চলুন তাহলে। আজ আপনার বাড়ি দেখব।
চলো। কফিটা তোমাদের সঙ্গে বসেই খাব।
ছিপ, সুতো এ সব গুছাতে তাকে সাহায্য করল তিন গোয়েন্দা। পেছন পেছন গিয়ে উঠল তার সবুজ পিকআপ ট্রাকটায়। লেক থেকে মাইলখানেক দূরে ডগলাস কার স্যালভিজ ইয়ার্ড-এ পৌঁছতে সময় লাগল না। কাঁটাতারের বেড়া দেয়া ইয়ার্ড। পুরানো, ভাঙাচোরা বাতিল গাড়িতে ভর্তি।
গেট দিয়ে ঢুকতেই বাড়ির ভেতর থেকে ঘেউ ঘেউ করে উঠল একটা কুকুর।
গাড়ি থেকে নেমে ডগলাসের বাড়িতে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। হলঘরের পাশেই শিকলে বাধা কুকুরটাকে দেখতে পেল। মনিবকে দেখে কাছে আসার জন্যে অস্থির হয়ে উঠল ওটা।
এগিয়ে গিয়ে কুকুরটার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিল ডগলাস। এই তো আমি এসে গেছি, পুটি। খুব একা একা লাগছিল? আজ আর বেরোব না, যা, কথা দিলাম।
কুকুরের নাম পুটি। আজব নাম, মনে হলো মুসার। কিছু বলল না।
চুরি আর জ্যাকসনের বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করল তিন গোয়েন্দা। নতুন কিছু জানাতে পারল না ডগলাস। কফি খাওয়া শেষ হলো। যাওয়ার জন্যে উঠল ওরা।
গেট পর্যন্ত ওদের এগিয়ে দিল ডগলাস আর পুটি।
আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখল ডগলাস, কোন প্রয়োজন হলেই যেন নির্দ্বিধায় চলে আসে গোয়েন্দারা।
.
০৭.
এখন কি করব? রবিনের প্রশ্ন। বহুত তো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। কিছুই তো এগোল না।
আমি এখনও ভাবছি, নিচের ঠোঁটে ঘনঘন দুবার চিমটি কাটল কিশোর, মিস্টার মরগানের কালকের কথাটা।
কোন্ কথা? ভুরু নাচাল মুসা।
ওই যে, কালকে বললেন, চুরি হওয়ার পর কোন গাড়িটাড়ির শব্দ তাঁর বাড়ির কাছ দিয়ে যেতে শোনেন না।
তাতে কি?
তাতে? গাড়ির শব্দ যদি না শুনে থাকেন তিনি, তাহলে ধরে নিতে হবে চুরির মাল নিয়ে চলে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না চোরের। কারণ, সে এখানকারই বাসিন্দা।
তে কি করতে চাও এখন?
পরীক্ষা করে শিওর হব, মরগান আঙ্কেলদের বাড়ি থেকে গাড়ির শব্দ সত্যিই কতখানি শোনা যায়।
নেই কাজ তো খই ভাজ। এরচেয়ে বুড়োর সঙ্গে বসে মাছ ধরলে কাজ হত। আইস ফিশিঙের এতবড় একটা সুযোগ পেয়েও আমি হাতছাড়া করতে রাজি না এবার, মুসা বলল।
অনেক সুযোগ পাবে। আগে কেসটার একটা কিনারা করে ফেলি, কিশোর বলল।,
আর যেতে অরাজি হলো না মুসা, চলো তাহলে।
মুসার পাশে বসে নির্দেশ দিতে লাগল কিশোর। ভ্যান চালাতে বললে পাশের রাস্তা ধরে মরগান আঙ্কেলদের বাড়ির দিকে। সরু রাস্তাটা ধরে এগোনোর সময় তীক্ষ্ণ নজর রাখল কিশোর।
সামনে চুলের কাঁটার মত একটা মোড়।
মোড় পেরোলেই মরগান আঙ্কেলের সীমানা।
খানিকক্ষণ রাস্তাটায় আসা-যাওয়া করল ওরা। বাড়ির সামনে দিয়ে।
মরগান আঙ্কেল ঠিকই বলেছেন, পেছনের সীট থেকে বলে উঠল রবিন। বাড়ির কাছ দিয়ে চুপি চুপি পালিয়ে যাওয়ার সাধ্য নেই কারও।
তুষারপাতের সময় ইঞ্জিনের শব্দ ঢাকা পড়ে যেতে পারে, মুসা বলল।
গেটের ভেতর গাড়ি ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে এল শালি। কাছে এসে বলল, অনেকক্ষণ আগেই তোমাদের আসার শব্দ পেয়েছি। বাড়ির পেছনে ঘোরাঘুরি করছিলে কেন?
প্রশ্নের জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর, তুষারপাতের সময়ও কি বাড়ি থেকে গাড়ির শব্দ শুনতে পাও?
নিশ্চয়ই। কেন?
এবারও শার্লির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মুসার দিকে তাকাল কিশোর, পেলে তো তোমার কথার জবাব?
কিন্তু এর পরও সন্তুষ্ট হতে পারল না কিশোর। রবিনকে বাড়ির ভেতরে গিয়ে কান পেতে থাকতে বলে বাড়ির সামনে-পেছনে বার বার ঘোরাঘুরি করতে থাকল ভ্যানটা নিয়ে। ফিরে এসে রবিনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল, যতবার বাড়ির কাছে দিয়ে গাড়ি গেছে, ততবার ইঞ্জিনের শব্দ শুনেছে রবিন। এমনকি দুই মাইল গতিতে আস্তে চালিয়েও ফাঁকি দিতে পারেনি রবিনকে। শেষে ভ্যানের শব্দ বেশি বলে শার্লিদের শব্দ কম করা সেডান গাড়িটা চালিয়ে দেখল। ওটার শব্দও স্পষ্ট শোনা যেতে লাগল বাড়ির ভেতর থেকে।
মরগান আঙ্কেল বাজার থেকে ফিরলে তাকে সব জানাল কিশোর।
তাহলেই বোঝো, তিনি বললেন। পুলিশকে আমি কোনমতেই বিশ্বাস, করাতে পারিনি। তাদের ধারণা, ঘুমিয়ে ছিলাম বলে আমি শুনতে পাইনি।
স্বামীর পক্ষ নিয়ে বেলী আন্টি বললেন, রাতে ও প্রায় ঘুমায়ই না আজকাল। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। টিভি দেখে। বই পড়ে। যতগুলো চুরি হয়েছে, সব হয়েছে সন্ধ্যারাতের সামান্য পরে। অত তাড়াতাড়ি আমিই ঘুমাই না। শার্লির বাপের তো কথাই নেই।
হু, কিশোর বলল। আমরা বুঝতে পেরেছি। দুই সহকারীর দিকে তাকাল, চলল, বাইরেটা গিয়ে আরেকবার দেখে আসি।
এবারও ড্রাইভিং সীটে বসল মুসা। বাড়িঘরগুলোর কাছ থেকে বেশ খানিকটা সরে এসে লেকের পাশে একটা খোলা জায়গায় গাড়ি রাখল। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। বাড়ছে ঠাণ্ডা।
দেখছ, কত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়ে যায় এখানে? রবিন বলল।
তদন্তটা গরমকালে করতে পারলে ভাল হত, মুসা বলল।
গাড়ির বুট খুলে গরম কাপড়-চোপড় বের করতে শুরু করল কিশোর। ভারী জ্যাকেট পরল। পায়ে দিল কাটা বসান বুট। যাতে বরফের ওপর হাঁটার সময় পিছলে না পড়ে।
বনে ঢুকল ওরা। ছয় ফুট লম্বা ডাল কেটে নিয়ে ছড়ি বানাল। বরফে বুকে দেখে বোঝার জন্যে, পাতলা না ভারী।
কথাটা ঠিকই বলেছ তুমি, কিশোরকে বলল রবিন। চুরিটা যে-ই করুক, গাড়িতে করে আসে না। এখানেই বাস করে। কিংবা রাতের বেলা বাইরের কোন জায়গা থেকে এসে বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে ঢোকে। কিন্তু তাতে যে পরিমাণ ঝুঁকি আর কষ্ট হবে, কোন চোরই সেটা করতে রাজি হবে কিনা সন্দেহ আছে আমার।