আবার চেষ্টা করল কিশোর। লাভ হলো না।
নেমে পড়ো গাড়ি থেকে! এক হাতে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে আরেক হাতে জিনার হাত চেপে ধরে টান মারল মুসা।
তিনজনেই নেমে দৌড় মারল সিঁড়ির দিকে।
উঠে পড়েছে স্পোর্টস কার। ওটার হেডলাইটের আলো ওদের ওপর পড়ে লম্বা লম্বা কিভুত ছায়া তৈরি করল-পা অস্বাভাবিক লম্বা, মাথা ছোট।
প্রাণপণে ছুটছে ওরা। আর বিশ ফুট যেতে পারলেই
আচমকা ডানে সরে গেল হেডলাইটের রশ্মি। চোখের পলকে সামনে চলে এল কালো রঙের চকচকে গাড়িটা, সামনে দেয়াল তৈরি করে দাঁড়িয়ে গেল। আটকে দিল সিঁড়িতে ঢোকার পথ।
দেখো, আমার কাছে পিস্তল আছে। গর্জে উঠল একটা ভোঁতা কণ্ঠ।
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল গাড়ির দুদিকের দরজা।
পিস্তলটা দেখতে পেল কিশোর। কোন রকম প্রতিবাদ না করে মাথার ওপর হাত তুলে দাঁড়াল।
দেখাদেখি মুসা আর জিনাও তাই করল।
গাড়ি থেকে নামল দুজন লোক। স্কি মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা। যে লোকটা ড্রাইভ করছিল, তার হাতে পিস্তল।
মুসা জিজ্ঞেস করল, কে আপনারা?
ইটের গাঁথনি তুলে দেয়াল তৈরি করে ঘিরে দেয়া হয়েছে ছাতের চারপাশ। একদিকের দেয়াল দেখিয়ে পিস্তল নেড়ে ধমক দিল ড্রাইভার। ওদিকে যাও?
পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল কিশোরের, ছাদ থেকে আমাদের লাফ দিতে বলবেন নাকি…
যাও বলছিকথা কম! আবার ধমক দিল ড্রাইভার। সঙ্গীকে বলল, হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখছ কি? পিকআপটার ব্যবস্থা করো।
আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কিশোর। তারপরেও বুদ্ধি ঠিকই কাজ করছে। বুঝতে পারছে, কণ্ঠস্বর আরেক রকম করে কথা বলছে লোকটা। যেন ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় করছে।
দ্বিধা করল অন্য লোকটা। তারপর স্পোর্টস কারের দরজা দিয়ে মাথা ঢোকাল। বের করে আনল দুই বোতল মদ। পিকআপের দিকে এগোল।
কি-ব্ধি করতে চান? তোতলাতে শুরু করল কিশোর, ও-ওটা আমার চাচার গাড়ি!
শব্দ করে হাসল পিস্তলধারী। তাতে কি? মরে গেলে চাচাটাচা কিছু থাকবে না। এগারোটার নিউজে কি বলবে এখনই শুনতে পাচ্ছি আমি: তিনটে ছেলেমেয়ে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গাড়ি চালিয়ে মলের ছাদে উঠে পড়েছিল। ছাদের কিনারের দেয়ালে গুতো লাগিয়ে দেয়াল ভেঙে নিচে পড়েছে। তিনজনই মৃত। হাহ হা!
আমরা মাতাল…অসম্ভব…
কথা শেষ করতে পারল না কিশোর। তরল পদার্থ পড়ার শব্দ হলো। ফিরে তাকিয়ে দেখল পিকআপের সীটে মদ ঢালছে লোকটা। ও-কি করছেন? মদ ঢেলে দিচ্ছেন কেন?
এই থামো, সহকারীকে বাধা দিল পিস্তলধারী, সব ঢেলো না। খানিকটা রেখে দাও। ওদের গেলাতে হবে। রক্তে অ্যালকহল লেভেল বেশি দেখতে না পেলে সন্দেহ করে বসবে পুলিশ।
একটা বোতল পুরো ঢেলে শেষ করল অন্য লোকটা। বাকি বোতলটা নিয়ে এগোল ওদের দিকে।
শয়তান কোথাকার… মুঠো পাকাল মুসা। কি করতে চায় লোকগুলো বুঝে ফেলেছে।
থামো, মুসা, বাধা দিল কিশোর, কিছু কোরো না!
পিস্তলটা মুসার মুখের দিকে তাক করে ধরেছে ড্রাইভার। ঠিক। তোমার বন্ধু যা বলছে, করো!
চুপ হয়ে গেল মুসা।
যা বলছি করো, আবার বলল পিস্তলধারী, তাতে ব্যথা কম পাবে। হয়তো টেরই পাবে না কিছু। বোতলের মুখ খুলে দেয়ার জন্যে ইশারা করল সঙ্গীকে। মুসাকে খেতে বলল প্রথমে।
বিড়বিড় করছে জিনা। প্রার্থনাই করছে বোধহয়।
মুসার ঠোঁটের কাছে বোতলের মুখ ঠেকাল লোকটা 1 দাতে দাঁত চেপে রেখেছে মুসা! তাকিয়ে আছে পিস্তলটার দিকে। কি করবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আস্তে করে ঠোঁট ফাঁক করল।
হঠাৎ ইঞ্জিনের শব্দ হলো। পাই করে সেদিকে ঘুরল পিস্তলধারী। কে এল। আবার…
সুযোগটা ছাড়ল না জিনা। মাথা নিচু করে ছুটে গেল লোকটার দিকে। কঁধ দিয়ে ধাক্কা মারল পেটে, বেল্টের সামান্য ওপরে। একই সঙ্গে থাবা চালাল পিস্তল ধরা হাতে।
বিস্ময় এবং ব্যথায় ছোট্ট একটা আর্তচিৎকার বেরোল লোকটার গলা থেকে। হাত থেকে উড়ে গেল পিস্তল।
অ্যাসফন্টের ওপর খটাং করে পড়ল ওটা। পড়ার আগেই ধরার জন্যে ডাইভ দিয়েছে মুসা। ধরে রাখতে পারল না। হাতের ঠেলা লেগে দূরে গিয়ে পড়ল পিস্তলটা। আনার জন্যে এগোতে যাবে, এই সময় চিৎকার করে বলল কিশোর, মুসা, লাগবে না।
ফিরে তাকিয়ে মুসা দেখল, তাড়াহুড়ো করে গিয়ে গাড়িতে উঠছে লোকগুলো। দরজা টেনে ধরে রেখেছে কিশোর আর জিনা, যাতে বন্ধ করতে না পারে। মুসাকেও ডাকল কিশোর।
স্টার্ট দিয়ে সরে যেতে লাগল স্পোর্টস কার।
র্যাম্পের মুখ দিয়ে বেরোল আরেকটা গাড়ি। একটা লাল পুরানো ফোক্সওয়াগেন।
রবিন! অবাক হয়ে গেল কিশোর।
প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনি রবিন। যেই বুঝল, নাক ঘুরিয়ে তেড়ে গেল স্পোর্টস কারটাকে।
পিকআপে উঠে পড়ল কিশোর, মুসা আর জিনা। এইবার ইগনিশনে মোচড় দিতেই স্টার্ট হয়ে গেল ইঞ্জিন। সোজা র্যাম্পের মুখের দিকে গাড়ি ছোটাল কিশোর।
নাকে আসছে অ্যালকহলের কড়া গন্ধ। এই ভয়াবহ উত্তেজনার মধ্যেও দেখতে পাচ্ছে মেরিচাচীর বিস্মিত মুখ। বাড়িতে কেউ মদ খায় না। একটু আধটু অভ্যাস যা। ছিল রাশেদ চাচার, সেটাও ছাড়িয়েছেন চাচী। কিশোর খেয়েছে, এটা যদি মাথায় ঢোকে তার বাকিটা আর ভাবতে চাইল না কিশোর!!
র্যাম্পের মুখে বাধা সৃষ্টি করা গেল না, তার আগেই ঢুকে পড়ল স্পোর্টস কার। তীব্র বেগে নেমে যেতে লাগল। পেছনে লেগে রইল পিকআপ আর ফোক্সওয়াগেন।