বুড়ো জ্যাকসন? তার টাকার অভাব হয়েছে বলে তো মনে হয় না!
তারমানে বুড়োকেই চোর সন্দেহ করছ তুমি? রবিনের প্রশ্ন।
কিংবা তার দুই নাতি। ওদেরকেই বেশি সন্দেহ হচ্ছে আমার। কতগুলো পয়েন্ট দিচ্ছি, ভেবে দেখো। এক, ওরা বিদেশী-অর্থাৎ এখানে সব সময় থাকে না। মাঝে মাঝে আসে দাদাকে সাহায্য করতে। দুই, অনেক দূরের শহরে থাকে ওরা। ম্যারিল্যান্ডে। চোরাই মাল নিয়ে ম্যারিল্যান্ডে গিয়ে আশপাশে কোনখানে যদি মালগুলো বিক্রি করে দেয়, জানার কথা নয় এখানকার পুলিশের, যদি খোঁজ না নেয়। ডোবার কি বলেছিল, মনে আছে? তার সন্দেহ দূরের কোন শহরে গিয়ে মাল বিক্রি করে দিয়ে থাকতে পারে চোরেরা। তারমানে ম্যারিল্যান্ডে খোঁজ নেয়নি। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করে শিওর হতে হবে। যাই হোক, তিন, জ্যাকির সন্দেহজনক আচরণ। লেকে ঝগড়ার সময় আমাদের পাত্তাই দিতে চায়নি, কিন্তু পরদিন যখন আগুন লাগার তদন্ত করতে গেলাম, যেচে এসে খাতির করতে লাগল। এর মানে কি? মানে হলো, আমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা, যে পিটারই প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে আগুনটা লাগিয়েছে। চার, আগুন লাগার পর ধোঁয়ার, গন্ধ। জ্যাকসন আর রকি কাছাকাছি থেকেও গন্ধ পেল না, আর বাথরূম থেকে গন্ধ পেয়ে বেরিয়ে গেল জ্যাকি। কিছুক্ষণ পর আগুন আগুন বলে চিৎকার করল। এর একটাই ব্যাখ্যা, ধোয়ার গন্ধ মোটেও পায়নি সে। বেরিয়ে গিয়ে আগুন লাগিয়েছে ছাউনিতে। আগুন ভালমত লাগার পর চিৎকার করেছে। ধোয়ার গন্ধের কথা মিথ্যে বলেছে।
একটানা অনেক কথা বলে দম নিল কিশোর। তারপর বলল, এখন প্রশ্ন একটাই, চোরাই মাল কি ভাবে সরায় ওরা? পুলিশ যেহেতু ওদের সন্দেহ করে না, গাড়িতে করে নিয়ে সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে পাইনভিউ লেক থেকে। গত কয়েক বছরের রেকর্ড থেকে জানা যায়, কেবল শীতকালে চুরিগুলো হয়। প্রতিটি বাড়িতে চুরি করার পর পরই ম্যারিল্যান্ডে যায় না ওরা যাওয়া সম্ভব নয়, অনেক দূরের পথ। গেলে যেতে-আসতে বেশ সময় লাগবে। যায় একবারই। সেটা শীতের পর। সমস্ত চোরাই মাল জমিয়ে একসাথে নিয়ে যায়।
আরেকটা প্রশ্ন আসে এখন। মালগুলো কি করে? জবাব, লুকিয়ে রাখে। আর রাখে পাইনভিউরই কোনখানে। পুলিশ ওদের সন্দেহ করে না। তাই দোকানের মধ্যে কিংবা তার আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে রাখাটাই ওদের জন্যে সুবিধে। যদিও লুকানোর সবচেয়ে ভাল জায়গা নয় দোকানটা। কোন কারণে যদি পুলিশ সন্দেহ করে বসে, গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে, বেরিয়ে যাবে মালগুলো।
ঝুঁকি নিতে না চাইলে দোকানে রাখবে না ওরা। অন্য কোথাও লুকাবে। তবে সেটা পরের কথা। আগে আমাদেরকে দোকানেই খোঁজ করতে হবে। সেখানে পাওয়া না গেলে ভেবে দেখব, আর কোথায় লুকাতে পারে।
কিন্তু ওরাই যে চুরি করছে, অত শিওর হচ্ছ কি করে? মুসার প্রশ্ন।
এখনও হইনি। তবে হয়ে যাব।
পিটার আর তার দুই দোস্তকে কি সন্দেহের তালিকা থেকে একেবারে বাদ দিয়ে দিয়েছ?
না। তবে দোকানে খুঁজতে যেতে তো বাধা নেই। চোরাই মালগুলো ওখানে পেয়ে গেলে আমাদের কাজ সহজ হয়ে যাবে।
তাহলে এখন কি করব?
দিই একটু পাহারা-টাহারা। বলা যায় না, আজকেও চুরি করতে বেরোতে পারে। তাহলে হাতেনাতেই ধরে ফেলতে পারব।
হাসল রবিন। বেশি আশা হয়ে যাচ্ছে না?
পাহারা দিতে দোষ নেই।
ঘণ্টাখানেক ধরে লেকের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়াল ওরা। লেকের পাড়ের বাড়িঘরগুলো দেখল। কোনটায় আলো আছে, কোনটাতে নেই। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে থাকতে ভাল না লাগায় গরম এলাকায় বেড়াতে চলে গেছে ওসব বাড়ির লোকরা। আর এই সুযোগে বিনা বাধায় ওসব বাড়িতে ঢুকে পড়ছে চোর।
রাত যত বাড়ছে, শীতও বাড়ছে। সেই সঙ্গে ধেয়ে আসছে কনকনে ঠাণ্ডা ঝোড়ো বাতাস। যত গরম পোশাকই গায়ে থাকুক, ঠেকাতে পারছে না। সুচের মত বিঁধছে। হাড় পর্যন্ত ঠাণ্ডা করে দিতে চাইছে।
আরও আধঘণ্টা ঘুরে বেড়িয়ে পুরো লেকটাকে এক চক্কর দিল ওরা। অস্বাভাবিক কোন কিছুই চোখে পড়ল না। ওদের দেখে নিশ্চয় সাবধান হয়ে গেছে চোর। চুরি করতে বেরোয়নি।
.
০৮.
পরদিন আবার এল ওরা পাইনভিউতে।
পিটারদের বাড়ির সামনের সরু রাস্তাটা পেরোনোর সময় মুসার বাহুতে হাত রাখল কিলোর, রাখো তো।