তাহলে বদলে ফেলছেন না কেন?
মাথা নাড়ল মেকানিক। নেই। স্টকে রাখি না আমরা কেউই রাখে না। বানিয়ে আনতে হয়। অর্ডার দিলে বানিয়ে দেয়, দু-তিন হপ্তা লাগে। আবার হাসল সে। অপেক্ষা করতেই হবে তোমাকে। আর কোন উপায় নেই। এ কদিন চলাচলের অন্য কোন ব্যবস্থা করে নাওগে।
কোনমতেই কি চালু করা যায় না? অনুনয় করল মুসা, কোন ভাবে?
আবার মাথা চুলকাল মেকানিক, একটা কাজ করা যায় অবশ্য। আমার এক বন্ধুর গাড়ি ফেলে গেছে, নিতে দেরি হবে। তার গাড়িরটা
তাই দিন! লাফ দিয়ে গিয়ে মেকানিকের হাত জড়িয়ে ধরল মুসা। গাড়িটা বড় দরকার! অভ্যাস হয়ে গেছে। গাড়ি ছাড়া একদম চলতে পারি না।
মাথা ঝাঁকাল মেকানিক, দেখি কি করা যায়।
.
উফ! মরে গেলাম। খাইছে, কিশোর, গর্তটও দেখো না নাকি! মাথা নিচু করে ফেলেছে মুসা। বাড়ি লেগেছে যেখানটায়, ডলছে।
সরি, কিশোর বলল, সত্যিই দেখিনি। আসলে খুব একটা চালাই-টালাই না, জানোই তো…
ভাগ্যিস রবিন আসেনি, দুজনের মাঝে মোড়ামুড়ি করে আরেকটু জায়গা বের করার চেষ্টা করল জিনা।চ্যাপ্টা হয়ে যেতাম এতক্ষণে।
রবিন গেছে লজের ওখানে।
কিশোর বলল, আর কষ্ট করতে হবে না। এসে গেছি।
বড় একটা থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুটো সাদা গাড়ি। রাস্তা জুড়ে তারের ছড়াছড়ি। গিজগিজ করছে ক্যামেরাম্যান আর টেকনিশিয়ানে, চিৎকার করে নির্দেশ দিচ্ছে, আলো ঠিক করছে। সব কিছুর ওপরে ক্রেনের সাহায্যে নামানো হচ্ছে বিশাল এক সাইনবোর্ড, তাতে লেখা:
ওয়াইল্ড! ওয়াইন্ড! ওয়াইল্ড।
ভাল করে দেখার জন্যে জানালা দিয়ে গলা বের করে দিল কিশোর।
মুসা বলল, সময়মতই এসেছি। টিভির লোকেরা ইন্টারভিউ শুরু করেনি এখনও।
আই, কিশোর! ডাক শোনা গেল।
বিশাল তাঁবুর নিচে উঁচু ক্যানভাস চেয়ারে বসে আছে পিটার। কালো পোশাক পরা একজন লোক তার চুল ঠিক করছে। কপালে পাউডার মাখাচ্ছে এক মহিলা। দু-জনকেই সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল পিটার। হাত নেড়ে ডেকে বলল, এসো। ক্যামেরা রেডি হয়ে গেছে।
বুলহর্ন মুখে লাগিয়ে আদেশ দিল একজন দাড়িওয়ালা লোক, জায়গাটা পরিষ্কার করুন, প্লীজ!
আধ ব্লক দূরে পিকআপটা পার্ক করে রেখে এল কিশোর। জিনা আর মুসাকে নিয়ে দৌড়ে গেল থিয়েটারের সামনে। কাঠের রেলিঙের বেড়া দিয়ে জায়গা আলাদা করে দেয়া হয়েছে দর্শকদের জন্যে, যাতে শূটিং দেখতে পারে। সেখানে এসে দাঁড়াল ওরা।
তাঁবুর ডানধারে গিয়ে দাঁড়াল পিটার।
সিল্কের শার্ট আর ঢলঢলে স্কার্ট পরা এক মহিলার চুলে স্প্রে করছে এখন হেয়ারড্রেসার। দ্রুত কাজ শেষ করে সরে গেল সে। মাইক্রোফোন হাতে পিটারের দিকে এগোল মহিলা। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ঝলমলে হাসি হাসল।
শোবিজ টুডের নিতা নিউমার, জিনা বলল।শো-টা খুব ভাল লাগে আমার।
খালি তো বকর বকর করে, মুসা বলল। এর বদনাম, ওর সমালোচনা, এই তো খালি…
তুমি কি বুঝবে ওসব! রেগে উঠল জিনা। তোমার তো খালি খেলা, অহেতুক সময় নষ্ট…
আহ, থামো তো তোমরা! ধমক দিল কিশোর। এটা ঝগড়ার সময় হলো নাকি…দেখি, শুনি কি বলে?
নাটকীয় ভঙ্গিতে কথা বলল নিতা, চুপ হয়ে গেল দর্শক, সবাই জানেন আপনারা ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড গারবার থিয়েটারের একটা নতুন মিউজিক্যাল শো, অনেক দিন থেকে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় আছে। দারুণ একটা জিনিস, দর্শককে যেমন মজা দেবে, টাকাও আসবে হুড়মুড় করে। কিন্তু একটা উত্তেজনা চলছে ভেতরে ভেতরে। চ্যানেল ওয়ানের তদন্তকারী দল জেনে গেছে আজব কিছু ঘটছে এখানে, সবই হৃদয় জয় করা অভিনেতা পিটার হাইয়েমকে ঘিরে। পিটারের কাছে এখন আমাদের প্রশ্ন, সত্যিই কি ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড বিপজ্জনক হয়ে উঠছে তাঁর জন্যে?
পিটারের দিকে মাইক্রোফোন বাড়িয়ে দিল নিতা।
কিন্তু পিটার কথা বলার আগেই ক্রেনের কাছে দাঁড়ানো একজন শ্রমিক চিৎকার করে উঠল, সরুন! সরে যান।
ওপর দিকে একবার তাকিয়েই তীক্ষ্ণ চিৎকার করে তাঁবুর মধ্যে ডাইভ দিয়ে পড়ল নিতা। তার চারপাশের লোকেরা হাত থেকে ক্লিপবোর্ড, স্যান্ডউইচ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সব ছেড়ে দিয়ে যে যেদিকে পারুল ছুটে পালাল।
কিশোর তাকিয়ে আছে ওপর দিকে। বিশাল সাইনবোর্ডটা ঝুলে আছে এখন মাত্র একটা তার থেকে। আরেকটা তার বোর্ডের গোড়া থেকে ছিঁড়ে গেছে।
বাকি তারটাও ছিঁড়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারল সে। ভারি বোর্ডটা ধরে রাখার সামর্থ্য নেই। চিৎকার করে উঠল কিশোর, পিটার, সরে যান?
.
০৩.
আর কোন উপায় না দেখে রাস্তাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল পিটার। গড়িয়ে সরে গেল।
বিকট শব্দ করে রাস্তায় পড়ে ভাঙল বোর্ডটা। দু-হাতে মুখ ঢেকে বসে পড়েছে কিশোর, মুসা আর জিনা।
তারপর একধরনের বিশ্রী নীরবতা। চোখ থেকে হাত সরাল কিশোর। বোর্ডটা এখন প্লাস্টিকের একটা ধ্বংসস্তূপ। থিয়েটারের দেয়ালের কাছে, পিটার যেখানে রয়েছে তার পনেরো ফুট দূরে।
অবশেষে কথা ফুটল কিশোরের, কারও লেগেছে?
না, একসঙ্গে জবাব দিল মুসা আর জিনা।
বোর্ডটার দিকে এগোল কিশোর।
বিকেলের বাতাস চিরে দিল পুলিশের সাইরেন। ডান, বাম থেকে পা টিপে টিপে একজন দু-জন করে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে দর্শকরা। আবার ভিড় জমে গেল দেখতে দেখতে।
ঠেলেঠুলে ওদের ভেতর দিয়ে পথ করে এগোল কিশোর। পেছনেই রয়েছে জিনা আর মুসা। ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ক্যামেরাম্যানরা, দুর্ঘটনার পর পিটারের অবস্থা কি হয়েছে ধরে রাখার জন্যে যেন পাগল হয়ে গেছে।