জানি। আর কি বলে ফোনে?
খিকখিক করে কুৎসিত হাসি হাসে, পুরুষেরও হতে পারে, মহিলারও। বুঝতে পারি না।
চিঠিতে কি লেখে?
এক্কেবারে পাগলের প্রলাপ পিটারের কণ্ঠ কেঁপে গেল। কি করে আমি মারা যাব, সেই খবর জানায়। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে যা লিখেছে তার মানে হলো–রক্তমাখা সিংহাসনে ডুবে মারা যাব আমি। বনের মত কোন কিছু এগিয়ে আসবে আমাকে গিলে খাওয়ার জন্যে…
চিঠিগুলো দেখতে পারলে হয়। কোন সূত্র মিলতে পারে।
চোয়াল স্কুলে পড়ল পিটারের, পাবে না! সাংঘাতিক চালাক! কোন সূত্র রাখেনি।
সেটা দেখলেই বুঝব, মুসা বলল।
কি জানি…এমন খারাপ লাগে না!…মনকে বোঝাই, ও কিছু না, কোন ভক্ত হয়তো রসিকতা করছে। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টগুলো ঘটতে শুরু করতেই বুঝলাম রসিকতা নয়।
অ্যাক্সিডেন্ট?
সিনারি খসে পড়ে। আমার যেখানে নাচার কথা রহস্যময় ভাবে স্টেজের সেখানে পড়ে থাকে পেরেক, ব্লেড ভাঙা এ সব। ভয় ফুটল পিটারের চোখে। সত্যি, আমার সাহায্য দরকার। মনে মনে একজন গোয়েন্দা খুঁজছিলাম। কিন্তু কি ভাবে জোগাড় করতে হয়, কাকে বিশ্বাস করব, বুঝতে পারছিলাম না। গোয়েন্দা বলতে আমার চেহারায় ভাসে ছোটখাট একজন বুড়ো মানুষ, মঞ্চের পাঁচশো হাতের মধ্যে থাকলেও চোখে পড়ে যাবে। এমন কাউকে দিয়ে আর কি গোয়েন্দাগিরি করা? তবে তোমাদের বয়েসী হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, বলতে পারি আমার বন্ধু। কেসটা নেবে? তোমাদের সাহায্য দরকার আমার।
মুসার দিকে তাকাল কিশোর। কথা হয়ে গেল চোখে চোখে। পিটারের দিকে তাকাল সে। এক শর্তে করতে পারি কাজটা।
বলো।
আমাদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে। বলা যায় না, ভেতরের কেউও কাজটা করে থাকতে পারে, তোমার অতি পরিচিত কেউ।
স্বস্তি এবং কৃতজ্ঞতা একই সঙ্গে ফুটল পিটারের চোখে। বেশ, তাহলে এইই কথা। আমার কেসটা নিলে তোমরা। আজ রাত ছটার দিকে ড্রেসিং রুমে দেখা কোরো আমার সাথে। সাড়ে সাতটার আগে মেকাপ করতে হবে না আমার। তার আগে বেশ কিছুটা সময় পাব তোমাদের ঘুরিয়ে দেখানোর জন্যে। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে যেতে পারলে আরও একটা জিনিস দেখতে পাবে। টিভি থেকে সাক্ষাৎকার নিতে আসবে আমার। এক এক করে মুসা, আর কিশোরের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে দিল। সে। কি ভাগ্য! এমন করে দেখা হয়ে যাবে তোমাদের সঙ্গে বিশ্বাসই করতে পারছি
পিটারের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় তার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা আজব অনুভূতিতে মোচড় দিয়ে উঠল কিশোরের পেট। কথা খুব মনে থাকে তো। তার, সেজন্যেই ধোয়াটে ভাবে মনে আছে, ছোটবেলায় অভিনয় করার জন্যে যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াত তখন হত এই অনুভূতিটা।
তারপর থেকে অভিনয়ের জগৎটাকে ঘৃণা করে এসেছে। এমন হতে পারে, চরিত্রটাই তার পছন্দ ছিল না, মোটুরাম বানিয়ে তাকে এভাবে হেনস্তার মধ্যে ফেলে। দেয়া উচিত হয়নি পরিচালকের। হঠাৎ করে এখন মনে হচ্ছে, অভিনয় জিনিসটা আসলে খারাপ লাগে না তার। গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়েও বহুবার বহুরকম অভিনয় করতে হয়েছে। তফাৎ কেবল, সামনে তখন ক্যামেরা ছিল না, কিংবা সে মঞ্চের ওপর ছিল না।
সে যে জাত অভিনেতা তাতে কোন সন্দেহ নেই। নইলে মঞ্চের কাছাকাছি যাওয়ার কথা শুনে রক্তে দোলা লাগবে কেন? তার ওপর যোগ হয়েছে রহস্য। কেসটা হাতে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করল না ও।
.
০২.
বিকেল বেলা ইয়ার্ডের পুরানো পিকআপটা চালিয়ে মুসা আর জিনাকে নিয়ে পিটারের সঙ্গে দেখা করতে রওনা হলো কিশোর। পথে মুসা বলল, এখানে একটু রাখো তো। আমার গাড়িটা হয়েছে নাকি দেখে যাই।
আগের গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে মুসা। নিলামে আরেকটা গাড়ি কিনেছে। টয়োটা করোলা, ষাট হাজার মাইল চলেছে। একটা বড় ওঅর্কশপে দিয়েছে পার্টস-টার্টস বদলে ভাল করে মেরামত করে দেয়ার জন্যে।
কিশোর বলল, পাঁচটা তো বাজে প্রায়। এখন…
সময় তো আছে। দেখিই না। বেশিক্ষণ লাগবে না।
গ্যারেজটার নাম রকি বীচ অটো ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কাঁচের দরজাটা ঠেলে খুলে চিৎকার করে ডাকল মুসা, আমার গাড়িটার কি খবর?
ভেতরে হাইড্রলিক লিফটের জঙ্গল হয়ে আছে। প্রতিটি লিফটে বসে আছে। একটা করে গাড়ি, ছাতের আলোয় কিভুত ছায়া পড়েছে মেঝেতে। এককোণে চেয়ার থেকে ঘুমজড়িত চোখে তাকাল একজন লোক। মুসার দিকে একবার। তাকিয়ে দেয়ালের ঘড়ি দেখল। বলল, বাপরে! পাঁচটা বাজে! ঘুমিয়েই পড়েছিলাম! কি করতে পারি তোমার জন্যে, বলো?
আমার গাড়িটা দিয়ে গিয়েছিলাম। স্টীল-গ্রে রঙের টয়োটা করোলা। হয়েছে?
মাথা চুলকাল লোকটা। গাড়িগুলোর দিকে তাকাতে লাগল। স্টীল-গ্রে টয়োটা..স্টীল-গ্রে টমোটা… আঙুল তুলল, ওটা?
হতাশায় কাঁধ ঝুলে পড়ল মুসার। লিফটে বসে আছে তার গাড়িটা। কোন মেরামতিই হয়নি এখনও। বলল, কি-কিছু করেননি।
কি করব, তোমার একটা পিটম্যান-আর্ম ক্ষয়ে গেছে। ওটা রেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না…
কি ক্ষয়ে গেছে?
ওই যে, হাত তুলে দেখাল মেকানিক, লম্বা একটা রডের সঙ্গে দুটো টায়ার যুক্ত। ওটা হলো স্টিয়ারিং লিংকেজ, চাকাগুলোকে ঘোরায়। এই ঘোরানোর জন্যে দরকার পড়ে আরেকটা যন্ত্রের, একে বলে পিটম্যান আর্ম। লিংকেজকে স্টিয়ারিং গিয়ারবক্সের সঙ্গে যুক্ত করে এটা, সেটা আবার যুক্ত স্টিয়ারিং কলামের সঙ্গে, সেটা যুক্ত স্টিয়ারিং হুইলের সঙ্গে। হাসল সে, মাঝখানে দুটো দাঁত নেই, ফাঁক। বেশ শক্ত ধাতু দিয়ে তৈরি পিটম্যান আর্ম, কিন্তু তারপরেও চিরকাল ঠিক থাকবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই।