কিশোর বলল, কেউ একজন পিটারের পেছনে লেগেছে। মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে নানা ভাবে। আজ আরেকটু হলে আমাদের চোখের সামনেই শেষ হয়ে যাচ্ছিল সে।
তাতে নিজের বিপদটা ডেকে আনল কোথায়? এখনও বুঝতে পারছে না মুসা।
কেন, শুনলে না কলিন আর রোমকে নিজেই বলেছে তাকে মেরে ফেললে ল্যাঠা চুকে যায়?
সে তো রসিকতা।
কিন্তু রসিকতাটাকেই যদি সিরিয়াস ধরে নেয়া হয়? পিটার মরে গেলে তাদের লাভ আছে। সুতরাং সন্দেহের তালিকায় দু-জনের নাম যোগ হলো।
হুঁ।
সেলুনে চুল কিশোর।
চুল কাটতে কাটতে জিনাকে বলল বব, খুব সুন্দর তোমার চুল। এমন করে সাজিয়ে দিতে পারি মঙ্গল গ্রহের ছেলেরাও ঝাঁক বেঁধে লাগবে তোমার পেছনে।
লাল হয়ে গেল জিনার গাল।
তোমার বকর বকর বাদ দাও তো, ব, পিটার বলল। ভিনগ্রহ ছাড়া আর কিছু বোঝো না?
চোখ ওল্টাল বব, ভিনগ্রহ বাদ দিতে হলে মহাকাশকে বাদ দিতে হয়। আমাদের অস্তিত্ব তাহলে থাকল কোথায়? ওখান থেকেই তো এসেছি আমরা…
তুমি এসেছ, আমি নই!
কাঁচি চালানো বন্ধ করে ফেলল বব। পিটারের ঘাড়ে লেগে থাকা কাটা চুল ব্রাশ দিয়ে চেচে নিচের কাপড়ে ফেলল। সুন্দর কাটা হয়েছে। এত তাড়াতাড়ি আর কেউ পারবে না।
নাপিতের চেয়ার থেকে নেমে এল পিটার। কিশোরদের দিকে তাকিয়ে বলল, খুব খিদে পেয়েছে। চলো কিছু খেয়ে আসি। সাড়ে সাতটা বাজতে এখনও প্রায় দেড় ঘন্টা বাকি।
ভাল কথা মনে করেছেন, হেসে বলল মুসা।
তারমানে আমাদের চ্যানেলে আসছ না তুমি? কিছুটা হতাশ কণ্ঠেই পিটারকে জিজ্ঞেস করল বব।
তোমাদের কিসে?
ভুলে গেছ? শো-র আগে কয়েকজন অভিনেতা আমার ওখানে আসছে। আধঘণ্টার জন্যে একটা অনুষ্ঠান হবে। আমাদের চ্যানেলে পৌঁছার চেষ্টা করব আমরা, অতীত জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ করব..
মুখ বাঁকাল পিটার, অনেক ধন্যবাদ তোমাকে, বব। অতীত জীবনের চেয়ে একটা চীজবার্গারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই এখন বেশি ভাল লাগবে আমার।
সেলুন থেকে বন্ধুদের বের করে নিয়ে গেল পিটার। ফিরে তাকালে দেখতে পেত রহস্যময় হাসি ফুটেছে নাপিতের ঠোঁটে।
সিঁড়ি দিয়ে পিটারের ড্রেসিং রূমে নেমে এল গোয়েন্দারা। এই প্রথম ভাল করে ঘরটা দেখার সুযোগ পেল কিশোর। দেয়াল জুড়ে বিশাল বিজ্ঞাপন করা হয়েছে। পিটার হাইয়েমের–খবরের কাগজের কাটিং, প্রেস রিলিজ, বাঁধাই করা সাদা কালো ছবি, ভক্তদের চিঠি সাটিয়ে রাখা হয়েছে। সবখানে ছড়িয়ে আছে পিটারের বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ভোলা হাসিমুখ।
বাহ, খুব বিখ্যাত লোক মনে হয় আপনি, মুসা বলল।
টান দিয়ে গায়ের শার্টটা খুলে ফেলল পিটার। কাটা চুল লেগে আছে তাতে। কাপড়ের র্যাক থেকে আরেকটা শার্ট নিয়ে পরতে পরতে বলল, থিয়েটারের লোকের কাছেই শুধু পরিচিত। তা-ও নিক ফ্লিন্টকে কাজে লাগানোয়। এই লাইনে সবচেয়ে ভাল এজেন্ট সে।
পিটার, শোনো, প্রসঙ্গ পরিবর্তন করল কিশোর, একটু আগে প্রযোজকদের সঙ্গে তোমার কথা কাটাকাটিটা শুনে ফেলেছি আমরা।
একটা সানগ্লাস পরল পিটার। চলো, বার্গার ব্রিসটোতে খেতে যাব। ওখানেই আলাপ করা যাবে। এই জায়গাটায় দম আটকে আসছে আমার।
দরজার বাইরে সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা গেল। কাঁধে ক্যানভাসের ব্যাগ ঝুলিয়ে নেমে যাচ্ছে কয়েকজন অভিনেতা। পিটারকে দেখে হাত নাড়ল।
রলিকেও দেখা গেল ওদের মাঝে। কালো চোখ নাচিয়ে পিটারকে বলল, ববের ওখানে যাবে না?
তোমাকেও পটিয়ে ফেলেছে নাকি?
হাসল রলি, ভালই লাগে। উদ্ভট সব কাণ্ড করে বব। আমরা কল্পনা করে নিই নানা রকম শব্দ শুনছি। বেশ মজা পাই। আসতে পারো, তোমারও খারাপ লাগবে না।
আমার খিদে পেয়েছে।
ও, এ জন্যে যাবে না? এটা একটা সমস্যা হলো? কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে জিপার খুলল রলি। ভেতর থেকে বের করল প্লাস্টিকের বড় একটা পোটলা। বার্গার বের করে দিল।
দ্বিধা করল পিটার। বন্ধুদের দিকে চেয়ে বলল, তোমরা কি বলো?
তাজা বনরুটি আর গরুর মাংসের বড়ার সুগন্ধ যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল নাকে। হাত বাড়াতে গিয়েও সামলে নিল কিশোর, অনেক কষ্টে নিরস্ত করল নিজেকে। শরীরটাকে পিপে বানিয়ে সারাক্ষণ কষ্ট পাওয়ার চেয়ে খাবারের কষ্ট ভাল। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, তা যাওয়া যায়। নতুন একটা জিনিস দেখতে পাব, অসুবিধে কি?
বার্গার নিতে মুহূর্ত দ্বিধা করল না মুসা, কিন্তু ববের ওখানে যাওয়ার কথা ভাবতেই থমকে গেল, অতীত জীবন! ভূতুড়ে কোন ব্যাপার নয় তো?
তার দিকে তাকাল রলি। বুঝতে পারল না।
জিনা বলে দিল, ভূতকে ভীষণ ভয় পায় মুসা।
.
ও, হাসল বলি। না না, ভূতপ্রেত নেই ওখানে। গ্যারান্টি দিতে পারি।
রলি ভূত নেই বললেও পুরো ব্যাপারটা ভূতুড়েই মনে হলো মুসার কাছে।
পিটারের গাড়িকে অনুসরণ করে ছোট একটা দোতলা বাড়ির পার্কিং স্পেসে গাড়ি ঢোকাল কিশোর। পিকআপটা না নিলেও চলত, এক গাড়িতেই জায়গা হয়ে যেত সকলের, কিন্তু বার্গারের লোভ যদি শেষ পর্যন্ত সংবরণ করতে না পারে এই ভয়ে খাবারওয়ালা গাড়িতে গেলই না সে।
সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বব রডম্যান। ঘন ভুরুর নিচে তার দৃষ্টি কেমন বদলে গেছে, নাপিতের দোকানে চুল কাটার সময় যেমন ছিল তেমন নয়, যেন বহুদূরে কোথাও তাকিয়ে আছে। স্বাগত জানাল, জুতো খুলে ঢোকো, অনেক যত্ন করে মেঝে পরিষ্কার করেছি, এই বলে।