হু, মাথা দোলাল মুসা, বুঝতে পারছি।
আমার কিন্তু সে-রকম মনে হয় না, জিনা একমত হতে পারল না। নিজের ওপর নিজে দুর্ঘটনাগুলো কি করে ঘটাল সে?
সে তো ঘটায়নি, কিশোর বলল। হুমকি দিয়ে ফোনঃআসা, চিঠি আসা, এগুলো কেবল তার মুখের কথা, আমাদের কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি সে। চিঠিগুলো কোথায় যখন জানতে চেয়েছি, বলেছে ফেলে দিয়েছে। আমার তো। ধারণা, সব মিথ্যে কথা, ওরকম কোন চিঠি পাইনি সে। দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্যে লোক ঠিক করেছে সে-ই। এমন করে সাজিয়েছে, যাতে মনে হবে অল্পের জন্যে বেঁচে গেছে, কিন্তু সত্যি সত্যি কোন ক্ষতি হবে না। থিয়েটারের বাইরে সেদিন যে সাইনবোর্ডটা পড়ল, দেখেছ কোনখানে পড়েছে? পিটার যেখানে দাঁড়ানো ছিল তার চেয়ে কতটা দূরে?
দেখেছি, ক্যামেরার একেবারে চোখের সামনে, যাতে সহজেই ধরা পড়ে। বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছে জিনা।
আর ফ্ল্যাশ-পট অ্যাক্সিডেন্টটাও সাংঘাতিক বিপজ্জনক মনে হয়েছে, মুসা। বলল। কিন্তু এমন সময় ফেটেছে, যখন সরে যাওয়ার জন্যে ঘুরেছে পিটার।
রবিন বাল, জাহিব করে থাকতে পারে এ কাজ, অর্কেস্ট্রা পিট থেকে।
জাপার নির্দেশে, যোগ করল কিশোর। যাই হোক, এই ঘটনার পর পিটারের ড্রেসিং রূমে ঢুকেছি আমরা। নিক নামে একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল তখন সে। ব্যাপারটা নিয়ে প্রথমে মাথা ঘামাইনি আমি, যতক্ষণ না তার বিজ্ঞাপন প্রচারকের নামটা মনে পড়ল।
নিক ফ্লিন্ট। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ফ্লাশ-পট অ্যাক্সিডেন্টের খবরটা প্রচার করে দেয়ার জন্যে তাকে ফোন করেছিল পিটার। এখন বুঝতে পারছি গোপনে, আমাদের তদন্ত করার কথাটা খবরের কাগজকে কে জানিয়েছে। পিটার নিজে। এটাতে আরেকটা বিজ্ঞাপন হয়েছে তার।
ঠিক, কিশোর বলল। আর মনে হচ্ছে কম্পিউটারের দায়িত্বটা ছিল জাহিরের ওপর। চুরি করে থিয়েটারে ঢুকে কিছু কিছু কিউ গোলমাল করে দিত, অবশ্যই জাপার সহায়তায়।
তারপর সে-রাতে টোপাজের হাতে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেল জাহির, মুসা বলল। আর যেতে সাহস করেনি। তাই বাধ্য হয়ে গোলমাল করার কাজটা নিজেই করতে গেল পিটার।
কিংবা হয়তো দেখতে গিয়েছিল আজ সকালে, জাহির ঠিকমত সব করতে পেরেছে কিনা। কোন কিউটাতে দুর্ঘটনা ঘটবে, এটা জানা না থাকলে সত্যি সত্যিই দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই আগে থেকে সাবধান থাকতে চাইছিল।
সুতরাং কাল রাত থেকে শুরু করে আজ সকাল পর্যন্ত অনেক ভাবে ওদের বাধা দিয়েছ তোমরা, রবিন বলল। পুরো ব্যাপারটা ফাস হয়ে যাওয়ার ভয়ে শেষে তোমাদের পেছনেই লেগেছিল এরা। মুখ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল।
এক মিনিট, হাত তুলল জিনা। পোশাকে চুলকানির ওষুধ লাগানো আর মূর্তি ফেলার ব্যাপারটা তাহলে কি?
জবাবটা মুসাই দিতে পারল, নতুন পোশাকটা যেদিন পেয়েছে পিটার সেদিনের কথা মনে করো। একটা প্যাকেট হাতে বেরিয়ে গেল জাপা, বলল পপকর্নের প্যাকেট। আসলে তার মধ্যেই চুলকানির ওষুধ বলো আর বিষ বলো, জিনিসটা ছিল। পোশাকে লাগিয়েছিল সে-ই। তুমি যখন পোশাকটা ধরতে গেলে ইচ্ছে করে আয়নাটা ফেলে দিয়ে ভাঙল পিটার, তোমাকে সরানোর জন্যে। নাহলে তুমি ধরে ফেললে তোমারও হাত চুলকানি শুরু হতো। কে লাগিয়েছে হয়তো আন্দাজ করে ফেলতাম আমরা, এই ভয়ে তখন চুলকানির খবরটা জানাতে চায়নি পিটার।
কিশোর বলল, শেকসপীয়ারের মূর্তি ফেলার ঘটনাটা পিটার আর ওলি দুজনে। মিলে ঘটিয়েছে। ববের বাড়িতে যাওয়ার পথেই নিশ্চয় আলোচনা করে ঠিক করেছে, ওখানেও একটা দুর্ঘটনা ঘটাবে। দুজনেই বার্গার খেয়েছে, আঙুলে বনরুটির। তেল লেগেছিল। সেজন্যে মূর্তি আর বাতির সুইচ দুটোতেই লেগে গিয়েছিল ওই তেল। রলি তার ধরে টেনে টেবিল ল্যাম্পের প্লাগ খুলেছে, আর পিটার নিজের গায়ে নিজেই মূর্তি ফেলেছে। আমরা তখন চোখ বন্ধ করে আছি, ফলে কেউই দেখতে পাইনি কিছু।
কিন্তু পিটারের কপালে বাড়ি লেগেছিল, প্রশ্ন তুলল জিনা। আরেকটু হলেই কেটে যেত।
আমার কাছে অবাক লেগেছে, এত জোরে বাড়িটা লাগল, পরদিনই আবার মিলিয়ে গেল, বলল মুসা।
মেকআপ করে করেছিল ওরকম, জবাব দিল কিশোর। পকেটে বোধহয়। লাল মোম রেখে দিয়েছিল, কপালে লাগিয়ে দিয়েছে। নিজের কপাল নিজেই চেপে ধরে রেখেছিল, অন্য কেউ তো আর দেখতে যায়নি আঘাত কতখানি।
টার্নটেবলের ব্যাপারটা কি? আবার প্রশ্ন করল জিনা। একটা নিরপরাধ লোকের পা ভাঙল ওভাবে পিটার?
না, এই কাজটা সম্ভবত জাপা করেছে। টার্নটেবলের দায়িত্বে ছিল সে।
বুঝলাম। কিন্তু একটা কথা এখনও বুঝতে পারছি না, পিটারের নাহয় স্বার্থ আছে, সে এ সব করেছে, কিন্তু বাকি লোকগুলো? তারা কেন করেছে?
পিটারের মতই রলিরও কাজ হারানোর ভয়। জাহিরেরও টাকার দরকার ছিল। বড় কিছু অভিনেতা আর গায়ক-বাদক ছাড়া সবাই টাকার কষ্টে ভোগে, কাজটাকে পেশা হিসেবে নিলে।
স্টেজ ম্যানেজারেরও নিশ্চয় চাকরি হারানোর ভয়? মুসার প্রশ্ন।
মাথা নাড়ল কিশোর, এই একটা ব্যাপারই বুঝতে পারছি না। স্টেজ ম্যানেজারের চাকরির অভাব হয় না। কাজ জানা লোকের খুব কদর। ওয়াইল্ড ওয়াইল্ডের মত জটিল একটা নাটকের কাজ যাকে-তাকে দিয়ে হবে না। তারমানে জাপা কাজ জানে।
হঠাৎ কপালে ভাঁজ পড়ল মুসার। বুঝলে, টার্নটেবল অ্যাক্সিডেন্টের ব্যাপারটাও কেমন যেন গোলমেলে। জাপা যদি জানেই পিটার নাচছে, তাহলে ওভাবে অ্যাক্সিডেন্টটা ঘটাত না। তাকে অচল করে দেয়ার তো ইচ্ছে ছিল না কারোরই।