নিচে তিরিশ গজ দূরে লাল একটা সাইন দেখা যাচ্ছে: ENTRANCE ONLY তার ওপাশে রাস্তা।
ধ্যাত্তোর! গেল চলে! হতাশায় ড্যাশবোর্ডে দুম করে কিল মারল মুসা।
কিন্তু গতি না কমিয়ে বেরোতে গিয়েই ভুলটা করল ড্রাইভার। যে পথ ধরে নামছিল, তার গোড়াটা ঢালু হয়ে গিয়ে হঠাৎ করেই সোজা হয়ে গেছে। সেটাতে সামনের চাকা পড়তেই সাংঘাতিক ঝাঁকুনি লাগল। বলের মত ড্রপ খেয়ে ওপরে উঠে গেল গাড়ি। ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দুপাশের দরজা। বাইরে ছিটকে পড়ল দুই আরোহী। গাড়িটা সরে চলে গেল।
ব্রেক কষল কিশোর। পড়ে থাকা দুটো দেহের দশ ফুট দূরে এসে থামল পিকআপ।
একধাক্কায় দরজা খুলে ফেলে লাফিয়ে নেমে দৌড় দিল কিলোর। অন্যপাশ দিয়ে নামল মুসা আর জিনা।
পিকআপের পেছনে ফোক্সওয়াগেন থামিয়ে রবিনও নেমে পড়ল।
নিথর হয়ে পড়ে আছে দুটো দেহ।
নিচু হয়ে টেনে একজনের মুখোশ খুলে ফেলল কিশোর।
টান লেগে ডান থেকে বায়ে কাত হয়ে গেল রলি ওয়ারনারের মুখটা।
অন্য লোকটার মুখোশ খুলল রবিন।
ভিনসি জাপা!
.
১৬.
আতঙ্কিত দৃষ্টিতে দেহ দুটোর দিকে তাকিয়ে আছে জিনা। মরে যায়নি তো?
ওদের নাড়ি দেখল কিশোর। না। তবে অবস্থা ভাল না। আঘাত ভালইলেগেছে।
তাহলে তো অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেয়া দরকার; মুসা বলল। বাড়িতে ঢোকার মুখেই একটা টেলিফোন আছে। সেটার দিকে দৌড় দিল সে।
আশ্চর্য! মাটিতে বসে পড়েছে জিনা। রলিকে আমি বরাবরই সন্দেহ করেছি, কিন্তু ম্যানেজারকে খুব ভাল মানুষ মনে হয়েছে!
আরও আশ্চর্য হওয়ার মত খবর আছে আমার কাছে, রবিন আর জিনা দুজনের দিকে তাকাল কিশোর। ওরা দুজনই শুধু নয়, এর মধ্যে আরও লোক জড়িত। মিউজিশিয়ানদের লকার খুঁজতে গিয়ে জাহিরের সম্পর্কে কি পেয়েছি দেখো, জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা খাম বের করে দিল সে।
ভেতর থেকে একটা হলদে ভাজ করা কাগজ বের কর কিশোর। তাতে নম্বর আর তথ্য ভরা। এগুলো কিউ এবং কিউ নম্বর। সে-রাতে আমি যেগুলো দেখলাম কম্পিউটারে, গোলমাল করা, সেগুলোও আছে এতে।
তারমানে জাহিরও আছে এর মধ্যে, জিনা বলল। কিন্তু কেন?
আবার ভাঁজ করে কাগজটা খামে ভরে নিজের পকেটে রেখে দিল কিশোর। প্রশ্নের জবাব জানতে চাইলে আরও গভীরে যেতে হবে আমাদের। পালের গোদাটাকে খুঁজে বের করতে হবে।
টেলিফোন সেরে ফিরে এসে মুসা জানাল, অ্যাম্বুলেন্স আসছে।
রবিন জিজ্ঞেস করল কিশোরকে, মনে হয় গোদাটা কে জানা আছে তোমার?
পিটারের ওপর বার বার আক্রমণ. এলে একটা লোক সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে, থামল কিশোর। এক এক করে তাকাল সবার মুখের দিকে। এ ভাবে শ্রোতাদের ঝুলিয়ে রেখে মজা পায় সে। চিরকালের অভ্যাস।
কে? জানতে চাইল মুসা।
খুলেই বলি, দাঁড়াও। গাড়ির রেডিওতে খবরটা শোনার পর ব্যাপারগুলো খাপে খাপে বসে গেল আমার মাথায়। পিটারের কথা শুনে মনে হতো, অ্যাক্সিডেন্ট ঘটায় খুশিই হয়েছে সে নইলে এমন করে টিকিটও বিক্রি হত না, তারও কাজ থাকত কিনা সন্দেহ।
ওসব তো জানি আমরা, অধৈর্য হয়ে জিনা বলল। পিটার ব্রডওয়েতে যাবে, আরও ওপরে উঠবে। খ্যাতির চূড়ান্তে চলে যাবে। তাতে আমাদের কি? আসল লোকটা কে বলো?
খ্যাতির লোভ বড় লোভ, সেই সঙ্গে যদি টাকা আসে তাহলে তো কথাই নেই। পিটার হাইয়েমের কাছে এর চেয়ে বেশি আর কি চাওয়ার আছে: যা যা করেছে সে, তাতে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। নিজের গুণগান প্রচার করার লোক নিজে ঠিক করেছে সে। ডেভন কলিনের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজেই নিজের বিজ্ঞাপন করেছে, নির্লজ্জের মত নিজের প্রশংসা করেছে। জোর করে টিকে থাকতে চেয়েছে নাটকটাতে…।
লোকটার মাথায় যে ছিট আছে, সে তো জানিই আমরা, মুসা বলল। নিজের সম্পর্কে বড় বেশি উঁচু ধারণা। কিন্তু এ সব বলে কি বোঝাতে চাইছ তুমি?
অ্যাক্সিডেন্টগুলো ঘটার আগে টিকিট বিক্রি হত না, মরেই যেত হয়তো শো টা। দর্শক না থাকলে কাকে দেখাবে? কিন্তু পরে, দুই হপ্তার মধ্যে সাংঘাতিক হিট হয়ে গেল, অথচ এখনও ওপেনিঙের ঘোষণাই দেয়া হয়নি। এই পরিবর্তনটা কেন ঘটল?
খবরের কাগজ আর টিভি-রেডিয়ো ঘটিয়েছে ঘটনাটা, জবাব দিল মুসা, এ তো জানা কথা। এমন প্রচার শুরু করল..
একদম ঠিক, এক আঙুল তুলল কিশোর। কাগজগুলো পেয়ে গেল মজা। যেই একটা দুর্ঘটনা ঘটে, অমনি ফলাও করে ছেপে দেয়। থিয়েটারে তাদের কোন রিপোর্টার ওই সময় না থাকলেও খবরটা ঠিকই পেয়ে যায়।
তারমানে, রবিন বলল, কেউ খবরটা পাঠিয়ে দেয় ওদের।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। এমন কেউ পাঠায়, যার কাছে বিজ্ঞাপন আর প্রচার একটা বিরাট ব্যাপার। সে জানে, এই একটা মাত্র জিনিসই তার চাকরি বাঁচাবে।
বুঝেছি! পিটার! বলে উঠল মুসা।
ভেবে দেখো, মুসার কথা যেন কানেই ঢোকেনি কিশোরের, তুমি একজন তরুণ অভিনেতা, একটা নাটক করছ যেটার সফল হওয়ার সম্ভবনা আছে। সারা জীবন একটাই স্বপ্ন তোমার, একটা নাটক হিট হোক। কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে দেখলে কোন কারণে টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। বন্ধ হয়ে যেতে পারে.নাটক। তাহলে কাজ চলে যাবে তোমার। আবার সেই ভাতেমরা অভিনেতায় পরিণত হবে, না খেয়ে থাকতে হবে। কি করবে তখন?
হাত ওল্টাল মুসা, কি আর করব? মোটর মেকানিকের কাজ নেব।
আরে দূর, তোমার কথা কে বলছে, একটা উদাহরণ দিচ্ছি, কিশোর বলল। তুমি তখন চাইবে নাটকটার উন্নতি, যে ভাবেই হোক। ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড দেখতে এখন কেন যাচ্ছে লোকে? নাটক দেখতে যতখানি, তার চেয়ে বেশি পিটারের দুরবস্থা দেখতে। আশা করছে একটা অক্সিডেন্ট ঘটবেই।