.
তবে যত ভয়ই পাক, স্টেজে উঠে অন্য মানুষ হয়ে গেল মুসা। তার মধ্যে যে এতটা ট্যালেন্ট আছে, জানত না। উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল দর্শকরা।
পিঠ চাপড়ে দিয়ে জাপা বললেন, চমৎকার। চেষ্টা করলে ভাল অভিনেতা হতে পারবে তুমি।
রাতে বাড়ি ফেরার পথে হেসে বলল জিনা, স্টার তাহলে বনেই গেলে?
কে যায় স্টার বনতে! আমি খেলোয়াড় হতে চাই। স্টেজে নাচানাচি করতে ভাল লাগে না।
চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে কিশোর।
রেডিওটা নাড়াচাড়া শুরু করল জিনা। নব ঘুরিয়ে স্টেশন টিউন করতে লাগল। একটা স্টেশনে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক হচ্ছে…আরেকটাতে বেসবল খেলা…তারপরেরটাতে খবর।
দূর, কোনটাই ভাল না, বিরক্ত হয়ে বলল জিনা। রবিনের কাছ থেকে ভাল কয়েকটা টেপ চেয়ে নিয়ে রেখে দেয়া উচিত গাড়িতে।
রেখে লাভ নেই। মনে করিয়ে দিল কিশোর, গাড়িটা আমার নয়, চাচার। খবরটা দাও তো। গলাটা চেনা মনে হলো!
ঠিকই বলেছে কিশোর। এ তো পিটারের গলা! টেপ করা ইন্টারভিউ হচ্ছে।
গারবার থিয়েটারে বার বার তার ওপর আঘাত আসার কথাই বলছে পিটার ফুলিয়ে-ফাপিয়ে।
সাক্ষাৎকার যে নিচ্ছে সে-ও কম যায় না। বলল, কয়েক দিনেই আপনার যা জনপ্রিয়তা লক্ষ করছি, আর্ট টিলারিকেও তো ছাড়িয়ে যাবেন আপনি। ব্রডওয়েতে তো যাবেনই, সেটা ছাড়িয়েও আরও বহুদূর।
বুঝতে পারছি না কি হবে! দীর্ঘশ্বাস ফেলল পিটার। উইলিয়াম শেকসপীয়ারের ভূত এখন আমার পিছু ছাড়লেই হয়!
হঠাৎ ব্রেক কষল কিশোর।
গতি কমে যাওয়ায় ঝটকা দিয়ে সামনে ঝুঁকে গেল জিনা আর মুসা।
কি হলো? চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
বুঝে গেছি। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল কিশোর।
কি বুঝেছ?
জবাব দেয়ার আগেই পেছনে টায়ারের শব্দ হলো। আরেকটা গাড়ি ব্রেক করেছে।
ফিরে তাকাল ওরা। একটা স্পোর্টস কার।
মুসা বলল, কিছুক্ষণ থেকেই আয়নায় দেখছি গাড়িটাকে! শিওর আমাদের পিছু নিয়েছে!
.
১৫.
অ্যাক্সিলারেটর চেপে ধরল আবার কিশোর। পরের মোড়টায় যেন উড়ে চলে এল পিকআপ।
পেছন পেছন ঠিকই আসতে লাগল গাড়িটা।
স্টিয়ারিং বাঁয়ে কাটল কিশোর। মাটি থেকে লাফ দিয়ে উঠে গেল পিকাপের ডান পাশটা। চিৎকার করে উঠল জিনা।
কোথায় যাচ্ছ? চেঁচিয়ে জানতে চাইল মুসা।
জানি না।
একটা ছোট গর্তে পড়ল চাকা। ঝট করে মাথার ওপরে হাত তুলল মুসা, দেরি করে ফেলেছে। ছাতে ঠোকর খেল চাদি। উফ করে উঠল ব্যথায়। বলল, ভাঙা গাড়িতে চড়ার এই হলো শাস্তি।
গুলির শব্দ হলো পেছনে।
মাথা নামাও! বলে জিনার মাথাটা ড্যাশবোর্ডের নিচে চেপে দিয়ে নিজেও মাথা নুইয়ে ফেলল মুসা।
কিশোরের সে-সুযোগ নেই। কারণ গাড়ি চালাতে হচ্ছে ওকে।
আবার পাশে কাটল সে। নাহ, আর পারবে বলে মনে হয় না। কারণ ও চালাচ্ছে ঝরঝরে পিকআপ, পেছনের গাড়িটা স্পোর্টস কার। গতি বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে ক্ৰমে। বাঁয়ের রকটা মনে হচ্ছে মাইলের পর মাইল লম্বা। পথের পাশে গাছের সারি। ডানেও একই অবস্থা, কেবল মাঝে মাঝে বিশাল বিল্ডিঙগুলোতে ঢোকার জন্যে যেটুকু খোলা। একটা বাড়িকে শপিং মল করা হয়েছে। গেটের কাছে নিওন আলোয় লেখা PARK শব্দটার আলো নেভানো।
পালানোর আর কোন পথ না দেখে তীক্ষ্ণ মোড় নিয়ে সেই গেটের দিকে এগোল কিশোর। হলুদ রঙের একটা CLOSED সাইন, যেন ছুটে আসতে লাগল ওদের দিকে।
কিশোর, কি করছ? চিৎকার করে উঠল জিনা। বলেই দু-হাতে মুখ ঢাকল।
তীব্র ঝাঁকুনি, গেটের কাঠ ভাঙার মড়মড় শব্দ। পার্কিং গ্যারেজে ঢুকে পড়ল কিশোর। র্যাম্পে উঠতে শুরু করেছে পিকআপ। মাথাটাকে সীটের পেছনে চেপে ধরেছে সে।
চারতলায় একটা বইয়ের দোকান আছে, এরই মধ্যে কোনমতে বলল কিশোর।
তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! মুসা বলল।
ড্যাশবোর্ড আঁকড়ে ধরে আস্তে মাথা উঁচু করে জানালা দিয়ে তাকাল জিনা। ওপরে উঠতে চাও তো? ফাঁদে পড়ব।
দেখা যাক, কিশোর বলল। ঘুরে ঘুরে উঠতে শুরু করল পিকআপ।
বাড়িটা ছয়তলা। ছয়টা তলাই পার হয়ে র্যাম্প থেকে প্রায় লাফ দিয়ে অ্যাসফল্টের ছাদে বেরিয়ে এল গাড়ি। সাদা দাগ দিয়ে ঘর একে চিহ্ন দেয়া রয়েছে। একেকটা ঘরে একটা করে গাড়ি থাকবে। কিন্তু এখন কোন গাড়ি নেই। ওদের বয়ে দেয়াল, তাতে এলিভেটর, কাঁচের ছোট দরজা। ওটার পাশে সিঁড়ি।
পিকআপের ইঞ্জিনের গর্জন ছাড়া আর কোন শব্দ কানে আসছে না কিশোরের। ওরা কি একা? রিয়ারভিউ মিররে তাকাল। র্যাম্পের মুখ, যেখান দিয়ে বেরিয়ে এসেছে ওরা, সেটাকে লাগছে কালো একটা গর্তের মত। পঞ্চাশ ফুট পেছনে।
মনে হয় হারিয়ে দিয়েছি, বলল সে।
তাহলে আর কি? ঝাঁপ দাও ওপর থেকে। রাস্তায় নেমে পড়ি, তিক্ত কতে বলল মুসা। যাওয়ার আর তো কোন উপায় দেখছি না।
ছাদের চারটে কোণের দিকে তাকাল কিশোর।
স্পোর্টস কারটার কোন সাড়া না পেয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার নামার জন্যে র্যাম্পের দিকে রওনা দিল।
এই সময় নিচ থেকে আলোকিত হতে শুরু করল কালো গর্তটা।
ওরাই আসছে! জিনা বলল।
ব্রেক কষল কিশোর। অ্যাসফল্টের গায়ে ঘষা খেয়ে আর্তনাদ করে উঠল রবারের চাকা।
থামলে কেন? চেঁচিয়ে উঠল মুসা, জোরে চালাও না! সরিয়ে দিতে পারবে ধাক্কা দিয়ে!
কিন্তু কাশি দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল পিকআপের ইঞ্জিন।
ইগনিশনে মোচড় দিল কিশোর।
স্টার্ট হলো না ইঞ্জিন।
দুটো হেডলাইটের আলো বেরিয়ে আসতে লাগল র্যাম্পের গর্ত থেকে।