আমাকেই করে, মাথা ঝাঁকালেন জাপা, তবে ডাটাগুলো আমি ঢোকাই না। আরেকজন লোক আছে, সে এসে করে রেখে যায়। স্টেজ ম্যানেজারের দায়িত্ব হলো স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী কাজ করা। কিন্তু এই শো-র মত এত জটিল একটা শো-র জন্যে শুধু স্ক্রিপ্ট যথেষ্ট নয়, কম্পিউটার সেট আপ দরকার। আমার জন্যে সব কিছু প্রোগ্রামিং করে দিয়ে যায় একজন ওস্তাদ কম্পিউটার প্রোগ্রামার।
এত জটিল?
হ্যাঁ, এত জটিল। একটু এদিক ওদিক হয়ে গেলেই গেল। দেখা যাবে বসার ঘরে ঢুকে পড়েছে মোটরগাড়ি, দিনের বেলার দৃশ্যে হয়ে যাবে-রাতের অন্ধকার…
মনিটরের লেখা পড়ে নির্দেশ দেন আপনি। যদি সেখানে ভুল লেখা থাকে এবং ধরতে পারেন, তাহলে নিশ্চয় ঠিকটা দেবেন?
তা তো বটেই। তবে ধরাটা বড় কঠিন…
জোরে জোরে কাশল মুসা।
কিশোর ফিরে তাকাতেই ইশারা করল।
ম্যানেজারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেদিকে রওনা হলো কিশোর আর জিনা। কাছে যেতেই মুসা বলল, ভেতরে তো মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে।
ফিরে তাকিয়ে দেখল কিশোর, ম্যানেজারকে দেখা যাচ্ছে না। গিয়ে কান পাতল ড্রেসিং রুমের দরজায়।
প্রথম কণ্ঠটা জোরাল, খানিকটা খসখসে, আবার বিশ্বাস করতে বলছ কি করে? একবার শয়তানি করে বললে আর করবে না, বিশ্বাস করলাম। কিন্তু আবারও করলে, উইকএন্ডে চলে গেলে ইয়োসিমাইটে। তারপরেও বলছ…
এ নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে, মিস্টার কলিন, পিটারের কণ্ঠ। মাঝে মাঝে কোনখান থেকে ঘুরে আসা ভাল, আপনিই বলেছেন…
তাই বলে পাহাড়ে চড়তে বলেছি? যখন জানো, নেতার অভিনয় করার জন্যে এই শো-তে আর কেউ নেই? যদি তোমার পা ভাঙত, কিংবা গোড়ালি মচকাত, কি অবস্থাটা হত! এমন সময় করলে কাণ্ডটা যখন টিকিট বিক্রি হতে আরম্ভ করেছে।
ভারি একটা কণ্ঠ বলল, দুই হপ্তা বন্ধ রাখায় অনেক লস হয়েছে আমাদের। দর্শক গেছে খেপে। টিকিটের দাম ফেরত দিতে হয়েছে, আরও নানা রকম গচ্চা। তারপরেও মুক্তি পাইনি খবরের কাগজওলাদের হাত থেকে। ওদের কুনজরে পড়েছি তো পড়েছিই, ভাল হওয়ার আর নাম নেই। আমি বাবা আর এর মধ্যে টাকা ঢালতে রাজি নই। যা যাওয়ার গেছে, লাভের আশা বাদ দিয়ে এখন লোকসান বাঁচানোর চেষ্টা করব।
আর ওসব বলে লাভ নেই, রোম, কলিন বললেন। অনেক দূর এগিয়ে গেছি, এখন আর শো বন্ধ করা যাবে না কোনমতে। দুনিয়াতে একজনই তো নেই, আরও লোক আছে…
আর্ট টিলারিকে আমার জায়গায় নেয়ার কথা ভাবছেন তো? বলে উঠল পিটার। সাংঘাতিক ট্যালেন্টেড অভিনেতা…এ কথাই বলতে এসেছেন আমাকে? তাহলে কানাঘুষাটা সত্যি, আমি ভাবছিলাম কিছু না।
ইয়ে… দ্বিধা করলেন রোম, আমরা চাই টিকেট বিক্রি।.
দীর্ঘ এক মুহূর্ত নীরব থাকার পর পিটার বলল, মিস্টার রোম, টাকাটা আপনার। আপনি ইচ্ছে করলে ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ভেঙে দিতে পারেন, কিংবা টিকিয়ে রাখতে পারেন। সুতরাং কাকে দিয়ে কাজ করাবেন, সেটাও আপনার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই নির্ভর করে। আনুন টিলারিকে। দামী আর্টিস্ট আনার ঠেলা কাকে বলে বুঝবেন তখন। নিজের প্রশংসা করি না, তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমাকে বাদ দেয়ার ফল ভাল হবে না আপনাদের জন্যে।
তোমাকে রেখেই বা আমাদের কি লাভ? কলিন বললেন। পরের উইকএন্ডে তো আবার পালাবে।
আমার ব্যাপারে আপনার কি রকম ধারণা হয়েছে বুঝতে পারছি, মিস্টার কলিন। কিন্তু এই নাটকের জন্যে আমি নিবেদিত। এখনও লোকে তেমন করে চেনে না আমাকে, নাম ছড়ায়নি, কিন্তু নাটকটা দেখার পর ছড়াতে দেরি হবে না। লোকে তখন আমার সঙ্গে সঙ্গে আপনার কথাও বলবে; বলবে, আপনিই আমাকে খুঁজে বের করেছেন।
পিটারের পক্ষে কথা বলে উঠতে ইচ্ছে করল কিশোরের। পরের কথাগুলো শোনার জন্যে আরও জোরে কান চেপে ধরল দরজায়।
আমার মনে হয়, ব্যাপারটা নিয়ে পরে আরেকবার আলোচনায় বসতে পারি আমরা, খানিকটা নরম হলেন কলিন, মাথা ঠাণ্ডা হলে।
চেয়ার ঠেলার শব্দ হলো। তাড়াতাড়ি দরজার কাছ থেকে সরে এল কিশোর, মুসা আর জিনা। শুনতে পেল পিটার বলছে, আরেকটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, আমার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতে লেখা আছে কোন কারণে যদি আমাকে বাদ দেয়া হয়, তাহলেও আমার বেতন ঠিকই দিতে হবে। টিলারিকে নিলে দু-জনের বেতন দিতে হবে আপনাকে। বিরাট অঙ্কের টাকা। যতদিন নাটকটা চলবে, টাকা দিতে হবে আমাকে।
রোমের ঝাঁঝাল কণ্ঠ শোনা গেল, কলিন, কি বলে? এ কথা তো আমাকে বলোনি তুমি?
চুপ করে রইলেন কলিন।
মৃদু হাসি শোনা গেল পিটারের। এতগুলো টাকা বাঁচাতে হলে হয় আমাকে দিয়েই অভিনয় করাতে হবে, নয়তো আমাকে মেরে ফেলতে হবে।
পায়ের শব্দ, রাগত ঘোৎ-ঘোঁতের পর ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা।
জিনা আর মুসা ম্যাগাজিন পড়ার ভান করল। টেবিলে রাখা জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতে লাগল কিশোর। দরজা খুলে তোক বেরোচ্ছে, তাতে যেন কিছু এসে যায় না তার।
তবে পেটের মধ্যে বিশ্রী একটা অনুভূতি হচ্ছে। মেরে ফেলার কথাটা এভাবে কলিন আর রোমের সামনে বলে ফেলাটা বোধহয় উচিত হয়নি পিটারের!
.
০৫.
নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে, বিড়বিড় করল কিশোর।
মানে? বুঝতে পারল না মুসা।
কলিন আর রোমের সঙ্গে পিটারের কথা কাটাকাটির খানিক পর সেলুনের বাইরে কথা বলছে দুই গোয়েন্দা। ভেতরে দাঁড়িয়ে পিটারের চুল কাটা দেখছে। জিনা। যে লোকটা কাটছে তার নাম বব রডম্যান।